পরিত্যক্ত: ভাসমান বাজারের খারাপ হয়ে যাওয়া নৌকাগুলি পড়ে রয়েছে পাশের রাস্তার ধারে। সোমবার, পাটুলিতে। ছবি: সুমন বল্লভ
বর্ষা শুরু হতেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে মশার দাপট। সেই সঙ্গে ডেঙ্গির আতঙ্কও। এর মধ্যেই নতুন বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে পাটুলির ভাসমান বাজার। আমপানের তাণ্ডবে ওই বাজারের বহু নৌকাই জলে ডুবে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে বাজারই বন্ধ হয়ে যায়। নষ্ট হয়ে যাওয়া নৌকাগুলি তুলে এনে রাখা হয়েছে রাস্তার ধারে। মেরামত করে তবে আবার নামানো হবে জলে। কিন্তু এর মধ্যেই বৃষ্টির জল জমে সেই সব নৌকাই হয়ে উঠেছে মশার আঁতুড়ঘর। পুর কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, নৌকায় জল জমলেই সেখানে লার্ভা মারার তেল দেওয়া হচ্ছে।
কেএমডিএ-র তৈরি ওই ভাসমান বাজারের বেশ কয়েকটি নৌকা অনেক দিন আগেই খারাপ হয়ে জলে ডুবে গিয়েছিল। সেগুলির কয়েকটি তুলে এনে রাস্তার উপরে রেখে মেরামতি শুরু হয়েছিল। গত মার্চ মাসের শেষ দিকে লকডাউন শুরু হওয়ায় সেই কাজ আটকে যায়। সম্প্রতি আমপানের ধাক্কায় প্রায় ৪০টি নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেগুলি ক্রেন দিয়ে তুলে বাজার সংলগ্ন রাস্তার উপরেই রাখা হয়েছে। ভাসমান বাজারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দোকানিরাও আপাতত রাস্তার ধারেই পসরা নিয়ে বসছেন।
কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই বাজারে নৌকা নিয়ে সমস্যা নতুন নয়। লকডাউনের সময়ে নৌকার উপরের অনেক স্টল বন্ধ হয়ে গেলেও কিছু খোলা ছিল। আমপানের পরে এখন গোটা বাজারই বন্ধ। নৌকাগুলি সারিয়ে বাজার ফের চালু করতে আরও কয়েক মাস লেগে যাবে। আর এই কয়েক মাসে সেই সব নৌকাই ডেঙ্গিবাহী মশার প্রজননক্ষেত্র হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকার বাসিন্দারা।
কেএমডিএ-র হিসেব অনুযায়ী, ভাসমান ওই বাজারে মোট নৌকা ছিল ১১৪টি। আমপান-সহ বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়া নৌকার সংখ্যা এখন প্রায় ১০০। আধিকারিকেরা জানান, বিকল্প কোনও জায়গা না মেলায় নৌকাগুলি রাস্তায় রেখেই সারানো হবে। বর্ষা এসে পড়ায় নৌকাগুলিতে জল জমতে শুরু করেছে। ফলে সেখানে জন্মাতে পারে মশা। বিষয়টি তাই কলকাতা পুরসভার গোচরে আনা হয়েছে বলে কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের দাবি।
এলাকার বাসিন্দাদের অবশ্য অভিযোগ, বৃষ্টির জল নৌকায় জমেই থাকছে। পরিষ্কার করতে বলা হলেও তা করা হচ্ছে না। ওই এলাকায় যে মশা বাড়ছে, সে কথাও জানিয়েছেন তাঁরা।
পুরসভার ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “আপাতত জল যাতে না জমে থাকে, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া, নিয়ম করে পুরসভা থেকে মশার লার্ভা মারার তেলও স্প্রে করা হচ্ছে। নৌকা মেরামতির কাজ দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে কেএমডিএ-কে। ওঁরা আশ্বাস দিয়েছেন, অগস্টের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।’’
ওই এলাকাটি পুরসভার ১১ নম্বর বরোর অন্তর্ভুক্ত। বরো কর্তৃপক্ষ জানান, স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টি তাঁদের জানিয়েছেন। মশা মারার তেল দেওয়ার কাজ চলছে। পুর স্বাস্থ্য দফতরকেও সবটা জানানো হয়েছে। ভাসমান বাজারের জলাশয়ের জল যাতে পরিষ্কার থাকে, তার জন্য কেএমডিএ ইতিমধ্যেই একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।