অমর্ত্যের বক্তব্য নিয়ে শহরে ফ্লেক্স

টালিগঞ্জ থেকে শুরু করে হাজরা মোড়, প্রায় গোটা দেশপ্রাণ শাসমল রোডের দু’ধারেই দেখা যাচ্ছে মাঝারি মাপের নীল রঙের ওই ফ্লেক্স। তাতে অমর্ত্য সেনের ছবি এবং ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে তাঁর কিছু বক্তব্য লেখা রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৯ ০২:৩০
Share:

অমর্ত্য সেনের বক্তব্য-সহ ফ্লেক্স। বৃহস্পতিবার, এম আর বাঙুর হাসপাতালের কাছে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ও রামনবমী নিয়ে অমর্ত্য সেনের মতামত সংবলিত ফ্রেক্স ছড়িয়ে পড়েছে শহরে। কে বা কারা ওই ফ্লেক্স লাগিয়েছেন, তা অবশ্য জানা যাচ্ছে না।

Advertisement

টালিগঞ্জ থেকে শুরু করে হাজরা মোড়, প্রায় গোটা দেশপ্রাণ শাসমল রোডের দু’ধারেই দেখা যাচ্ছে মাঝারি মাপের নীল রঙের ওই ফ্লেক্স। তাতে অমর্ত্য সেনের ছবি এবং ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে তাঁর কিছু বক্তব্য লেখা রয়েছে। চার-পাঁচ লাইনের ওই বক্তব্যের শেষে অমর্ত্যের নাম। নীচে শুধু লেখা, ‘নাগরিকদের পক্ষ থেকে প্রচারিত।’

ঠিক একই ভাবে মাস কয়েক আগে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে শহর জুড়ে ‘ছিঃ’ লেখা পোস্টার পড়েছিল। ওই পোস্টার কারা লাগিয়েছে, তা কোথাও লেখা ছিল না। প্রশ্ন উঠেছে, ‘নাগরিকদের পক্ষ থেকে’ লেখার আড়ালে কোনও রাজনৈতিক দলই কি এই পোস্টার বা ফ্লেক্স শহরে ছড়াচ্ছে?

Advertisement

গত কয়েক মাস ধরেই রাজ্য জুড়ে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের সংঘাত চরমে উঠেছে। বিজেপি ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিলেই তার পাল্টা হিসেবে তৃণমূল ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিচ্ছে। এমনকি, মুখ্যমন্ত্রীর সামনে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এই পরিস্থিতিতে গত ৫ জুলাই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে অমর্ত্য সেন ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে নিজের বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি জানান, ইদানীং মানুষকে প্রহার করার জন্য এই স্লোগান ব্যবহার করা হচ্ছে। এই স্লোগানের সঙ্গে বাংলার সংস্কৃতির যোগাযোগ আছে বলে তাঁর মনে হয় না। এমনকি, বাংলার সংস্কৃতিতে রামনবমীর থেকে মা দুর্গা বেশি পরিচিত বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।

রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, অমর্ত্যবাবুর এই বক্তব্য ‘জয় শ্রীরাম’ বিতর্কে তৃণমূলকে অক্সিজেন জুগিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি এই ফ্লেক্স তৃণমূলই লাগিয়েছে?

তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের একাংশের দাবি, ওই ফ্লেক্স কে বা কারা লাগিয়েছেন, সে সম্পর্কে তাঁদের কোনও ধারণা নেই। রাসবিহারী কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তথা বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই ফ্লেক্স কারা লাগিয়েছেন, সে ব্যাপারে আমার কোনও ধারণা নেই। নাগরিক সমাজের নামে শহরের বুদ্ধিজীবীরা এই ফ্লেক্স লাগিয়ে থাকতে পারেন।’’ তবে শোভনদেব এটাও জানান, অমর্ত্যবাবুর মতামতের সঙ্গে তিনি পুরোপুরি একমত নন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের এখানে দুর্গাপুজো হয়তো বেশি হয়। রামের পুজো কম হয়। কিন্তু রাম আমাদের দেবতা নন, এটা আমি কখনওই মনে করি না। তবে যাঁরা ‘জয় শ্রীরাম’ বলছেন, তাঁদের উচিত রামের চরিত্রটা আগে ভাল ভাবে জানা।’’

বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ অবশ্য মনে করেন, নাগরিক সমাজের নামে তৃণমূলই এই ফ্লেক্স টাঙিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের নিজস্বতা বলে কিছু নেই। সিপিএমকে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল। সেটা পারেনি। এখন অমর্ত্য সেন নামে এক কমিউনিস্টকে ধরে বাঁচার চেষ্টা করছে। অমর্ত্যের সামাজিক কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। যেটুকু ছিল, এই সমস্ত বক্তৃতা দিয়ে তা শেষ করে ফেলেছেন। এই ডুবন্ত জাহাজকে ধরে ‘নাগরিক মমতা’ও ডুবছেন। নাগরিক সমাজের নামে ভেক ধরেছে তৃণমূল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement