প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে তাঁদের সংখ্যা মাত্র পাঁচ। কিন্তু করোনা-যুদ্ধে গবেষণার কাজে সাহায্য করা ওই পাঁচ জন এখনও জানেন না, বুস্টার ডোজ় মিলবে কবে!
অতিমারির চতুর্থ ঢেউয়ে চিকিৎসকেরা বার বার জোর দিচ্ছেন বুস্টার ডোজ নেওয়ার উপরে। কিন্তু রাজ্যে করোনার প্রতিষেধক ‘স্পুটনিক লাইট’-এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগে অংশ নেওয়া ওই পাঁচ স্বেচ্ছাসেবক জানেন না, কী ভাবে সতর্কতামূলক (বুস্টার) ডোজ় পাবেন। বিষয়টি নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন ওই প্রতিষেধকের ট্রায়াল হওয়া শহরের বেসরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষও। কারও কাছেই কোনও সদুত্তর নেই। বিষয়টি নিয়ে তাদেরও কিছু করার নেই বলে জানাচ্ছে স্বাস্থ্য ভবন। এক আধিকারিকের কথায়, “বুস্টার ডোজ় না পেলে সমস্যা তো বটেই। কিন্তু সরকারি স্তরে স্পুটনিক লাইট ব্যবহার হয়নি। ফলে সেটির বুস্টার ডোজ় বা শংসাপত্র নিয়ে আমাদের সরাসরি কিছু করার নেই।”
বুস্টার ডোজ়ের সময়সীমা ন’মাস থেকে কমিয়ে ছ’মাস করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কিন্তু তাঁদের কী হবে? সেই প্রশ্নই তুলছেন রাজ্যে ওই প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে অংশ নেওয়া বেলেঘাটার বাসিন্দা, ষাটোর্ধ্ব নরেশচন্দ্র পাল। তিনি বলেন, “বয়স্কদের বুস্টার ডোজ় নেওয়ার উপরে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাকে দেবে কে? শংসাপত্র পর্যন্ত সরকারের থেকে পাইনি। তা হলে কি দেশের স্বার্থে গবেষণায় অংশ নিয়ে ভুল করেছিলাম?”
রাশিয়ার তৈরি সিঙ্গল ডোজ় ওই প্রতিষেধকের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের জন্য মহারাষ্ট্র, দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে ১০টি জায়গা বাছাই করা হয়েছিল। মোট ১৮০ জনের উপরে ওই প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হয়েছিল। অন্যান্য প্রতিষেধকের ক্ষেত্রে যেমন স্বেচ্ছাসেবকদের একটি অংশকে প্লাসিবো বা ‘স্যালাইন ওয়াটার’ দেওয়া হয়, এই সিঙ্গল ডোজ় প্রতিষেধকের ক্ষেত্রে তা হয়নি। সকলকেই আসল ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যে রুবি জেনারেল হাসপাতালে ওই প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক গবেষণায় পাঁচ জন স্বেচ্ছাসেবক অংশ নিয়েছিলেন। গত বছরের অক্টোবরের প্রথম দিকে তাঁদের ওই প্রতিষেধক দেওয়া হয়।
রাজ্যে ওই গবেষণার ফেসিলিটেটর স্নেহেন্দু কোনারের কথায়, “বুস্টারের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সময়সীমা পেরিয়ে ১০ মাস হতে চলল স্পুটনিক লাইট পাওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের। ট্রায়ালের স্পনসর সংস্থার কর্তাদের ইমেল করে সমস্যাটি জানিয়েছি। যাতে তাঁরা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নজরে বিষয়টি নিয়ে আসেন। কিন্তু সদুত্তর মেলেনি।” স্নেহেন্দুর দাবি, অন্য ডবল ডোজ়ের ভ্যাকসিনের থেকে এই সিঙ্গল ডোজ় প্রতিষেধকের কার্যকারিতা বেশি বলে গবেষণায় জানা গিয়েছে। এ বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ‘ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া’ (ডিসিজিআই) স্পুটনিক লাইট সিঙ্গল ডোজ় ভ্যাকসিন ব্যবহারে ছাড়পত্র দিয়েছে।
হরিয়ানার ইএসআইসি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রিন্সিপ্যাল ইনভেস্টিগেটর, চিকিৎসক অনিলকুমার পাণ্ডের কথায়, “ট্রায়ালের স্বেচ্ছাসেবকদের বুস্টারের জন্য এখনও অনুমোদন আসেনি। তবে সাধারণের জন্য ওই প্রতিষেধক দেওয়া শুরু থেকে হিসাব করলে আগামী অগস্ট মাসে বুস্টারের সময় হচ্ছে। একটু অপেক্ষা করে দেখতে হবে। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবকদের সরকারি শংসাপত্র পাওয়াটা অত্যন্ত জরুরি।”
রুবি হাসপাতালের প্রিন্সিপ্যাল ইনভেস্টিগেটর, চিকিৎসক রিমিতা দে বলেন, “শংসাপত্র ও বুস্টার ডোজ়ের বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবকেরা জিজ্ঞাসা করলেও কিছু বলতে পারছি না। চতুর্থ ঢেউয়ে যেখানে সকলকে বুস্টার ডোজ় নিতে বলা হচ্ছে, সেখানে ওঁরা অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটাচ্ছেন। সেটা ঠিক নয়।”