Sonagachi

Sonagachi: সোনাগাছিতে এ বার থিমের পুজো, নবমীতে সহভোজে মিলবেন কলকাতার আট হাজার যৌনকর্মী

অষ্টমীর রাতভর খিচুড়ি রান্না হবে সোনাগাছিতে। সঙ্গে পাঁচমিশেলি চচ্চড়ি, চাটনি আর পায়েস। নবমীর সকাল থেকে শুরু আসল উৎসবের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২১ ১৮:৫৪
Share:

১০১ টাকায় প্রতিমা দিয়েছে চোরবাগান সর্বজনীন। ছবি: ফেসবুক

ফি বছর আটচালায় দুর্গা আসেন লাল রঙের কলকাতায়। সোনাগাছির প্রতিমায় তেমন বিশেষত্ব থাকে না। কিন্তু এ বার পুজো অন্যরকম। সোনাগাছিতে এসেছে থিমের প্রতিমা। আর সেই সঙ্গে এশিয়ার বৃহত্তম যৌনপল্লি যে সমাজ তাদের ‘পতিতা’ ভাবে তাদের প্রতি অভিমানে এক সহভোজের কর্মসূচি নিয়েছে। অষ্টমীর রাতভর খিচুড়ি রান্না হবে সোনাগাছিতে। সঙ্গে পাঁচমিশেলি চচ্চড়ি, চাটনি আর পায়েস। নবমীর সকাল থেকে কলকাতার নানা প্রান্তের যৌনপল্লিতে পৌঁছে যাবে সেই খাবার। আর নবমীর দুপুরে শহরের সব যৌনকর্মী খাবেন এক খাবার।

Advertisement

কেন এমন কর্মসূচি? এই পুজোর আয়োজক দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির মুখপাত্র মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আসলে আমরা যতই সচেতন হই না কেন এখনও যৌনকর্মীদের ‘পতিতা’ হিসেবেই দেখে সমাজের বড় অংশ। তাই মুখে যতই সকলের উৎসব বলা হোক এই পেশায় যুক্তদের উৎসবের সঙ্গে যোগ থাকে না বললেই চলে। এই সময় সবাই ভোগ পেতে ভালবাসে। কারা দেবে, কী দেবে, তার পরোয়া না করার জন্যই আমরা এই কর্মসূচি নিই। কলকাতায় থাকা যৌনকর্মীদের সকলের কাছেই ভোগ পৌঁছে দেওয়া হবে।’’ দুর্বার সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও রান্নার ঠাকুর আসবেন না। যৌনকর্মীরাই রান্নার জোগাড় করবেন। এটা চলবে অষ্টমীর রাত থেকে। নিজেরাই রাঁধবেন। আর নবমীর সকাল থেকে বড় বড় ডেকচি ভরে খিচুড়ি গাড়িতে করে যাবে পাড়ায় পাড়ায়। ডাব্বু হাতায় করে দেওয়া হবে গরম খিচুড়ি। আগে থেকেই সবাইকে পাত্র নিয়ে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। তাঁদের ‘পতিতা’ মনে করা নিয়ে অভিমানে দুর্গাপুজোয় শাস্ত্র মতে প্রয়োজনীয় বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকা আর দেওয়া হবে না বলে শপথ নিয়েছে সোনাগাছি। যৌনকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, পুজোর ভোগ নিয়েও স্বাবলম্বী হতে চান ওঁরা।

এ বার সোনাগাছির পুজোয় প্রতিমার জন্য বিশেষ খরচ হয়নি। কলকাতার চোরবাগান সর্বজনীনের পক্ষ থেকে মাত্র ১০১ টাকায় দেওয়া হয়েছে মূর্তি। আর যৌনকর্মীরা সেই মূর্তি নিয়ে পুজোর থিম ঠিক করেছেন, ‘আমাদের লড়াই সকলের উৎসব, নবম বর্ষে দুর্বারের দুর্গোৎসব’।

Advertisement

সোনাগাছির বাসিন্দাদের কাছে দুর্গাপুজো সত্যিই লড়াইয়ের। ২০১৩ সালে প্রথমবার পুজো হয়। কিন্তু নতুন পুজোর অনুমতি নিয়ে সমস্যা হয়। শেষ পর্যন্ত হাই কোর্টের নির্দেশে পুজো করা সম্ভব হয়। পরের বছরও একই রকম সমস্যা তৈরি হয়। সে বার একেবারে শেষ মুহূর্তে ঘরের ভিতরে পুজোর অনুমতি মেলে। ২০১৫ সালেও পুজোয় বাধা আসায় প্রতিবাদে উৎসবে অংশ নেয়নি সোনাগাছি। পরের বছর ফের পুজোর উদ্যোগী হলেও প্রশাসনিক বাধা আসে। শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালে পাওয়া আদালতের নির্দেশে সোনাগাছিতে দুর্বারের অফিসবাড়ির সামনে ডালপট্টির মোড়ে পুজো হচ্ছে।

চতুর্থীতে উদ্বোধন হয়েছে পুজোর। ছবি: ফেসবুক

মহাশ্বেতা জানালেন, শুধু কলকাতাতেই নয়, এখন দুর্বারের উদ্যোগে বিষ্ণুপুর, দুর্গাপুর আসানসোল, বসিরহাটের যৌনপল্লিতেও দুর্গাপুজো হয়। কিন্তু কলকাতার অন্য পল্লিতে পুজো হয় না। তবে সোনাগাছির পুজো অনেক বড়। রামবাগান, শেঠবাগান, রবীন্দ্রসরণি, অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট, পলাতক ক্লাব এলাকায় যত যৌনকর্মী রয়েছেন তাঁরা সরাসরি এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত। আর সেখান থেকেই ‘ভোগ’ যাবে বৌবাজারের হাড়কাটা গলি, প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিট, কালীঘাটের লকার মাঠ, টালিগঞ্জের ইউকে মণ্ডল লেনে। আর রাজারহাট, উল্টোডাঙা, জানবাজার এলাকায় যে সব যৌনকর্মী ঘুরে ঘুরে কাজ করেন তাঁরা সোনাগাছিতেই আসবেন প্রসাদ নিতে। মহাশ্বেতা জানান, এখন রাজ্যে প্রায় ৬৫ হাজার যৌনকর্মী রয়েছেন। তবে সোনাগাছি অনেকটাই ফাঁকা। করোনাকালে অন্যত্র চলে গিয়েছেন অনেকেই। তবে সব মিলিয়ে কলকাতায় এখন আট হাজার কর্মী রয়েছেন।

সোনাগাছিতে পুজো মানে অন্য উৎসবও। চতুর্থীতেই উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে। ছোটেদের বসে আঁকো থেকে বড়দের শঙ্খ বাজানো, হাঁড়ি ভাঙা, মোমবাতি জ্বালানো-সহ নানা প্রতিযোগিতা আছে রোজই। দুর্বার ব্যান্ডের অনুষ্ঠানের সঙ্গে আছে জাদু প্রদর্শনীও। তবে আসল কর্মসূচি একটাই— যৌনপল্লির বিচারে বড় বোন সোনাগাছি রান্না করে খাবার পাঠাবে হাড়কাটা, কালীঘাট, টালিগঞ্জের ছোট-মেজ-সেজ বোনেদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement