ফিরহাদ হাকিম
জলবায়ু পরিবর্তন এখন গোটা বিশ্বেরই উদ্বেগের কারণ। শহর কলকাতা তার বাইরে নয়। মহানগরীর বাতাসে শ্বাস নেওয়া যে কতটা বিপজ্জনক, তা রাষ্ট্রপুঞ্জের সাম্প্রতিক রিপোর্টেই প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় একেবারে উপরের দিকেই রয়েছে কলকাতার নাম। এই পরিস্থিতিতে শহরে বায়ুদূষণের বিপজ্জনক মাত্রা কমাতে রাজ্য সরকারের তো বটেই, কলকাতা পুরসভারও বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, পুরসভায় ইতিমধ্যেই একটি সৌর ও জলবায়ু কমিটি গড়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই কাজ করছে ওই কমিটি। পাশাপাশিই, ২০৩০ সালের মধ্যে বাণিজ্যিক যানবাহনগুলিকে অ-ফসিল (জৈব জ্বালানি নয়) শক্তির মাধ্যমে চালানোর পরিকল্পনার কথাও জানালেন ফিরহাদ।
গত ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে প্রেস ক্লাবে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘এনভায়রনমেন্ট গভর্নড ইন্টিগ্রেটেড অর্গানাইজেশন’ (ইএনজিআইও)। ওই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ, রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খান, বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনার (কলকাতা) অন্দালিব ইলিয়াস, শহরের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র-সহ পরিবেশ আন্দোলনের বেশ কয়েক জন কর্মী ও বিজ্ঞানী। সেখানে ফিরহাদ বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে একটি সৌর ও জলবায়ু কমিটি তৈরি করা হয়েছে। ওই কমিটিতে জাতীয় স্তরের বিশেষজ্ঞদেরও নিয়ে আসা হচ্ছে, যাতে শহরের জন্য জলবায়ু সংক্রান্ত একটি সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা যায়।’’
যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়ার পাশাপাশি কলকাতার বায়ু যে আসলে পথের ধুলো এবং বিভিন্ন নির্মাণস্থলের ধুলোর কারণেও বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে, সাম্প্রতিক বিভিন্ন রিপোর্টেই তা স্পষ্ট। ফিরহাদ জানান, দূষণ কমাতে ইতিমধ্যেই পরিবেশবান্ধব যানবাহন রাস্তায় নামানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। তা নজরে রেখেই বৈদ্যুতিন যানবাহনের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি-সহ অন্যান্য কর ছাড়ের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।। সেই সঙ্গে শহর জুড়ে ছোট ছোট বনাঞ্চল তৈরিরও উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘বাতাসে বিষাক্ত কার্বনকণা কমিয়ে আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি সুন্দর বিশ্ব উপহার দিতে চাই। তাই আমি শহরের সমস্ত নাগরিককে এই যুদ্ধে সামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’’ জাভেদও বলেন, ‘‘রাজ্যে অন্তত ১৩টি ঝুঁকিপূর্ণ শহর রয়েছে। এবং শুধু মাত্র ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা নয়, বায়ুদূষণের কারণে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বজ্রপাতের হারও। এই পরিস্থিতিতে আমাদের প্রত্যেকের সচেতন হওয়া দরকার।”
দেবাশিস বলেন, ‘‘কলকাতায় এমন একটি সোলার পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে যা দেশে সম্ভবত এই প্রথম। যা আদতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় তাপবিদ্যুতের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমিয়ে দিতে পারে। কিন্তু তহবিল-সঙ্কটের কারণে সম্পূর্ণ প্রকল্পটি আংশিক ভাবে স্থগিত হয়ে রয়েছে।’’