কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ফাইল চিত্র।
২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষের জন্য ১৪৬ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট পেশ করলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বিগত দু’টি অর্থবর্ষের (২০২২-’২৩ এবং ২০২১-’২২) পুর বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৭৭ কোটি এবং ১৬১ কোটি টাকা। শুক্রবার বাজেট পেশ করে মেয়র বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ যোগ করলে দাঁড়াবে ২০২৫ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় বাড়লেও ষষ্ঠ বেতন কমিশনে পুরকর্মীদের বেতন দিতে বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা খরচ হওয়ায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, কোভিডের সময়ে আর্থিক মন্দার কারণে পুর ভাঁড়ারের যে সঙ্গিন অবস্থা হয়েছিল, এখনও তা থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। এই পরিস্থিতিতে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে শুধুমাত্র অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় খরচের উপরে জোর দিয়েছেন ফিরহাদ।
রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে সম্পত্তিকর বাবদ আয় বাড়লেও অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে যে আশানুরূপ আদায় হয়নি, সে কথাও মেনে নিয়েছেন মেয়র। বিশেষত, বিজ্ঞাপন দফতরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘শহরের বিভিন্ন এলাকা বেআইনি হোর্ডিংয়ে ছেয়ে গিয়েছে। এই জিনিস আর চলবে না। পুর কমিশনারের নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। দৃশ্যদূষণ কমিয়ে কী ভাবে বিজ্ঞাপন বাবদ আদায় বাড়ানো যায়, সে দিকে নজর দেবে ওই কমিটি। আগামী অর্থবর্ষে বিজ্ঞাপন বাবদ ২০ বা ৩০ কোটি নয়, ৫০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে।’’
ফিরহাদ জানান, অতিমারি পরিস্থিতির কারণে শেষ দু’বছরে রাস্তার হোর্ডিং, বাতিস্তম্ভ, কিয়স্ক, বাসছাউনি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত দরপত্র ডাকা সম্ভব হয়নি। যার ফলে বিজ্ঞাপন বিভাগের রাজস্ব আদায় যথেষ্ট মার খেয়েছে। পুর অর্থ বিভাগের আধিকারিকেরা মনে করছেন, বাজেটে ঘাটতি দিনে দিনে বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ আয়ের চেয়ে ব্যয়ের বহর বেশি হওয়া। এই প্রসঙ্গে মেয়র অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর পক্ষে আবারও সওয়াল করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন বরোর উন্নয়ন বাবদ কোটাভিত্তিক টাকা বরাদ্দ বন্ধ করা হচ্ছে। এ বার থেকে যখন যে এলাকার উন্নয়নে টাকা প্রয়োজন হবে, সেই মতো অর্থ বরাদ্দ করা হবে।
তবে বিরোধীদের অভিযোগ, জনমোহিনী প্রকল্পের জন্য খরচের বৃদ্ধির উল্লেখ নেই এ বারের বাজেটে। বাম পুরপ্রতিনিধি মধুছন্দা দেব বলেন, ‘‘পুর প্রশাসনের নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। এক খাতে বরাদ্দ টাকা খরচ করা হচ্ছে অন্য খাতে। ফলে বছরের পর বছর ঘাটতি বাড়ছে।’’ বিজেপির পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষ এই বাজেটকে অর্থহীন বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দিশা দেখাতে পুর কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ। পুরকর্মীদের বেতন বা অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন মেটাতেই তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন।’’
জনপরিষেবা প্রসঙ্গে মেয়র জানান, শহরে গভীর নলকূপের ব্যবহার কমিয়ে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের জন্য ছোট ছোট বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরি করা হবে। জোর দেওয়া হবে সবুজায়নে। একই সঙ্গে বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় পুর স্কুলগুলিকে ধীরে ধীরে মডেল স্কুলে পরিণত করার কথাও জানান মেয়র।