ফাইল চিত্র।
রবীন্দ্র সরোবরে বাচ্চাদের আপাতত রোয়িং বা বাইচ প্রতিযোগিতার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ (ববি) হাকিম। শনিবার লেকে বাইচ করতে গিয়ে ডুবে মৃত স্কুলছাত্র পূষন সাধুখাঁর গরফার বাড়িতে গিয়ে সোমবার তিনি জানান, স্কুলের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বাইচ বন্ধ রাখা হল। বড়দের বাইচও আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে। কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে রোয়িং ক্লাব, কেএমডিএ-সহ রবীন্দ্র সরোবরের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা হিসেবে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, সেই বৈঠকেই তা স্থির হবে।
উদ্ধারকারী নৌকা-সহ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না-থাকলে এর পরেও বাইচের অনুমতি মিলবে না। পর্যাপ্ত বন্দোবস্তের পরে বড়দের বাইচের অনুমতি দেওয়া যায় কি না, সেটা বিবেচনা করা হবে। তখন যে ক্লাব প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করবে, তাদের আগেভাগে বিষয়টি জানাতে হবে।
ঝড়বৃষ্টির মধ্যে লেকে বাইচ অনুশীলনের সময় দুই ছাত্রের মৃত্যুর ৫০-৫৫ ঘণ্টা পরেও দুর্ঘটনার কারণ অবশ্য স্পষ্ট হয়নি। নিরাপত্তার ‘ফাঁক’ নিয়ে, পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সমানে। কার গাফিলতিতে দুর্ঘটনা, উঠছে সেই প্রশ্নও। এমন দুর্ঘটনায় বোট আঁকড়ে বিপদ এড়ানোর ‘সহজ পাঠ’ ছাত্রদের দেওয়া হয়েছিল কি না, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে।
এই অবস্থায় নিরাপত্তার মান উন্নয়নে আজ, মঙ্গলবার নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসছে রবীন্দ্র সরোবরের তিনটি ক্লাব। নিরাপত্তার ফাঁকফোকর বন্ধ করার জন্য কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি তিনটি ক্লাব। নিরাপত্তার ফাঁকফোকর বন্ধ করার জন্য কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা কেএমডিএ-র কাছে কী কী প্রস্তাব পাঠানো যেতে পারে, বৈঠকে সেই বিষয়ে আলোচনা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সরোবরে যাতে অন্তত একটি স্পিডবোট রাখা যায়, সেই প্রস্তাবও দেওয়া হবে কেএমডিএ-কে।
শনিবার বিকেলে রবীন্দ্র সরোবরে বাইচ অনুশীলনে নেমে দুর্ঘটনায় জলে তলিয়ে পূষনের সঙ্গেই মারা যায় সৌরদীপ চট্টোপাধ্যায় নামে অন্য এক ছাত্র। গাফিলতি কার, সেই প্রশ্নের মধ্যেই দায় ঠেলাঠেলি চলছে কেএমডিএ এবং লেক ক্লাব কর্তৃপক্ষের মধ্যে। গাফিলতি যে ছিল, সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞেরা একপ্রকার নিশ্চিত। এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তার ফাঁক কী ভাবে বন্ধ করা যায়, ক্লাব-কর্তৃপক্ষ সেই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন।
ক্লাব-কর্তৃপক্ষের একাংশের বক্তব্য, সরোবরে একটি স্পিডবোট থাকলে হয়তো প্রাণহানি এড়ানো যেত। কিন্তু পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কেএমডিএ-র চিঠির প্রেক্ষিতে গত ১৮ মে থেকে সরোবরে পেট্রল বা ডিজেলচালিত বোট চালানো বন্ধ। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যাতে এই ধরনের বোট রাখার অনুমতি মেলে, তা নিয়ে আজকের বৈঠকে আলোচনা হবে। লেক ক্লাবের জয়েন্ট অনারারি সেক্রেটারি দেবব্রত দত্ত বলেন, ‘‘ক্লাবগুলিকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনার পরে স্পিডবোট নিয়ে কেএমডিএ-কে অনুরোধ করে চিঠি পাঠাব।’’ এই ধরনের দুর্ঘটনার সময় কী কী করণীয়, লেকে বাইচ প্রশিক্ষণ বা অনুশীলনে আসা ছেলেমেয়েদের সেই পাঠ দেওয়ার ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে আজকের বৈঠকে। পরিকাঠামো উন্নয়নে আর কী কী ব্যবস্থা প্রয়োজন এবং ডিজেল বোট নামানোর অনুমতি না-মিললে কী করা যেতে পারে, সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হতে পারে।
কেএমডিএ-র এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘অন্য জলাশয়ের সঙ্গে রবীন্দ্র সরোবরের তুলনা করলে হবে না। এটি সংরক্ষিত লেকের মধ্যে একটি। তাই এই লেকের ক্ষেত্রে যা যা নিয়ম আছে, তা পালন করতেই হবে। বাইচ অনুশীলন বা প্রতিযোগিতা করতে হবে নিয়ম মেনেই।’’ ডিজেল বোট রাখার প্রসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, একাধিক বিকল্প ব্যবস্থা আছে এবং ক্লাব-কর্তৃপক্ষ চাইলে আপৎকালীন পরিস্থিতি সামলানোর জন্য সেগুলির ব্যবস্থা করতেই পারেন। ক্লাবগুলি সেগুলির ব্যবস্থা রাখছে না কেন?
এ দিন বিকেলে সৌরদীপের বাড়ি গিয়ে তার পরিবারকে সমবেদনা জানান ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা পূষনের বাড়ি গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন।