বিদ্যুৎ যাতে গ্রাহকদের ঠিকঠাক পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই জন্য সিইএসসি-র সরবরাহকেন্দ্রে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল। আর তখনই তা থেকে আগুন ধরে বিপর্যয়, যার ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহই বন্ধ রাখতে হল ঘণ্টা তিনেক। এর জেরে আবার বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম বাতিহীন হয়ে যায় এবং কার্যত আঁধারে ডুবে যায় দু’টি সরকারি হাসপাতাল ও রবীন্দ্র সদনের একটি অনুষ্ঠান। এখানেই শেষ নয়।
বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়ে সব কিছু যখন মনে হচ্ছে স্বাভাবিক হল, তখনই একটি ট্রান্সফর্মারের কেবল ফেটে আগুনের ফুলকি। বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে লাগে আরও ঘণ্টা খানেক।
বুধবার সকালে প্রিন্সেপ স্ট্রিটে সিইএসসি-র সরবরাহকেন্দ্রে আগুন লাগার জেরে এই ভাবেই বিদ্যুৎহীন হয়ে ভোগান্তিতে পড়ল মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশ।
এ দিন প্রিন্সেপ স্ট্রিটে সিইএসসি-র সরবরাহকেন্দ্রের বেসমেন্টের ঘরে কেবল কাটা এবং অয়্যারিংয়ের কাজ চলছিল। সকাল ৯টা নাগাদ হঠাৎই কর্মীরা দেখেন, চারদিক ধোঁয়ায় ছেয়ে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই ঘর থেকে বেরিয়ে যান তাঁরা। ততক্ষণে গোটা তল্লাট ধোঁয়ায় ছেয়ে গিয়েছে। হইচই পড়ে যায়। তৎক্ষণাৎ ওই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। দমকলের দশটি ইঞ্জিন ঘণ্টা দেড়েকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে কেউ হতাহত হননি।
প্রাথমিক ভাবে দমকলের কর্তৃপক্ষের অনুমান, বেসমেন্টের অয়্যারিংয়ের শর্ট সার্কিট থেকেই এই বিপত্তি।
আগুন নিভলে কিছুক্ষণ দেখে নিয়ে ১২টা নাগাদ ফের বিদ্যুৎ সরবারহ চালু করা হয়। কিন্তু তখন আবার একটি ট্রান্সফর্মারের কেবল ফেটে গিয়ে আগুনের ফুলকি দেখা যায়। তখন সেই ট্রান্সফর্মারকে বন্ধ করে বাকি ট্রান্সফর্মার চালু রেখে বিদ্যুৎ সরবারহ স্বাভাবিক রাখা হয়। সিইএসসি-র দাবি, এক ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ সরবারাহ স্বাভাবিক হয়।
প্রিন্সেপ স্ট্রিটের ওই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশকে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কবলে পড়তে হয়। প্রভাব পড়ে মেট্রো পরিষেবাতেও। সেন্ট্রাল, মহাত্মী গাঁধী রোড, কালীঘাট ও নেতাজি ভবন মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। তবে স্মার্টগেট এবং ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল বলে মেট্রো-র দাবি।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও এন আর এস হাসপাতাল কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। ব্যস্ত সময়ে এই ধরনের অগ্নিকাণ্ড হওয়ায় গণেশচন্দ্র অ্যভিনিউ ও চিত্তরঞ্জন অ্যভিনিউয়ে যানজট হয়। অফিসযাত্রীরা হয়রানির শিকার হন। ঘটনাস্থলের আশপাশের দোকানও বন্ধ রাখা হয়। এ দিন রবীন্দ্র সদনে নার্সদের একটি অনুষ্ঠান ছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় এই অনুষ্ঠান মোমবাতি জ্বেলে করতে হয়েছে।
সিইএসসি কর্তৃপক্ষ জানান, আগুন লাগার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়, না হলে অগ্নিকাণ্ড ব্যাপক আকার নিতে পারত। তবে, গুরুত্বপুর্ণ এলাকায় খুব দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে বলে সিইএসসি কর্তৃপক্ষের দাবি। যেখানে আগুন লেগেছে, সেখানে কোনও সুইচ ছিল না। বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও কেবল খোলার কাজ চলছিল। তা-ও কীভাবে আগুন লাগলো সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সত্যরঞ্জন মিশ্র নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের রাস্তায় একটি মন্দিরে আমি পুজো করছিলাম। হঠাৎ দেখলাম চারদিক ধোঁয়ায় ছেয়ে গিয়েছে।’’মকলের অভিযোগ, আগুন নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। তবে ওই বিদ্যুৎ সরবরাহকেন্দ্রের এক আধিকারিকের দাবি, ওই অভিযোগ ঠিক নয়, ট্রান্সফর্মার ও বেসমেন্ট— দু’জায়গাতেই আগুন নেভানোর জন্য আলাদা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা করা রয়েছে।
কিছু দিন আগে দমদম সেন্ট্রাল জেল বাসস্টপের কাছে যশোহর রোডের ধারে সিইএসসি-র একটি সাবস্টেশনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ওই দিন দমকল ছাড়াও কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বিশেষ আধুনিক গাড়ি নিয়ে এসে ফোম ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।