বর্ষবরণের রাতে দাপাল শব্দবাজি। —ফাইল চিত্র।
দীপাবলির রাত কি না, বোঝা দায়! ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা ছুঁতেই শুরু হল নতুন বছরের উদ্যাপন। সঙ্গে শব্দবাজির তাণ্ডব। কোথাও কোথাও তা দীপাবলিকেও হার মানাল। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, শহর থেকে শহরতলি— প্রায় সর্বত্রই শব্দবাজির দাপট! রাত বাড়তেই পাল্লা দিয়ে বাড়ল শব্দদূষণের মাত্রা। তফাৎ রইল না হাসপাতাল চত্বরের সঙ্গে শিল্পাঞ্চলের। সৌজন্য, বর্ষবরণের রাত।
বছরভর দূষণের দাপটে অতিষ্ঠ ছিল কলকাতা। এত দিন শব্দের ‘অশ্লীল’ তাণ্ডবের জন্য কালীপুজো, দীপাবলিই বরাদ্দ ছিল। গত তিন-চার বছরে সে ধারা বদলেছে। দূষণের গণ্ডি ভাঙার তালিকায় বর্ষবরণের রাতও জুড়েছে। রবিবার মহানগরীর কপালে জুটল সেই শব্দ দূষণই। সন্ধ্যার পর থেকেই শহর ও শহরতলির অলিগলিতে বাজতে শুরু করেছিল পেল্লায় মাপের সাউন্ড বক্স, চলতি কথায় ‘ডি জে বক্স’। সেই শব্দের দাপটে অতিষ্ঠ হয়েছেন মানুষজন। শব্দবাজি যেমন ফেটেছে, তেমনই ফেটেছে আতসবাজি।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রবিবার রাত ১২টা নাগাদ নিউ মার্কেট চত্বরে শব্দের পারদ চড়েছিল ৭৬.৪ ডেসিবেলে। ওই সময় ওই এলাকায় যা থাকার কথা ৬৫ ডেসিবেলের নীচে! কসবা শিল্পাঞ্চলে রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সেখানে শব্দদূষণের মাত্রা থাকা উচিত ৭০ ডেসিবেল। রবিবার রাত ১২টা নাগাদ সেখানে দূষণ পৌঁছেছিল ৮৭.৫ ডেসিবেলে। বাগবাজারের মতো নাগরিক বসত এলাকাতেও শব্দদূষণ ভয়াবহ আকার নিয়েছিল। ৪৫ ডেসিবেলের পরিবর্তে দূষণের মাত্রা পৌঁছেছিল ৭০.৩ ডেসিবেলে। বিরাটিতেও দূষণ ছুঁয়েছে ৮৩.৭ ডেসিবেলে। পাটুলিতেও ৬৫.৭ ডেসিবেল।
শহরের হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকাগুলি বরাবরই ‘সাইলেন্স জ়োন’। রাতে সেখানে শব্দের মাত্রা ৪০ ডেসিবেলের বেশি হওয়ার কথাই নয়। রবিবার রাতে সেখানেও ছন্দপতন। এসএসকেএস হাসপাতালের কাছে রাত ১২টায় শব্দদূষণ ছিল ৫০.৯ ডেসিবেল। আরজি কর এলাকায় তা ৬০.৮ ডেসিবেলে পৌঁছে গিয়েছিল।
শুধুই কী শব্দ, দূষিত হয়েছে বায়ুও। অনেকে বলছেন, কালীপুজো, দীপাবলি, ছটপুজো-সহ প্রতিটি উৎসবের মরসুমে শব্দ-বায়ুদূষণের লেখচিত্র যে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল, সে বৃত্ত সম্পূর্ণ হল রবিবার রাতে, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে গিয়ে। পরিবেশবিদেরা জানান, শীতের রাতে এমনিতেই দূষণ বাড়ে। তার উপরে আতসবাজির ধোঁয়ায় তা আরও বেড়েছে। এক পরিবেশকর্মী বলছেন, ‘‘শব্দ ও বিপজ্জনক বায়ুদূষণ দিয়েই নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে কলকাতা।’’ আতসবাজি না হয় নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু ডি জে এবং শব্দবাজি তো নিষিদ্ধ। তা হলে সেগুলি এত উপদ্রব চালাল কী ভাবে?