সব হারিয়ে: আগুনের গ্রাসে গিয়েছে ঘর-গেরস্থালি। ভেঙে পড়েছেন আটঘরা পূর্ব পাড়া বস্তির এক বাসিন্দা। মঙ্গলবার। ছবি: সুমন বল্লভ
মাথার উপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় আমপান বয়ে যাওয়ার পরেও কোনও ভাবে টিকে গিয়েছিল টিন, বাঁশের তৈরি ছোট ছোট ঘরগুলি। লকডাউনে রোজগার হারিয়েও তাই এ পর্যন্ত ঠাঁইহারা হতে হয়নি গরিব মানুষগুলিকে। কিন্তু মঙ্গলবার আগুনের গ্রাসে ছাই হয়ে গেল তাঁদের একচিলতে আস্তানাও।
বিধাননগর পুর এলাকার আটঘরার পূর্ব পাড়ার একটি বস্তিতে এ দিন সকালে আগুন লাগে। পুড়ে যায় ৬৭টি ঘর। দুর্ঘটনার পরে বাসিন্দাদের অনেককেই কাঁদতে কাঁদতে বলতে শোনা যায়, ‘‘এ বার কোথায় যাব? লকডাউনে কাজ গিয়েছে। আগুনে ঘরটুকুও চলে গেল। এ বার পথে বসতে হবে।’’ দমকলের ছ’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বস্তিরই কোনও ঘরে আগুন লাগে। বাসিন্দাদের অনুমান, মিটার ঘরে শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছিল। বাসিন্দারা জানান, তিনশোর বেশি মানুষের বসবাস ওই বস্তিতে।
আরও পড়ুন: তলানিতে আয়, বেতন দিতে ঘাম ছুটছে পুরসভার
বস্তিবাসীরা জানান, প্রতিটি ঘরে দাহ্য বস্তু থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়া আটকানো যায়নি। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চার দিক। আগুনের শিখা অনেকটা উঠতে দেখা যায়। ঘটনার পরে স্থানীয়েরাই বস্তির লোকজনকে উদ্ধারে নেমে পড়েন। নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মহিলা ও শিশুদের। স্থানীয়েরাই জল দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। পরে দমকলের ছ’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ গাজি জানান, ৩২টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছে। বাকি ঘরগুলিও বেশ ভাল রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিধাননগর পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে ওই বস্তি। এ দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সঙ্গে ছিলেন বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী, ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়-সহ পুরকর্তাদের অনেকে। ফিরহাদ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য যা যা প্রয়োজন, সবই করা হবে। বিধাননগর পুরসভা সেই কাজ করবে। দ্রুত বাসিন্দাদের পূর্বের অবস্থায় ফেরানোর ব্যবস্থাও করা হবে।’’
ওই ঘটনার পরে দুর্গতদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজও শুরু হয়। দমকল ও পুলিশের পাশাপাশি এলাকার স্থানীয় মানুষকেও ধন্যবাদ জানান পুর কর্তৃপক্ষ। বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানান, আজ, বুধবার থেকে বস্তিতে আবর্জনা ও ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ শুরু হবে। সেই সঙ্গে বস্তিবাসীদের ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে জানানো হবে। স্থানীয় কাউন্সিলর আজিজুল হোসেন মণ্ডল জানান, ওই এলাকার কাছেই একটি জমিতে ঘরহারা মানুষের থাকার অস্থায়ী জায়গা করা হয়েছে। তাঁদের জন্য পানীয় জল ও দু’বেলা খাবারের বন্দোবস্ত করছে পুরসভা।