আগুন আয়ত্তে আনতে ফোম ব্যবহার করছেন দমকলকর্মীরা। সোমবার, মেটকাফ স্ট্রিটে। ছবি: সুমন বল্লভ
সপ্তাহের প্রথম দিন। সকালে সদ্য খোলা হয়েছে গুদাম। মাল সরবরাহের প্রবল তাড়া। এমন সময় আগুনের শিখা দেখা গেল। ধোঁয়ায় ঢেকে গেল একতলা। আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করলেন ভিতরে থাকা লোকজন। জিনিসপত্র ফেলেই হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে এলেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জন তত ক্ষণে পুড়ে গিয়েছেন। স্থানীয়দের সাহায্যে ওই গুদামের কর্মীরা জখমদের নিয়ে ছোটেন হাসপাতালে। খবর পেয়ে পৌঁছয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর, পুলিশ ও দমকল। প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় দাহ্য পদার্থ বোঝাই দোতলা ওই গুদামের আগুন আয়ত্তে আনেন তাঁরা।
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৯টা ২০ মিনিট নাগাদ বউবাজার থানা এলাকার মেটকাফ স্ট্রিটের একটি গুদামে আগুন লাগে। জখম হন রামেশ্বর মোহারিক, অলোক কুমার, গণেন্দ্র লিঙ্কা এবং মানবেন্দ্র মণ্ডল। স্থানীয় বাসিন্দা মানবেন্দ্রকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও গুদামের শ্রমিক রামেশ্বর, অলোক এবং গণেন্দ্র কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। রামেশ্বর এবং অলোকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আরও দু’জন জখম ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই শ্রমিকেরা গুদামেই থাকেন। গুদামের কর্মী মনোজ সুতার পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। অলোক এবং গণেন্দ্র ভিতর থেকে স্পিরিট এবং তার্পিন তেলের ড্রাম বাইরে বের করছিলেন। রামেশ্বর ভিতরে ছিলেন। আচমকাই আগুনের শিখা দেখতে পান তিনি।
বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের কাছে স্পিরিট এবং তার্পিন তেল বোঝাই ওই গুদামের আগুন নিমেষে একতলা ছাড়িয়ে দোতলায় ছড়িয়ে পড়ে। গুদামে থাকা কর্মীদের পাশাপাশি আতঙ্কে আশপাশের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন বাসিন্দারা। আগুনে ৭০ মেটকাফ স্ট্রিটের ওই গুদামের পাশাপাশি তার উপরতলায় থাকা একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট অফিসও এ দিন পুড়ে গিয়েছে।
দমকলের প্রাথমিক অনুমান, বিড়ি-সিগারেটের টুকরো থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে। সঠিক কারণ নির্ধারণের জন্য আজ, মঙ্গলবার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করবেন। তবে ওই গুদামের মালিকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। গুদামে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা ছিল না বলে পুলিশ এবং দমকলের তরফে দাবি করা হয়েছে। দমকলের একাংশের দাবি, ওই গুদাম থেকে বেরোনোর রাস্তা সরু। সেই পথেও দাহ্য মালপত্র রাখা ছিল।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, গুদামে রাখা তার্পিন তেল, স্পিরিট ও গালা আগুনের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ভয়াবহ আকার নেয়। দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন প্রথমে আগুন নেভাতে জল ব্যবহার করে। কিন্তু কাজ না হওয়ায় ফোম ব্যবহার করা হয়। তার পরেই আগুন আয়ত্তে আসে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দু’টি গ্যাস সিলিন্ডার-সহ একাধিক জিনিস বাজেয়াপ্ত করেছে।