লড়াই: আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকলকর্মীরা। শনিবার সকালে, স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোডে। ছবি: সুমন বল্লভ
আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেল হাওড়া সেতু লাগোয়া স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোডের একটি লোহার গুদামের বড় অংশ। ক্ষতিগ্রস্ত হলেন কয়েক হাজার ব্যবসায়ী। ভিন্ রাজ্য থেকে জিনিসপত্র আনিয়ে ওই গুদামেই মজুত করতেন তাঁরা। এই ঘটনার জেরে রোজগার হারালেন শ’দুয়েক দিনমজুর মোটবাহকও। তবে আগুনে হতাহতের কোনও খবর নেই। ঘটনাস্থলের পাশেই চক্ররেলের লাইন থাকায় এ দিন সকাল আটটা পর্যন্ত ওই ট্রেন পরিষেবা বন্ধ রাখতে হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। একই কারণে স্ট্র্যান্ড রোডেও কিছু ক্ষণের জন্য যান চলাচল ব্যাহত হয়।
পুলিশ ও দমকল জানিয়েছে, শুক্রবার রাত তিনটে নাগাদ কলকাতা বন্দরের মালিকানাধীন ওই গুদামের দোতলায় আগুন লাগে। বন্দরের কাছ থেকে গুদামটি লিজ নিয়ে চালাচ্ছিল একটি বেসরকারি পরিবহণ সংস্থা। সেখানে রং, রাসায়নিক, জামাকাপড়, ওষুধ, কেব্ল-সহ নানা জিনিস প্রচুর পরিমাণে মজুত ছিল। গুদামের দোতলায় আগুন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গুদামের বাইরে থাকা মোটবাহকেরা নর্থ পোর্ট থানার টহলদার পুলিশকর্মীদের আগুন লাগার খবর দেন। পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে দমকলের বড় কর্তারা চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও পোদ্দার কোর্টের দমকল কেন্দ্র থেকে মিনিট কুড়ির মধ্যেই ২০টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পাঠান। বেলা ১২টার পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে
এলেও দমকলের কর্মীরা পরে জানান, তাপ কমিয়ে গুদাম ঠান্ডা করতে আরও সময় লাগবে।
দমকলের এক পদস্থ কর্তা জানান, আগুনের তীব্রতায় গুদামের উত্তর-পশ্চিম দিকের ছাদের বেশ কয়েক হাজার ফুট অংশ ধসে পড়ে। লোহার স্তম্ভ ও বিম দিয়ে গুদামটি তৈরি। তার ছাদও মোটা লোহার চাদরে মোড়া। ছাদে পিচের চট বিছানো থাকায় তাপে তা গলে যায় ও ছাদের বড় একটি
অংশ ধসে যায়।
দমকলের এক কর্তা জানান, গুদামের ভিতরে আগুন নেভানোর যথাযথ ব্যবস্থা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে ঘটনাস্থলে অগ্নি-নির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা তাঁদের চোখে পড়েনি। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, চক্ররেল লাগোয়া ঝুপড়ি থেকেই আগুন ছড়িয়েছিল। তবে আগুনের উৎসস্থল খুঁজে পেতে ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হবে। ওই গুদামে রাসায়নিক-সহ বেশ কিছু দাহ্য পদার্থ ছিল। সেই কারণে আগুন নেভাতে প্রচুর পরিমাণ ফোম ব্যবহার করতে হয়েছে। সেই কারণেই আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। পুলিশ জানায়, আগুনের তাপ না কমলে ফরেন্সিক দল এসে কাজ করতে পারবে না।
কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আগুন লেগেছিল গুদামের ‘এ’ শেডে। চক্ররেল লাগোয়া ঝুপড়ি থেকেই যে আগুন লেগেছিল, বন্দর কর্তৃপক্ষও তা জানিয়েছেন। তবে তাঁরা জানান, গুদামে রাসায়নিক মজুত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। দোতলা ওই গুদামের একতলায় আন্দামানের পূর্ত দফতর ও একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক সংস্থার কার্যালয়। সেখানে আগুন ছড়িয়ে পড়েনি। বন্দর কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, গুদাম যাঁরা লিজ নিয়েছিলেন, তাঁদের সকলকেই অগ্নি-নির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখার জন্য একাধিক বার নোটিস পাঠানো হয়েছে।
আগুন নেভানোর কাজে দমকলকর্মীদের সাহায্য করতে গিয়েছিল কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। হাজির ছিল রাজ্যের সিভিল ডিফেন্সও।
দমকলের এক অফিসার জানান, গুদামটি গঙ্গার ধারে হওয়ায় নদী থেকে পর্যাপ্ত জল নেওয়া গিয়েছে। জগন্নাথ ঘাটে তিনটি বড় পাম্প বসিয়ে জল নেওয়া হয়। ঘাট থেকে ‘রিলে’ ব্যবস্থায় গুদামের ছাদ পর্যন্ত হোসপাইপ নিয়ে গিয়ে একটানা জল ঢেলে যান কর্মীরা। ওই অফিসার জানান, আগুনের লেলিহান শিখা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে এলেও গুদামের দোতলা থেকে কালো ধোঁয়া বেরোতে থাকে অবিরাম।
এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা তাঁদের কর্মীদের নিয়ে গুদামের দোতলায় পৌঁছে অক্ষত মালপত্র বার করতে ব্যস্ত। গুদাম সংলগ্ন পাঁচ-ছ’টি ঝুপড়িও তত ক্ষণে পুড়ে ছাই। আগুন নেভাতে দমকলকর্মীরা যে জল ঢালছেন, সেই জলে টইটম্বুর একতলার একাংশ।
জোড়াসাঁকো এলাকার বাসিন্দা, কাপড়ের ব্যবসায়ী গোপাল আগরওয়াল বলেন, ‘‘আমার মতো কয়েক হাজার ব্যবসায়ী মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন! গুজরাত থেকে সবে মাল এসেছে। ভেবেছিলাম, দু’-এক দিনের মধ্যে সেগুলি বার করে নিয়ে যাব। সব শেষ হয়ে গেল!’’
রাজেশ মেহতা নামে কলাকার স্ট্রিটের এক ব্যবসায়ী এ দিন বলেন, ‘‘বেলার দিকে এসে কিছু মাল দোকানে নিয়ে যাব বলে ঠিক করেছিলাম। কত মাল পুড়েছে, কতটা ঠিক রয়েছে, বুঝতেই পারছি না।’’
এ দিন ভোরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ও দমকলের ডিজি জগমোহন। আগুনের জন্য যাতে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি না-হয়, তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয় কলকাতা পুলিশের হেভি রেডিয়ো ফ্লাইং ও রেডিয়ো ফ্লাইং স্কোয়াড এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।