বিপদ: বৃষ্টির জমা জল ও ঘাসে ভর্তি নির্মীয়মাণ পুজো মণ্ডপের আশপাশ। সোমবার, ম্যাডক্স স্কোয়ারে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
কোথাও মণ্ডপের আশপাশে খোলা মাঠে জল জমে রয়েছে। কোথাও আবার জল জমেছে মণ্ডপে প্রতিমা রাখার জায়গার সামনে, পাটাতনের তলায়। একই অবস্থা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা বাঁশ বা অন্যান্য জিনিসের তৈরি কাঠামোতেও। বিপদ বুঝে তাই কোনও কোনও জায়গায় মণ্ডপ শিল্পীদের পাশাপাশি সাফাইকর্মীরা চত্বর পরিষ্কারের কাজও করছেন।
মণ্ডপের খোলা বাঁশের মাথা থেকে শুরু করে আশপাশের জমা জল দুর্গাপুজোর মরসুমে ডেঙ্গি ছড়ানোর অন্যতম উৎস বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। পুজো শুরুর আগে বাঁশের মাথার খোলা জায়গায় যাতে কোনও ভাবে ডেঙ্গির মশা জন্মাতে না পারে, সে দিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।শহর এবং শহরতলির ডেঙ্গি-চিত্র ভয়াবহ রূপ নিতেই মণ্ডপ চত্বরে জল জমা আটকাতে নির্দেশিকা দিয়েছে একাধিক পুরসভা। যদিও সেই নির্দেশ মেনে সচেতনতার দেখা মিলল না। বরং কলকাতা, সল্টলেক, দমদমের একাধিক মণ্ডপ চত্বরে দেখা গেল, জমা জলের পাশাপাশি ঝোপঝাড়ের ভয়াবহ ছবি। ম্যাডক্স স্কোয়ার, দেশপ্রিয় পার্ক, কুমোরটুলি পার্ক সর্বজনীন থেকে শুরু করে সিংহী পার্ক— একাধিক জায়গায় দেখা গিয়েছে বিধি ভাঙারই চিত্র। পুজোর উদ্যোক্তাদের এ নিয়ে প্রশ্ন করায় কেউ উত্তর দিলেন, ‘‘বলা হয়েছে, দু’-এক দিনে হয়ে যাবে।’’ কেউ আবার বললেন, ‘‘পুরসভার কর্মীরা তো রোজ আসছেন।’’ যদিও মণ্ডপ চত্বর পরিষ্কার করে জীবাণুনাশক ছড়ানোর কাজ করতে দেখা গিয়েছে গুটিকয়েক পুজো কমিটিকে।
সল্টলেক এবং দমদমের ডেঙ্গি পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিলেও একাধিক মণ্ডপ চত্বরে অপরিচ্ছন্নতার ছবিটা বদলায়নি। জানা গিয়েছে, বিধাননগর পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা এ বছর ১৭০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে এক জনের। ডেঙ্গি মোকাবিলায় আজ, মঙ্গলবার আধিকারিকদের নিয়ে বিধাননগর পুর কর্তৃপক্ষের আলোচনায় বসার কথা। ডেঙ্গির মোকাবিলায় কী কী করণীয়, পুজো কমিটিগুলিকে সে বিষয়ে নির্দেশিকা দেওয়ার বিষয়টিও স্থির হবে সেখানে। পুজো সংগঠকদের মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের কাজে লাগাতে চায় দক্ষিণ দমদম পুরসভাও। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মণ্ডপ তৈরির সামগ্রী, বিশেষত বাঁশের খোলা অংশে জল যাতে জমতে না পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে গঠিত একটি বিশেষ দল প্রতিটি ওয়ার্ডে কাজ করছে। দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) সঞ্জয় দাস জানান, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে পুজোর উদ্যোক্তারা যদি প্রশাসনকে সাহায্য করেন, তবে নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণে গতি বাড়বে। শীঘ্রই পুজোর উদ্যোক্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করা হবে। প্রসঙ্গত, দমদম, উত্তর দমদম এবং দক্ষিণ দমদম— তিন পুরসভা মিলিয়ে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৬৫০ পেরিয়েছে। তার মধ্যে দক্ষিণ দমদমেই আক্রান্ত ৪৫০-এর বেশি। সেখানে তিন জন ডেঙ্গিতে এবং তিন জন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। উত্তর দমদমের এক পুরকর্তা বলেন, ‘‘মণ্ডপগুলিতে বিশেষ নজরদারি চলবে। গোটা মরসুম জুড়েই এই ব্যবস্থা চলবে। পুজোকে কেন্দ্র করে বাড়তি আবর্জনা সরানোর দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।’’
কলকাতা পুরসভার তরফে যদিও সপ্তাহখানেক আগেই ডেঙ্গি পরিস্থিতির মোকাবিলায় ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জল যাতে মণ্ডপ চত্বরে না জমে, সে দিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে উদ্যোক্তাদের। ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেন, ‘‘পুরসভার নির্দেশ আসার আগেই গত মাসের ৯ তারিখে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে ডেঙ্গি পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় নির্দেশ আমরা দিয়েছি। পুরসভার সঙ্গেও সব সময়ে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’’ পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই আমরা উদ্যোক্তাদের বাড়তি সতর্কতার নির্দেশ দিয়েছি। খোলা বাঁশে জল জমা ঠেকাতে বালি ভরে অথবা প্লাস্টিক বেঁধে দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের নিজেদের এলাকায় এ বিষয়ে খেয়াল রাখার অনুরোধ করা হয়েছে।’’