Fear Among Senior Citizens

চুরির ভয়ে প্রবীণেরা, ভূরি ভূরি অভিযোগ আসায় কড়া নগরপাল

চুরিতে বাধা দিতে গিয়ে গৃহস্থের খুন হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে প্রায়ই। বহু ক্ষেত্রেই অভিযোগ ওঠে পরিচিত কেউ বা বাড়ির পরিচারক, পরিচারিকাদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:২৩
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

বয়স্ক গৃহকর্তার উপস্থিতিতেই কোথাও চুরি যাচ্ছে টাকা-গয়না, কোথাও বাড়ি ফাঁকা থাকার সুযোগে টাকা-গয়নার পাশাপাশি উধাও হয়ে যাচ্ছে শাড়ি বা অন্য মূল্যবান সামগ্রী। চুরিতে বাধা দিতে গিয়ে গৃহস্থের খুন হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে প্রায়ই। বহু ক্ষেত্রেই অভিযোগ ওঠে পরিচিত কেউ বা বাড়ির পরিচারক, পরিচারিকাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু বছরের পর বছর এমন ঘটনা ঘটে চললেও সুরাহা হয় না বলে অভিযোগ। কেউ কেউ পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ করেন। পুলিশ আবার পরিচারক, পরিচারিকাদের সম্পর্কে তথ্য থানায় জানিয়ে রাখার ক্ষেত্রে পাল্টা গাফিলতির অভিযোগ আনে।

Advertisement

কিন্তু গত দু’মাসে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, নড়েচড়ে বসেছেন পুলিশের বড় কর্তারাই। পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার কলকাতা পুলিশের মাসিক অপরাধ সংক্রান্ত অধিবেশনে এ নিয়ে সরব হন খোদ নগরপাল বিনীত গোয়েল। তিনি এ বিষয়ে থানাগুলিকে সতর্ক করার পাশাপাশি চুরি দমন শাখাকে বিশেষ নজর দিতে বলেছেন।

কিন্তু হঠাৎ এই নিয়ে এমন তৎপরতা কেন? পুলিশ সূত্রের খবর, এর কারণ, পুজোর পর থেকে গত প্রায় দু’মাসে চুরির অভিযোগ বেড়ে গিয়েছে অস্বাভাবিক মাত্রায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, নিশানা করা হয়েছে পঞ্চাশোর্ধ্ব কারও বাড়ি বা ফ্ল্যাট। অভিযোগের তির বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাড়ির পরিচারক বা পরিচারিকাদের দিকে। জানা গিয়েছে, কলকাতা পুলিশ এলাকার সমস্ত থানা মিলিয়ে এমন অভিযোগ জমা পড়েছে ২২টি। ইতিমধ্যে কিনারা হয়েছে মাত্র চারটি ক্ষেত্রে। পুলিশের এক কর্তা বললেন, ‘‘শীতের এই সময়ে এই ধরনের অভিযোগ প্রতি বারই বাড়ে। অনেকে বাড়ি ফাঁকা রেখে বেড়াতে যান বলেও এমন ঘটনা ঘটে। কিন্তু এ বার বিশেষ করে প্রবীণদের ক্ষেত্রে এমন অপরাধ বেশি চোখে পড়ছে। দ্রুত কিনারা হচ্ছে না বলেও বাড়তি চাপ দেওয়া হয়েছে থানাগুলিকে।’’ ওই পুলিশকর্তা জানাচ্ছেন, উত্তরের চেয়ে এমন অভিযোগ বেশি এসেছে দক্ষিণ কলকাতা থেকে।

Advertisement

প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেই মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর এ ব্যাপারে সরব হয়। সন্তোষপুর, সার্ভে পার্ক এলাকায় একটি ফ্ল্যাটের লোহার তালা ভেঙে চুরির অভিযোগ ওঠে। ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ঘটনার রাতে পাশের পাড়ায় আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। সকালে পরিচারিকা এসে দেখেন তালা ভাঙা। ওই সময়েই একই রকম চুরির খবর পাওয়া যায় ওই এলাকার আরও একটি বাড়ি থেকে। যদিও সেই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা, বছর সত্তরের ঈপ্সিতা বসুর অভিযোগ, ‘‘পুলিশ কিছুই করেনি। অভিযোগ জমা পড়লেও মামলার কিনারা হয়নি।’’ এপিডিআর-এর সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূরের দাবি, ‘‘দক্ষিণ কলকাতার এমন বহু এলাকায় লোকে বাড়ি বা ফ্ল্যাট ফাঁকা রেখে ঘুরতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। চুরি মারাত্মক বেড়ে গিয়েছে। বহু ক্ষেত্রেই পুলিশ অভিযোগ পর্যন্ত নিচ্ছে না, নিলেও তদন্তে তেমন গা করছে না।’’

অনেকেরই অভিযোগ, দামি কিছু চুরি গেলে তা-ও পুলিশ অভিযোগ নেয়। কিন্তু ফোন বা কম মূল্যের কিছু খোয়া গেলেই পুলিশ এফআইআর করতে গড়িমসি করছে। বদলে
মামলার চক্করে থানা-পুলিশ করে বেড়াতে হবে, বার বার আদালতে যেতে হবে বলে পুলিশের তরফে শুধু জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করার ‘পরামর্শ’ দেওয়া হচ্ছে। যদিও পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ, এ-ও বলা হয়, ‘‘মোবাইল তো পাওয়া যাবে। কিন্তু মামলার চক্করে আদালতে আগে জমা করতে হবে। তার চেয়ে ছোট এই সব ব্যাপারে জিডি করাই ভাল।’’ লালবাজারের কর্তাদের যদিও দাবি, এ ব্যাপারেও কড়া নির্দেশ দিয়েছেন নগরপাল। দ্রুত মামলা রুজু করে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গেই পরিচারক, পরিচারিকা এবং ভাড়াটেদের সম্পর্কে তথ্য থানায় জানিয়ে রাখার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement