প্রচারের আলো থেকে কিছুটা দূরেই বাবারা

বাবাদের জন্য কি তা হলে ভালবাসা কম পড়ল? নাকি আর পাঁচটা পশ্চিমী ‘ট্রেন্ড’-এর মতো ফাদার্স ডে এখনও ততটা হালে পানি পায়নি?

Advertisement

সুনীতা কোলে

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯ ০১:০২
Share:

প্রতীকী ছবি।

মায়ের সঙ্গে সদ্য তোলা অথবা ছোটবেলার ছবি। কারও আবার পছন্দ নানা মুহূর্তের একাধিক ছবি। সঙ্গে আবেগ মাখা একটি বার্তা। উপহার, রেস্তরাঁয় খেতে যাওয়া। কয়েক বছর ধরে এ ভাবেই আন্তর্জাতিক মাতৃদিবস পালন করে আসছেন অল্পবয়সিরা। ওই বিশেষ দিনটিতে সোশ্যাল মিডিয়া ভরে যায় মায়েদের প্রতি বার্তায়। ইদানীং আধুনিকাদের কারও কারও পোস্টে মায়ের পাশাপাশি স্থান পাচ্ছেন শাশুড়িরাও।

Advertisement

একই ভাবে জুন মাসের তৃতীয় রবিবারটি চিহ্নিত হয়েছে বাবাদের জন্য। তবে শুভেচ্ছা-বার্তা পাওয়ার নিরিখে বাবারা পিছিয়ে রয়েছেন বেশ খানিকটা। অন্তত, নেট-দুনিয়ায় চোখ রাখলে তেমনটাই মনে হচ্ছে। উপহার নিয়ে বিপণন কৌশ‌লের রমরমাও কম। আবার, কোনও কোনও পোস্টে সিঙ্গল মায়েরা ‘ভাগ’ বসিয়েছেন বাবাদের দিনটিতেও। বাবাদের জন্য কি তা হলে ভালবাসা কম পড়ল? নাকি আর পাঁচটা পশ্চিমী ‘ট্রেন্ড’-এর মতো ফাদার্স ডে এখনও ততটা হালে পানি পায়নি?

গায়িকা ইন্দ্রাণী সেনের এ প্রসঙ্গে মত, মায়েরা সন্তানের যতটা ঘনিষ্ঠ হতে পারেন, বাবারা অনেক ক্ষেত্রে হয়তো সেটা পারেন না। মা কর্মরতা হলেও সন্তানের জন্য বেশি সময় ব্যয় করেন। ইন্দ্রাণী বলেন, ‘‘আমি নিজে অবশ্য মায়ের থেকে বাবার সঙ্গ অনেক বেশি পেয়েছি। মা ব্যস্ত থাকতেন খুব। যেখানে পৌঁছতে পেরেছি, সেটা বাবার জন্যই। আজ বাবা নেই। থাকলে হয়তো আমিও পোস্ট দিতাম।’’

Advertisement

ফাদার্স ডে নিয়ে তুলনায় মাতামাতি কম হওয়ার প্রসঙ্গে মায়ের সঙ্গে সন্তানের বেশি ঘনিষ্ঠতার কথা তুলে আনছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ও। তবে তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এখন বাবারা সন্তানের বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন অনেক সহজে। তিনি বলেন, ‘‘ছেলে-মেয়ের সঙ্গে আমার তো বন্ধুর মতোই সম্পর্ক। একটা দিন ঘটা করে পালন করা খারাপ নয়। তবে উপহার, কার্ডের দরকারও নেই। বাবা-মাকে সন্তানেরা ভালবাসলেই যথেষ্ট।’’

মাদার্স ডে নিয়ে বহু দিন আগে থেকেই প্রচার চলে। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষ আগে থেকে দিনটির কথা জানতে পারেন। এই বাণিজ্যিকীকরণের ফলেই মাদার্স ডে পালন বেশি করে চোখে পড়ে বলে মত তথ্যপ্রযুক্তি ইঞ্জিনিয়ার দেবজিতা দত্তের। তিনি জানাচ্ছেন, এ বছর ফাদার্স ডে কবে, তা তিনি নিজেই জেনেছেন মাত্র কয়েক দিন আগে।

সমাজতত্ত্বের শিক্ষক প্রশান্ত রায় আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, জন্মদাত্রী হিসেবে মায়েরা চিরকালই বেশি গুরুত্ব পেয়ে এসেছেন। তুলনায় বাবাদের ভূমিকা কম আলোচিত হয়। তিনি বলেন, ‘‘তারকারা কেমন ভাবে এই দিনগুলি কাটান, সে কথা সামনে আসার পর থেকে একটা অন্য মাত্রা পেয়েছে দিনগুলি। বাণিজ্যিক দিকটাও রয়েছে। এখন ফাদার্স ডে নিয়ে মাতামাতি কম থাকলেও তিন-চার বছর পরে হয়তো এই তফাৎটা আর থাকবে না। বারো মাসে তেরো পার্বণের মতো এটাও আর একটা বলে ধরে নিতে হবে তখন।’’

ফাদার্স ডে-কে সামনে রেখেই আবার শিশু অধিকারের বিষয়টি তুলে ধরতে চাইছে আয়ুষ্মান নামে একটি অলাভজনক সংস্থা। বিবাহবিচ্ছেদের পরে মা অথবা বাবা, যে কোনও এক জন সন্তানের অধিকার পেলে অনেক ক্ষেত্রেই অপর জন সন্তান-সঙ্গ থেকে বঞ্চিত হন। বাবা অথবা মায়ের অভাব বোধ করে সন্তানেরাও। সংস্থার পক্ষে অরিজিৎ মিত্র এবং শুভেন্দু রায় জানালেন, সেই অভাব তাদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বহু ক্ষেত্রেই। বিষয়টি নিয়ে আইনি ক্ষেত্রে পরিবর্তনের দাবি তোলার পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে আজ, সোমবার দুপুর দুটোয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে সংস্থার তরফে। সন্তানের জীবনে সমান ভূমিকা থাক মা এবং বাবার— এই বার্তাই দিতে চায় আয়ুষ্মান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement