Jadavpur University

‘কখনও আত্মহত্যা, কখনও চুরি, র‌্যাগিংয়ের জন্য যুক্তি সাজায় যাদবপুর’, ক্ষোভ সেই মৃত পড়ুয়ার বাবার

বুধবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক পড়ুয়াকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল। তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন প্রায় এক বছর আগে পুত্রকে হারানো রামপ্রসাদ।

Advertisement

সারমিন বেগম

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪ ২১:২৯
Share:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেল। —ফাইল চিত্র।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াকে হেনস্থার ঘটনায় ক্ষোভ উগরে দিলেন গত বছর একই হস্টেলে মৃত পড়ুয়ার বাবা। রামপ্রসাদ কুন্ডু নদিয়ার বাসিন্দা। তাঁর পুত্র গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। হস্টেলের তিন তলার বারান্দা থেকে নীচে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল ওই পড়ুয়ার। বুধবারের ঘটনা শুনে নিজের পুত্রের কথা মনে পড়ে গিয়েছে রামপ্রসাদের। এই ঘটনাকেও র‌্যাগিং হিসাবেই দেখছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, কখনও আত্মহত্যা, কখনও চুরি, র‌্যাগিং ঢাকতে নানা সময়ে নানা রকম যুক্তি সাজিয়ে থাকেন যাদবপুরের সিনিয়র পড়ুয়ারা। তাঁর পুত্রের মৃত্যুকে যেমন আত্মহত্যা হিসাবে তুলে ধরা হয়েছিল। যদিও বুধবারের ঘটনায় র‌্যাগিংয়ের কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। নিগৃহীত ছাত্র বা তাঁর পরিবারের কেউ কোথাও র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ জানাননি।

Advertisement

রামপ্রসাদ বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘যাদবপুরের ঘটনার কথা আমি শুনেছি। আমার মনে হয়, এটা ওখানকার র‌্যাগারদেরই কাজ। কেউ যদি ল্যাপটপ চুরি করেও, অন্য ভাবে তার বিচার করা যায়। সবাই মিলে তাকে ঘিরে ধরে হেনস্থা তো একপ্রকার র‌্যাগিংই। ছেলেটি কোথাও অভিযোগ করেনি, হয়তো ভয় পাচ্ছে।’’

বুধবারের ঘটনার সঙ্গে নিজের পুত্রের ঘটনার মিল পাচ্ছেন রামপ্রসাদ। প্রায় এক বছর হতে চলল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের সেই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থল সেই মেন হস্টেল। পুরনো ঘটনার কথা মনে করে রামপ্রসাদ বলে ওঠেন, ‘‘ওরা তো মানুষ নয়। ওরা পশুরও অধম। এর চেয়ে আমার ছেলেকে যদি বাঘ-সিংহের কাছে রেখে আসতাম, ছেলেটা ভাল থাকত। সন্ধ্যার পরে হস্টেলের ওরা আর মানুষ থাকে না। ভাল ভাল ছেলেমেয়েকে বাবা-মা পাঠান। ওখানে তাদের র‌্যাগার বানানো হয়। দীর্ঘ কাল ধরেই এটা যাদবপুরের পরম্পরা। সকলের উপর সেখানে অত্যাচার চলে।’’ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মৃত পড়ুয়ার বাবা। তাঁর কথায়, ‘‘কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই এটা দিনের পর দিন হয়ে চলেছে যাদবপুরে। দেখার কেউ নেই। এ ভাবে চলতে পারে না। ওখানকার এক এক জন ছাত্র বড় বড় দাদা। কর্তৃপক্ষের বদান্যতায় সকলে পাশ করে, অনেকে আবার ওখানেই চাকরিও করে। নিজেদের দোষ ঢাকতে ওরা মানুষ মেরে ফেলে। তার পর কখনও আত্মহত্যা, কখনও চুরির তকমা দেয় সে সব ঘটনাকে।’’

Advertisement

উল্লেখ্য, বুধবার রাতে যাদবপুরের মেন হস্টেলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক পড়ুয়াকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁর বিরুদ্ধে ল্যাপটপ চুরির অভিযোগ ওঠে। হেনস্থার কারণে পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আপাতত পড়ুয়া সুস্থ আছেন বলে খবর। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পড়ুয়াকে তাঁর বাবা-মা বাড়িতে নিয়ে যাবেন। তিনি পুরুলিয়া থেকে যাদবপুরে পড়তে এসেছিলেন। ল্যাপটপ চুরির অভিযোগে মেন হস্টেলের ভিতরে অনেকে মিলে পড়ুয়াকে ঘিরে ধরেছিলেন বলে অভিযোগ। হস্টেলের সুপার এবং মেডিক্যাল সুপার ঘটনাস্থলে গিয়ে পড়ুয়াকে উদ্ধার করেন। তা করতে গিয়ে তাঁরা বাধা পেয়েছিলেন বলেও অভিযোগ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement