প্রতীকী ছবি
কেষ্টপুরের ফ্ল্যাটে বুধবার সন্ধ্যায় ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক দেবাদৃতা সাহার (২৫)। সেই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হল তাঁর বাবারও।
রেল পুলিশ জানিয়েছে, পাতিপুকুরে রেললাইনের কাছে দেবাদৃতার বাবা দিলীপ সাহাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। রেল পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। বুধবার রাতে সেখানে তিনি মারা যান।
সাহা পরিবারের আত্মীয়দের তরফে জানা গিয়েছে, ছ’মাস আগে কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন দেবাদৃতার মা মধুচন্দ্রাও। পরিজনেরা জানিয়েছেন, ওই পরিবারের তিন জনই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন।
দিলীপবাবু বিদ্যুৎ ভবনে উচ্চ পদে কর্মরত ছিলেন বলে বৃহস্পতিবার জানান তাঁর ভাই প্রদীপ সাহা। তিনি জানান, এক সময়ে কেষ্টপুরের বারোয়ারিতলার ফ্ল্যাটে স্ত্রী-মেয়ের সঙ্গে থাকতেন দিলীপবাবু। কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পরে দেবাদৃতা আর সেখানে থাকতে চাননি। তাই বাবা-মেয়ে বেলঘরিয়ার যতীন দাস নগরের বাড়িতে থাকতেন। প্রদীপবাবু জানান, বুধবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান দেবাদৃতা। দুপুরের পরেও বাড়ি না ফেরায় তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘আমি, ওর বাবা একাধিক বার ফোন করলেও ধরেনি। ভাই অফিস থেকে ফিরলে কেষ্টপুরের ফ্ল্যাটে যাই।’’ তিনি জানান, দেবাদৃতা দরজা না খোলায় অন্য চাবি দিয়ে তাঁরা ফ্ল্যাটে ঢোকেন। দেবাদৃতার ঘরের দরজাও ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। সেটি খোলামাত্র সিলিং ফ্যান থেকে দেবাদৃতাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তাঁরা। তা দেখে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যান দিলীপবাবু। ঘণ্টাখানেক পরে প্রদীপবাবুর ফোনে খবর আসে, ট্রেনের ধাক্কায় জখম হয়ে আর জি করে চিকিৎসাধীন তাঁর ভাই।
জিআরপি সূত্রের খবর, পাতিপুকুরের দিক থেকে রেললাইন ধরে অন্যমনস্ক ভাবে হাঁটার সময়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাথায় গুরুতর চোট পান দিলীপবাবু। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, মেয়ের মৃত্যুর শোকেই লাইন ধরে বিপজ্জনক ভাবে হেঁটে যাচ্ছিলেন ওই প্রৌঢ়। ঘটনাক্রমের নিরিখে দিলীপবাবুর মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা কাজ করছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের।
দাদা প্রদীপবাবুর কথায়, ‘‘মায়ের মৃত্যু নিয়ে বাবা-মেয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। আগের দিন কথা কাটাকাটিও হয়েছিল। দেবাদৃতার মা মানসিক অবসাদের শিকার ছিলেন। মেয়েও তাই। দু’জনের পরপর মৃত্যুর পরে ভাইও চলে গেল।’’