বমাল: উদ্ধার হয়েছে এমনই দশটি মূর্তি। নিজস্ব চিত্র
গোটা পরিবারের বিরুদ্ধেই উঠেছে হাতির দাঁত পাচারের অভিযোগ। দক্ষিণী এই পরিবারের বাস কলকাতাতেই। পরিবারের কর্তা সুদেশচন্দ্র বাবু সোমবার সকালে কেরলের কোট্টায়াম থেকে ট্রেনে সাঁতরাগাছিতে নামার পরে মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছিলেন দক্ষিণ কলকাতায় বাড়ির দিকে। অভিযোগ, কেরলের জঙ্গল থেকে তিনি নিয়ে এসেছিলেন চোরাই হাতির দাঁত।
সাঁতরাগাছি থেকে এগোতেই কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ক্যারি রোডের মোড়ে সুদেশের পথ আটকান ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই)-এর অফিসারেরা। তাঁদের কাছে আগাম খবর ছিল। যে গাড়িতে সুদেশ ও তাঁর মেয়ে অমিতা বাবু ছিলেন, সেই গাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত হয় তিন কিলোগ্রামেরও বেশি চোরাই হাতির দাঁত। যার বাজারদর প্রায় ৩১ লক্ষ টাকা বলে ডিআরআই সূত্রে জানা গিয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে সুদেশ ও অমিতাকে। অফিসারদের সন্দেহ, এই হাতির দাঁত শিলিগুড়ি হয়ে নেপালে পাচার করার কথা ছিল তাঁদের। ধৃতদের মঙ্গলবার আদালতে তোলা হলে বিচারক জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্য দিকে, কেরলের বন দফতর থেকে ইতিমধ্যেই কলকাতায় অভিযোগ এসে পৌঁছেছে, বছর চারেক আগে সেখানকার এদামালায়ার জঙ্গলে হাতি চোরাশিকারের সঙ্গে জড়িয়েছিল সুদেশের নাম।
অভিযোগ, ওই মামলায় কেরলের বন দফতরের খাতায় পলাতক ছিলেন সুদেশ। ডিআরআই সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের নামও জড়িয়ে গিয়েছিল চোরা শিকারের সঙ্গে। মাঝে কেরলের বন দফতরের একটি দল কলকাতায় এসে সুদেশকে খুঁজে না পেয়ে ফিরে যায়। ডিআরআই কর্তাদের কথায়, কেরলের জঙ্গলে হাতি চোরা শিকারের পরে তার দাঁত কেটে নিয়ে সুদেশ চলে আসতেন কলকাতায়। এখান থেকে তা পাচার করে দিতেন নেপালে। ডিআরআই-এর দাবি, সুদেশ কেরল থেকে হাতির দাঁত আনতেন আর তাঁর মেয়ে অমিতা সেগুলি নেপালে পাচার করার দায়িত্বে থাকতেন।
ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। সোমবার বাবা ও মেয়েকে গ্রেফতার করার পরে নিজেদের দফতরে এনে জেরা করে ডিআরআই জানতে পারে, রাজডাঙা রোডে তাঁদের বাড়িতে আরও হাতির দাঁত রয়েছে। বন দফতরের অফিসার এবং সুদেশ-অমিতাকে সঙ্গে নিয়ে সেই বাড়িতে হানা দিয়ে তাজ্জব বনে যান ডিআরআই অফিসারেরা। মেলে হাতির দাঁতের দশটি মূর্তি। তা ছাড়াও ছিল হাতির দাঁতের তৈরি গয়না, চিরুনি এবং হাতির দাঁতের গুঁড়ো। রাজডাঙার বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া ওই জিনিসপত্রের দাম ৭২ লক্ষ টাকারও বেশি বলে জানিয়েছে ডিআরআই। সব মিলিয়ে বাজেয়াপ্ত হওয়া হাতির দাঁত ও তার থেকে তৈরি সামগ্রীর বাজারদর এক অর্থে কোটি টাকারও বেশি।
ডিআরআই জানিয়েছে, কেরল থেকে হাতির দাঁত এলে রাজডাঙার বাড়িতে রীতিমতো কর্মী নিয়োগ করে মূর্তি বানানো হত। সে কারণে, হাতির দাঁতের গুঁড়োও পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ওই বাড়িতে সুদেশের স্ত্রী থাকলেও তাঁর ছেলে ছিলেন না। এ বারের হাতির দাঁত পাচারের সঙ্গে যেহেতু সুদেশের স্ত্রীর কোনও যোগাযোগ নেই, তাই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি বলে ডিআরআই সূত্রের খবর।