লরির ধাক্কায় পিষে মৃত্যু বাবা-মেয়ের

ক্ষিপ্ত বাসিন্দারা দশটি বেসরকারি বাস ও লরিতে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। একটি মিনিবাসে আগুন ধরানোর চেষ্টা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৮ ০২:৪৭
Share:

মহম্মদ আফরোজ আলি ও তাঁর মেয়ে মেনহা আলি। নিজস্ব চিত্র

আত্মীয়েরা হজে যাবেন বলে শিশুকন্যাকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী গিয়েছিলেন তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে। সেখান থেকে মোটরবাইকে ফেরার পথে লরির ধাক্কায় মৃত্যু হল ওই শিশু ও তার বাবার। গুরুতর জখম মা-ও। পুলিশ জানিয়েছে, শিশু ও মা— কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাত পৌনে ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে গার্ডেনরিচ থানা এলাকার ইমামবড়া চিনাপাড়ার কাছে। মৃতদের নাম মহম্মদ আফরোজ আলি (৪০) ও মেনহা আলি (৩)। আফরোজের স্ত্রী নিগাহ সুলতানা (৩০) আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনার পরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গার্ডেনরিচের ওই এলাকা। ক্ষিপ্ত বাসিন্দারা দশটি বেসরকারি বাস ও লরিতে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। একটি মিনিবাসে আগুন ধরানোর চেষ্টা হয়। বিরাট পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাঁদের লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। তাতে ট্র্যাফিক পুলিশের এক সার্জেন্ট-সহ তিন পুলিশকর্মী জখম হন। পরে পুলিশ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘাতক লরির চালক গ্রেফতার না হলেও গাড়ি ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় আট জনকে
ধরেছে পুলিশ।

মৃত আফরোজের দাদা জাকির হোসেন মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আফরোজ স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে রাজাবাগানে শ্বশুরবাড়ির দিকের এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার সময়েই ওই দুর্ঘটনা ঘটে।’’ আফরোজের শ্যালক মহম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘‘শ্বশুরবাড়িতে এলে প্রতিবার রাতের খাওয়া সেরেই বাড়ি ফিরত আফরোজ ও নিগাহ। ওই রাতে খাওয়াদাওয়া করতে গেলে হজযাত্রীদের বেরোতে দেরি হয়ে যেত। তাই রাতের খাবারটা সঙ্গে নিয়েই ফিরছিল ওরা। খাওয়াটা সেরে বেরোলে হয়তো এই ঘটনা ঘটত না।’’

Advertisement

কী ঘটেছিল?

পুলিশ জানায়, আফরোজের হেলমেট থাকলেও বাকি দু’জনের মাথা ছিল খালি। আফরোজ খুব জোরে বাইক চালিয়ে চিনাপাড়ার কাছে একটি লরিকে ডান দিক দিয়ে ওভারটেক করতে যান। সেই সময়েই ওই লরির সঙ্গে ধাক্কা লাগে মোটরবাইকের। তাতেই লরির সামনের চাকায় পিষে যান সকন্যা আফরোজ ও নিগাহ। এলাকার বাসিন্দারা তিন জনকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান। সেখানেই দু’জনের মৃত্যু হয়। পরে নিগাহ সুলতানাকে বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ঘটনার পরেই লরি ফেলে রেখে চালক পালিয়ে যান।

এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসী। রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা বাসগুলিতে চলে যথেচ্ছ ভাঙচুর। আগুনও লাগানো হয় একটি বাসে। পরিস্থিতি সামলাতে বাহিনী নিয়ে পৌঁছন পুলিশ আধিকারিকেরা। পুলিশকে লক্ষ্য করে উড়ে আসে ইট-পাটকেল। এর পরেই জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি চালানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দা তালাব আলমের অভিযোগ, রাতে বেআইনি ভাবে রাস্তার এক পাশে মিনিবাস রাখা হয়। অন্য পাশে বসেন হকারেরা। ফলে গার্ডেনরিচ রোডের ওই অংশটি ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। যার জেরে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এক পুলিশকর্তা জানান, সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ পিকেট বসেছে। চলছে টহলদারি। ভাঙা বাসগুলিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আগের রাতের ঘটনার পরেও হেলমেট নিয়ে হুঁশ ফেরেনি অনেকেরই। খালি মাথায় দিব্যি বাইক চালাচ্ছেন তাঁরা। বিনা বাধায় তিন বা চার জন আরোহী নিয়েও যাচ্ছে একের পর এক বাইক। পুলিশকর্মীরা অবশ্য নীরব দর্শক। যেন দেখেও দেখতে পাচ্ছেন না তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement