স্বপন বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র।
দরজা খোলা। ঘর লন্ডভন্ড। শৌচাগারে রক্তের দাগ। এ সব দেখে স্বামীকে ফোন করেছিলেন মহিলা। উত্তর পান, ‘বাইরে আছি।’ পুলিশকে কিছু জানাতে নিষেধ করে অসংলগ্ন কথা বলেই ফোন বন্ধ করে দেয় সে। স্বামীর এমন আচরণ এবং ছেলেকে দেখতে না পেয়ে থানায় যান মহিলা। তল্লাশি চালিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটে নাগাদ পুলিশ খাটের নীচ থেকে উদ্ধার করে ছেলের দেহ। মহিলার স্বামী পলাতক। উধাও কয়েক হাজার টাকা ও গয়না।
ঘটনাটি ঘটেছে পাটুলি থানা এলাকার এন ব্লকে। মৃতের নাম স্বপন বিশ্বাস (২৫)। ওই যুবক খাবার সরবরাহ করার কাজ করলেও বর্তমানে বেকার ছিলেন। নিখোঁজ তাঁর বাবা সুভাষ বিশ্বাস। পুলিশের অনুমান, খুনের পিছনে সুভাষই রয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, স্বপনের মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। পেট এবং বগলের কাছে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। মৃতের মা সুনীতা বিশ্বাস পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীই ছেলেকে খুন করেছে।
তদন্তে জানা গিয়েছে, সুনীতা রান্নার কাজ করেন। সুভাষ প্রোমোটারি ব্যবসায় যুক্ত। বৃহস্পতিবার সকালে কাজে বেরিয়ে যান সুনীতা। সাড়ে আটটা নাগাদ ফিরে দেখেন, দরজা খোলা। স্বামী ও ছেলে নেই। স্বামীকে ফোন করলে সে জানায়, মাছ কিনতে বাজারে গিয়েছে। ছেলের কথা জানতে চাইলে সুভাষ জানায়, মাদকাসক্ত হয়ে টাকা নিয়ে পালিয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, কিছু ক্ষণের মধ্যে বাড়ি আসে সুভাষ। স্ত্রী ফের কাজে যাবেন দেখে তাঁকে নিজে খেতেও দেয়।
পুলিশ এবং এলাকাবাসীকে সুনীতা জানিয়েছেন, ফের সাড়ে বারোটা নাগাদ ফিরে দেখেন, দরজা খোলা। স্বামী বা ছেলে নেই। শৌচালয় এবং অন্য জায়গায় রক্তের দাগ দেখে সন্দেহ হওয়ায় আবার সুভাষকে ফোন করেন। স্ত্রীকে অসংলগ্ন কথায় সে বলে ফেলে, পুলিশকে কিছু না জানাতে। তাতে সে বেঁচে যাবে। সুনীতা পাটুলি থানায় গিয়ে সব বলেন। তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। একতলার ঘরের খাটের নীচ থেকে উদ্ধার হয় স্বপনের দেহ। কাপড় দিয়ে মোড়ানো দেহের সামনের দিকে রাখা ছিল বাসন।
এ দিন দেখা গেল, তেতলা বাড়ির সামনে পুলিশ পাহারা। একতলায় স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে থাকত সুভাষ। তেতলায় থাকেন দম্পতির মেয়ে। পুলিশ সুনীতা এবং তাঁর মেয়েকে থানায় নিয়ে গিয়েছে। পুলিশ জেনেছে, স্বপন কোনও কাজ করতেন না বলে এ নিয়ে পরিবারে অশান্তি হত। এক প্রতিবেশীর অভিযোগ, বাবা-ছেলের মধ্যে হামেশাই ঝামেলা হত। এ দিন অবশ্য গোলমাল শুনতে পাননি বলেই দাবি প্রতিবেশীদের। এ দিন লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখার আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। এসেছিল পুলিশ কুকুর।