অজয় বেরা
মেঘ ডাকলে এখনও আতঙ্কে ভোগেন তাঁরা। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই বাড়ির একতলায় জল ঢুকে যাওয়া অনিবার্য। বছর দুয়েক আগে এক বৃষ্টির দিনে বাড়িতে তেমনই জল ঢুকে গিয়েছিল। স্কুল থেকে ফেরার পথেই শিক্ষিকা খবর পান, একতলার জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে স্বামীর।
বিধাননগরে আসন্ন পুরভোট। বাগুইআটির জ্যাংড়ার বাসিন্দাদের অনেকের মনেই সেই ঘটনার ক্ষত এখনও টাটকা। ২০১৯ সালে বাড়ির ভিতরেই জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান জ্যাংড়ার বাসিন্দা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী অজয় বেরা। ভোটের মুখে অনেক বাসিন্দারই তাই প্রশ্ন, জল জমার সমস্যা মিটবে কবে? আবারও অজয়ের মতো কাউকে এমন ঘটনার শিকার হতে হবে না তো?
রাজারহাট-গোপালপুর এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রতি বছর ভারী বৃষ্টিতে জলবন্দি হয়ে পড়েন মানুষ। ওই এলাকাতেই জ্যাংড়া। অগস্টের এক বৃষ্টির দিনে অজয়ের বাড়ির একতলায় জল ঢুকে গিয়েছিল। একতলায় ছিল সদ্য কেনা ইনভার্টারটি। সেটি যাতে জল লেগে নষ্ট না হয়ে যায়, তাই অজয় জমা জলে নেমেছিলেন ইনভার্টারের প্লাগ খুলতে। অজয়ের স্ত্রী লিপিকা শুক্রবার বলেন, ‘‘উনি মেন সুইচ বন্ধ করেছিলেন। কিন্তু ভুলে গিয়েছিলেন তার পরেই ইনভার্টার চালু হয়ে যাবে। প্লাগের গর্তে হাত লেগে আমার স্বামী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। সে দিন একটা অনুষ্ঠান বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। আমি স্কুল থেকে তাড়াতাড়ি ফিরেও আসছিলাম। মাঝরাস্তায় ওই খবর পাই।’’
জল জমার সমস্যার সমাধানকে গুরুত্ব দিয়ে শুক্রবারই পুরভোটের ইস্তাহার প্রকাশ করেছে তৃণমূল। নিকাশির সমস্যাকে প্রথম স্থানে রাখা হয়েছে সেখানে। তাতে জল-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী জ্যাংড়া, বিদ্যাসাগর পল্লি, রবীন্দ্র পল্লি-সহ ১৫, ১৬, ১৮ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তবে ঘোষণা মতো সব কাজ যেন হয়, এমনই বার্তা সরকারকে দিতে চাইছেন ভুক্তভোগী নাগরিকেরা।
লিপিকা বলেন, ‘‘জল জমার সমস্যা তো সর্বত্র। আমার বাড়িতে দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর যে কোথাও ঘটবে না, সেই নিশ্চয়তা নেই। আশা করব, এ বার এই সমস্যার সমাধান হবে। ’’
এলাকার পুরনো বাসিন্দা তথা বেশ কয়েকটি স্থানীয় ক্লাব সংগঠনের কর্মকর্তা অপূর্ব সমাজদারের কথায়, ‘‘বৃষ্টি হলে এখানে তিন-চার দিন মানুষ জলবন্দি থাকেন। আশা করি ইস্তাহার কার্যকর হবে। অজয়ের ঘটনা আমরা চোখের সামনে দেখেছি। আমার ছেলে ওঁর কাছে পড়ত। এখনও বর্ষায় অজয়ের কথাই আলোচনা হয়। ওই আতঙ্ক যেন আর ফিরে না আসে।’’