বাড়ি নেই, বিয়ের আলোচনা হোটেলেই

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের একটি হোটেলে। কবে বাড়িতে ফিরতে পারবেন, তা নিয়ে যখন চিন্তা-ভাবনা করছেন শীল দম্পতি, তখনই মঙ্গলবার তাঁদের সেই তেতলা বাড়িটিই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:১০
Share:

পাশেই: হোটেলের ঘরে হবু শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে তৃষা শীল। মঙ্গলবার। ছবি: সুমন বল্লভ

জানুয়ারির ২২ তারিখ একমাত্র মেয়ে তৃষার বিয়ে। বেনারসি, গয়না, বিয়ের তত্ত্ব— যাবতীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা সেরে ফেলেছিলেন ১৩এ, দুর্গা পিতুরি লেনের জয়ন্ত শীল এবং সোনালি শীল। মেয়ের বিয়ের জন্য অনুষ্ঠানের বাড়িও ভাড়া নেওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বিয়ের সাড়ে চার মাস আগে মাত্র কয়েক মিনিটের কম্পন আর ফাটলের জেরে বাড়ি ছেড়ে আপাতত এক কাপড়ে আশ্রয় নিয়েছেন

Advertisement

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের একটি হোটেলে। কবে বাড়িতে ফিরতে পারবেন, তা নিয়ে যখন চিন্তা-ভাবনা করছেন শীল দম্পতি, তখনই মঙ্গলবার তাঁদের সেই তেতলা বাড়িটিই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল। ফলে মেয়ের বিয়ের পরিকল্পনা-আলোচনাও এখন সবটাই হোটেলে বসে করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।

মধ্য কলকাতায় পৈতৃক তেতলা বাড়ি। মাথার উপরে নিজস্ব ছাদ। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সব হারিয়েছে শীল পরিবার। ফলে মেয়ের বিয়ের ভাবনার সমান্তরাল ভাবে শীল দম্পতি আগামী দিনে মাথা গোঁজার জায়গার ব্যবস্থা কী হবে, তা নিয়েও চিন্তিত। তবে সব কিছুকে ছাপিয়েই সামনে এসে পড়েছে জানুয়ারিতে মেয়ের বিয়ের বিষয়। বিয়ের জিনিসপত্র সবই ভাঙা বাড়ির নীচে চাপা পড়েছে।

Advertisement

তবে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরে বিয়ের খরচ নিয়ে চিন্তা খানিকটা হলেও দূর হয়েছে শীল দম্পতির। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার পাঁচ লক্ষ টাকা দেবে। মেট্রো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বলা হবে পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে। মেয়ের বিয়ের জন্য দশ লক্ষ টাকার ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি মুখ্যমন্ত্রী দেওয়ায় তাই জয়ন্তবাবু ও সোনালিদেবী খানিকটা নিশ্চিন্ত।

এমন বিপর্যয়ে শীলদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের মেয়ে তৃষার হবু শ্বশুরবাড়ির সদস্যেরা। জয়ন্তবাবুর হবু জামাই কৌস্তভ ল, তাঁর বাবা-মা দেবনাথবাবু এবং গোপাদেবী কিংবা তৃষার হবু ননদ— সকলেই শনিবারের ঘটনার পর থেকে শীল দম্পতির পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সবাই নিয়মিত হোটেলে এসে খোঁজখবর নিচ্ছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেও হোটেলের ঘরে দেখা গেল, হবু বৌমা তৃষার সঙ্গে গল্প করছেন গোপাদেবী।

ওই বাড়ির নীচেই জয়ন্তবাবুর ব্যবসার জায়গা। সেই জায়গাও ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়েছে। ফলে নিজেদের ব্যবসা আবার নতুন করে দাঁড় করানো নিয়েও চিন্তিত শীলেরা। দু’শো বছরের পুরনো পৈতৃক ভিটে কয়েক মিনিটে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মেট্রো রেলকে তাই ক্ষমা করতে পারছেন না জয়ন্তবাবুরা।

এ দিন সন্ধ্যায় হোটেলে বসে সোনালিদেবী ক্ষোভ উগরে বলেন, ‘‘এত বড় প্রকল্পের কাজ করার আগে মেট্রো কেন ভাল করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেনি! সেকরাপাড়া গলির লোকজন হোটেল থেকে ফেরত গিয়েই দেওয়ালে ফাটলের কথা মেট্রোকে জানায়। তা সত্ত্বেও কেন মেট্রো কাজ শুরু করল? কেন বিষয়টি হাল্কা ভাবে নেওয়া হল।’’

গত শনিবার সন্ধ্যায় কম্পন হতেই দোতলা থেকে নেমে এসে জয়ন্তবাবু দেখেন মেঝে, দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও মেয়েকে বাড়ির বাইরে নামিয়ে আনেন তিনি। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভেঙে পড়তে শুরু করে ঘরের চাঙড়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement