—ফাইল চিত্র
সিবিআই অফিসার সেজে কসবার ব্যবসায়ীকে অপহরণের ঘটনাই প্রথম নয়। বরং এর আগে একাধিক ব্যক্তিকে একই কায়দায় অপহরণ করে মোটা টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে অভিযুক্তেরা। ধৃতদের জেরা করে এমনই জানতে পেরেছে লালবাজার।
লালবাজার সূত্রের খবর, এর আগে একাধিক ব্যবসায়ীকে অভিযুক্তেরা অপহরণ করে মুক্তিপণ চাইলেও সেই সব ক্ষেত্রে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়নি। সেই সব ক্ষেত্রে প্রতি বারই নিজাম প্যালেসের ক্যান্টিনের একটি ঘরে অপহৃতকে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করত অপহরণকারীরা। এক তদন্তকারী জানান, মূলত অসৎ ব্যবসায়ীদের বেছে বেছে অপহরণ করা হত। উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীদের অপহরণ করেছিল তারা। এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করেছিল কলকাতা পুলিশ এলাকার বন্দরের একটি জায়গা থেকে। কিন্তু একাধিক বার অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করলেও পুলিশের নজরে না আসায় ক্রমশই সাহস বেড়ে গিয়েছিল অভিযুক্তদের। তাই সেই সাহসে ভর করেই গত সোমবার খাস কলকাতায় দিনেদুপরে কসবার ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ধৃত অনির্বাণ কাঞ্জিলাল, অর্ঘ্য সেনগুপ্ত এবং স্বরূপ ঘোষেরা।
লালবাজার সূত্রের খবর, কসবার বোসপুকুর রোডের ওই ব্যবসায়ীকে অপহরণের ঘটনায় শনিবার পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের কর্মী এবং এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার রয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছে এক চিত্র প্রযোজক এবং মহিলা আইনজীবীও। মুক্তিপণ বাবদ ১৫ লক্ষ টাকা আদায় করা হলেও পুলিশ এখনও পর্যন্ত পুরো টাকা উদ্ধার করতে পারেনি। তবে শনিবার ধৃত প্রতীক সরকার এবং স্বরূপের বাড়ি থেকে কিছু টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা জানান, ওই অপহরণ চক্রের মূল পাণ্ডা ছিল অনির্বাণ। বাকিদের কেউ কেউ আগের অপহরণের ঘটনায় যুক্ত ছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে। অনির্বাণ নিজেকে সিবিআই অফিসার পরিচিয় দিয়ে নিজাম প্যালেসের ওই ক্যান্টিনের ঘরে অপহৃতকে আটকে রাখত। ওই ক্যান্টিনের একাধিক কর্মীর সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সেখানে অনির্বাণ নিজেকে সিবিআইয়ের উচ্চ পদস্থ কর্তা হিসেবে পরিচয় দিত। তাই কোনও অপহৃতকে সেখানে সে নিয়ে এলেও কেউ তাকে সন্দেহ করেননি। অনির্বাণ এবং স্বরূপই অপহরণ করার জন্য বাকি সদস্যদের জোগাড় করেছিল।
পুলিশ জানায়, কসবার ব্যবসায়ীকে অপহরণের দিন, সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ওই চক্রের প্রায় ১২ জন সদস্য কসবার একটি শপিং মলের কাছে দেখা করে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। পরিকল্পনামাফিক ওই ব্যবসায়ীর পরিচিত এবং আর এক অভিযুক্ত স্বরূপ রায়কে আগেই তাঁর কাছে পাঠানো হয়েছিল। তার উদ্দেশ্য ছিল, সে সময়ে বাড়িতে আর কে কে আছে তা বুঝে নেওয়া। এর পরে সে সঙ্কেত দেওয়ার পরেই চারটি গাড়ি করে অপহরণকারীদের দলটি ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে যায়। জেরায় ধৃতেরা দাবি করেছে, যাতে কোনও রকম সন্দেহ না হয়, তাই সিবিআইয়ের মতোই চারটি গাড়ি ভর্তি লোক নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অপহরণ করার জন্য।
লালবাজার সূত্রের খবর, কসবার ওই ব্যবসায়ীকে অপহরণের পরে প্রথমে মুক্তিপণ বাবদ দু’কোটি টাকা চাওয়া হয়, পরে যা কমে দাঁড়ায় এক কোটিতে। কিন্তু টাকা জোগাড় না হওয়ায় অপহৃতের পরিবার ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে ব্যবসায়ীকে ছড়িয়ে আনেন। বাকি টাকা কয়েক দিনের মধ্যে দিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির পরেই অপহরণকারীরা ওই ব্যবসায়ীকে ছেড়েছিল।