প্রশ্রয় পেয়ে বিগড়োচ্ছে কৈশোর, ফেসবুকে শোভন

আবেশ দাশগুপ্তের মৃত্যুর পরে বেশ ক’দিন ফেসবুকে ঘোরাফেরা করছে একটি পোস্ট। যেখানে আঙুল তোলা হয়েছে সেই অভিভাবক সমাজের দিকে, যাদের ছেলেমেয়েরা রাত জেগে বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট করলেও কিছু বলেন না। ঠাকুমার মৃত্যুর দু’দিন বাদে মেয়েকে জন্মদিন পালনের অনুমতি দেন। প্রকাশ্যে মদ্যপান করতে দেখেও ছেলেমেয়েকে শাসন করেন না।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া ও তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৬ ০৩:১০
Share:

আবেশ দাশগুপ্তের মৃত্যুর পরে বেশ ক’দিন ফেসবুকে ঘোরাফেরা করছে একটি পোস্ট। যেখানে আঙুল তোলা হয়েছে সেই অভিভাবক সমাজের দিকে, যাদের ছেলেমেয়েরা রাত জেগে বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট করলেও কিছু বলেন না। ঠাকুমার মৃত্যুর দু’দিন বাদে মেয়েকে জন্মদিন পালনের অনুমতি দেন। প্রকাশ্যে মদ্যপান করতে দেখেও ছেলেমেয়েকে শাসন করেন না। বন্ধুর জন্মদিন পালনের জন্য ছেলের হাতে ১৮০০ টাকা তুলে দিয়ে এক বারটি জিজ্ঞাসাও করেন না, এত টাকা দিয়ে কী করবে?

Advertisement

পোস্টটি নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করে বিতর্কে নতুন মাত্রা জুড়েছেন কলকাতার মেয়র তথা মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, ‘‘পোস্টটির সঙ্গে আমি একমত। এক জন বাবা হিসেবে মনে করি, প্রত্যেক অভিভাবককে এই মুহূর্তে অনেক বেশি দায়িত্ব নিতে হবে।’’

তাঁর মতে, পরিবার ছেলেমেয়েদের সময় না দিলে তাদের অপরিণত মনকে বোঝা অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাবে। ‘‘চাইলেই বাবা-মা ছেলেমেয়ের হাতে টাকা তুলে দেবেন, কোথায় যাচ্ছে খোঁজ রাখবেন না, তা হলে তো ওরা কী করছে, বোঝাই যাবে না! দুনিয়াটা যে ভাবে বদলে যাচ্ছে, তাতে ওদের সঙ্গে আমাদের আরও বেশি যোগাযোগ রাখতে হবে। তবেই ওদের গতিবিধি সম্পর্কে জানতে পারব, মনের হদিস পেতে পারব।’’— পর্যবেক্ষণ শোভনবাবুর।

Advertisement

কিন্তু যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকের ওই পোস্ট, আবেশদের সেই বন্ধু-বৃত্তে মেয়রের ছেলেও ছিল বলে খবর। সে ক্ষেত্রে এই ধরনের অভিভাবকদের মেয়র কটাক্ষ করেন কোন যুক্তিতে? মেয়রের বক্তব্য,

‘‘আমার ছেলে আবেশের বন্ধুদের চিনলেও ঘটনার সময়ে ওখানে ছিল না।’’ নিজের ছেলে কোথায় যাচ্ছে, কার কার সঙ্গে মিশছে, সে ব্যাপারে কি মেয়র সব খোঁজ রাখেন?

শোভনবাবুর দাবি, ‘‘আমি রাজনৈতিক নেতা। তাই ছেলে কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, সব খবর চলে আসে। সে সব স্ত্রীকে জানিয়ে দিই। কারণ, আমার ছেলে মায়ের কাছে বেশি খোলামেলা।’’ ছেলের গতিবিধির উপরে পুরো নজর রয়েছে দাবি করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ও একা গাড়ি চালিয়ে বেরোতে চাইলে বেরোতে দিই না। চাইলেই টাকা দিই না। জানতে চাই, কীসে খরচ করবে।’’ মেয়র জানিয়েছেন, ছেলের সঙ্গে তিনি বন্ধুর মতো মেশেন। ‘‘আমি মনে করি না যে, আমার ছেলে সব ঠিক করবে। বন্ধুর মতো মিশলেই ওর ভুলগুলো ধরতে পারব।’’— বলছেন তিনি।

বছরখানেক আগে অভিযোগ উঠেছিল, মেয়রের ভাইঝি গভীর রাতে মদ্যপ অবস্থায় ট্রাফিক পুলিশকে হেনস্থা করেছেন। ঘটনাটি তাঁদের শিক্ষা দিয়েছে বলে শুক্রবার জানান শোভনবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘বয়স আঠারো বছর পেরিয়ে এক দিন হয়ে গেলেই মন পরিণত হয় না। জীবনের এই পর্বে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যত সময় কাটানো যায়, ততই তাদের ভুলগুলো শুধরে ঠিক পথে নিয়ে আসা যাবে।’’ ভাইঝিকে ছাড়াতে কোনও প্রভাব কি তিনি খাটাননি?

মেয়রের জবাব, ‘‘ভাইঝিকে থানা থেকে ছাড়াতে বা থানায় রাখতে— কোনও ব্যাপারেই নির্দেশ দিইনি। ঘটনাটি জানতে পেরে দাদাকে বলেছিলাম। উনি বলেছিলেন, বাড়ির তরফে কেউ ওকে ছাড়াতে যাবে না। পুলিশ যা ব্যবস্থা নেওয়ার, নেবে।’’

অভিভাবকদের ‘দায়বদ্ধতা’ প্রসঙ্গে মেয়রের পাশে দাঁড়িয়ে টুইটারে প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও। আবেশের মৃত্যুর সুবিচারের দাবিতে আজ, শনিবার মৌন মিছিলের ডাক দিয়েছে তার পরিবার ও বন্ধুরা। বাবুলের কটাক্ষ, ‘‘কারা হাঁটবেন মিছিলে? যে সব বাবা-মা দিনেদুপুরে ছেলেমেয়েদের মদ কেনা আর মদ খাওয়া আটকাতে পারেন না, তাঁরা?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement