প্রস্তুতি: বৌবাজারের বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে বি বা দী বাগে স্টেশন তৈরির সময়ে ধস নামা ঠেকাতে আগে থেকেই বিভিন্ন সতর্কতা অবলম্বন করেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
গত অগস্টে বৌবাজারে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ তৈরির সময়ে একের পর এক বাড়ি ভেঙে পড়েছিল। তার পরে সেখানে মাটির ধস ঠেকানো গেলেও নতুন করে কাজ শুরুর জন্য আদালতের সম্মতি এখনও মেলেনি।
বৌবাজারের সেই ঘটনার প্রভাব ধাক্কা দিয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজের স্বাভাবিক ছন্দেও। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন নির্মাণের ক্ষেত্রে কার্যত পা টিপে টিপে চলার সতর্কতাই অবলম্বন করছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
বি বা দী বাগ স্টেশনের প্রবেশ পথের ডায়াফ্রাম ওয়াল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে গত ২৭ জানুয়ারি। সম্প্রতি ওই কাজ শেষ হয়েছে। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য মেট্রোর আধিকারিকদের সঙ্গে রাত জেগেছেন একাধিক দোকানের কর্মী এবং মালিকেরা।
মেট্রো সূত্রের খবর, ৮০ সেন্টিমিটার পুরু, ২.৫ মিটার প্রশস্ত এবং ১৭ মিটার গভীর একটি কংক্রিটের দেওয়াল মেশিনের সাহায্যে মাটির মধ্যে ঠেলে ঢোকানো হয়েছে। ওই কাজের জন্য কাছাকাছি থাকা প্রাচীন স্টিফেন হাউসের ভিতে যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করতেই গ্রাউটিং করা হচ্ছে। ওই প্রক্রিয়ায় সিমেন্ট, বালি, বেন্টোনাইট-সহ বিভিন্ন রাসায়নিকের তরল মিশ্রণ পাম্পের সাহায্যে চাপ দিয়ে পাইপে করে ভিতের নীচে পাঠানো হচ্ছে। বাড়ির মেঝেতে প্রায় আড়াই মিটার গর্ত করে পাইপের সাহায্যে আরও তিন মিটার গভীর পর্যন্ত ওই মিশ্রণ পাঠানো হচ্ছে।
স্টিফেন হাউসের নীচের তলায় একটি মোবাইলের দোকান, একটি ঐতিহ্যশালী বন্দুকের দোকান ছাড়াও পর পর বেশ কয়েকটি দোকানে ওই কাজ করা হয়েছে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণ সংস্থা সূত্রে খবর, ওই বাড়ির স্বাস্থ্যসমীক্ষার কাজ আগেই সম্পূর্ণ করা হয়েছে। সব দিক দেখেই যাবতীয় সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে বলে আধিকারিকদের দাবি। ইটের দেওয়ালে তৈরি পুরনো বাড়ির নীচের মাটি কোনও কারণে আলগা হয়ে সরে গেলে কাঠামো ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। তেমনটা যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই ভিতের নীচের মাটিতে কংক্রিটের তরল মিশ্রণ পাঠানো হচ্ছে।কী ভাবে হচ্ছে ওই কাজ?
ওই কাজের জন্য ৮০ সেন্টিমিটার পুরু, ২.৫ মিটার চওড়া, ১৭ মিটার গভীর ডায়াফ্রাম ওয়াল বসানোর কাজ শেষ হয়েছে কয়েক দিন আগে। প্রাচীন ভবন স্টিফেন হাউসের নীচে নরম মাটির আচমকা বসে যাওয়া ঠেকাতে মেঝে ফুটো করে প্রায় আড়াই মিটার গভীর ভিত ছাড়িয়ে আরও ৩ মিটার গভীরতা পর্যন্ত কংক্রিট, বেন্টোনাইট এবং বিভিন্ন রাসায়নিকের তরল মিশ্রণ পাঠানো হচ্ছে মাটির নীচে।
স্টিফেন হাউসে একটি বেসরকারি সংস্থার ওষুধের দোকান রয়েছে। দোকানের মালিক নাসরিন পারভিন জানান, তাঁর দোকানের টালি ফুটো করে কমবেশি ২০টি জায়গা দিয়ে কংক্রিটের মিশ্রণ ঢালা হয়েছে। রাতভর দোকান খোলা রেখে ওই কাজ চলেছে। মেট্রোর আধিকারিকেরা দোকান কর্মীদের খাবার দেওয়ার ব্যবস্থাও করেন। তাঁর কথায়, ‘‘লক্ষ, লক্ষ টাকার জিনিস দোকানে। বাড়ি ভেঙে পড়লে কোথায় যাব? তাই মেট্রোর কাজে আপত্তি করিনি। সারা রাত কাজ চলেছে।’’
বৈদ্যুতিন সামগ্রীর ব্যবসায়ী প্রবীরকুমার সাহা জানান, তাঁর দোকানেও দু’-এক দিনের মধ্যেই কাজ শুরু হতে পারে। মেট্রোর বিজ্ঞপ্তি তাঁর কাছেও পৌঁছেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্মাণ সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ব্রেবোর্ন রোডে সুড়ঙ্গ তৈরির সময়েও একই রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এ বারও বিপত্তি এড়াতে সব রকম সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।’’