ফুটনানি চেম্বার। ফাইল চিত্র।
নিউ মার্কেটের পুরনো কমপ্লেক্সের (হগ মার্কেট) পাশাপাশি শতাব্দীপ্রাচীন ফুটনানি চেম্বারের সংস্কার কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়ে কলকাতা পুরসভায় পর্যায়ক্রমে আলোচনা চলছে। পুরসভার তরফে সংস্কারে নিযুক্ত পরামর্শদাতা দলের পরিদর্শন রিপোর্টে তার মধ্যেই উঠে এসেছে উদ্বেগজনক তথ্য। তা হল, ফুটনানি চেম্বারের এসএন ব্যানার্জি রোডের দিকের একাংশ বসে গিয়েছে। এমনিতে ওই ভবনের একাধিক জায়গায় বড় ফাটল আছেই, কিন্তু ভিত বসে যাওয়াটা বিশেষজ্ঞদের চিন্তা বাড়িয়েছে।
পরামর্শদাতা হিসাবে নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের ভিজ়িটিং অধ্যাপক বিশ্বজিৎ সোম বলছেন, ‘‘মূল ভবনের এক দিক বসে গিয়েছে। সেই প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে, না কি কোনও এক সময়ে বসে গিয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার।’’ ভবনের এক দিক বসে যাওয়ার কারণগুলির অন্যতম হচ্ছে, ভিতরে নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে নির্মাণ।
বিশেষজ্ঞ দলের প্রাথমিক হিসাব বলছে, ভিতের ভার বহনের ক্ষমতার তুলনায় কমপক্ষে ২৫-৩০ হাজার বর্গফুট অতিরিক্ত নির্মাণ করা হয়েছে ওই ভবনে। ফলে পুরনো কাঠামো ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞ দলের অন্য সদস্য, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের অধ্যাপক গোকুল মণ্ডল বলছেন, ‘‘বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কোনও কাঠামোর ভার বহনের ক্ষমতা কমে। ফলে অতিরিক্ত কোনও নির্মাণে বাড়তি সতর্ক থাকতে হয়। ফুটনানি চেম্বারের ক্ষেত্রে বিপরীত ঘটনা ঘটেছে। ইচ্ছে মতো কাঠামো গড়ে ভিতের উপরে অতিরিক্ত ভার চাপানো হয়েছে।’’
তথ্য জানাচ্ছে, ফুটনানি চেম্বারের সব তলের মোট পরিমাণ প্রায় দেড় লক্ষ বর্গফুট। মেঝের ‘এরিয়া’ হল প্রায় ৪০ হাজার বর্গফুট। সেই হিসাবে ফুটনানি ভবনের যে ক’টি তল রয়েছে, তার মোট এলাকা হওয়ার কথা ছিল ১.২ লক্ষ বর্গফুট। হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তার থেকেও প্রায় ৩০ হাজার বর্গফুট অতিরিক্ত রয়েছে। বিশ্বজিৎবাবুর কথায়, “অতিরিক্ত এই চাপ ভিতে পড়াটাই বসে যাওয়ার সঙ্গত কারণ।’’
ফুটনানি চেম্বারের মূল কাঠামো অক্ষত রেখে সংস্কার করা নিয়ে সংশয়ী বিশেষজ্ঞ দল। কাঠামোর যা অবস্থা, তাতে এই কাজ ঝুঁকির বলেই মনে করছে তারা। এমনকি, সংস্কারের জন্য জিনিসপত্র সরাতে গেলে তা-ও ওজনের ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে। গোকুলবাবুর কথায়, ‘‘সমস্যা হল ফুটনানি চেম্বার খালি করে সংস্কার করাও মুশকিল। কারণ, বেশির ভাগ লোকই সরতে চাইছেন না।’’
প্রসঙ্গত, পুর নথির উল্লেখ করে পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ১৯১০-’১১ সালে ‘হিন্দুস্থান কোম্পানি ইনশিয়োরেন্স’ নামে একটি সংস্থাকে ৯৯ বছরের জন্য ফুটনানি চেম্বার লিজ়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন পুর কর্তৃপক্ষ। সেই মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও অন্য একটি সংস্থা নিজেদের ‘সাব লিজ় হোল্ডার’ হিসাবে দাবি করে ভবনটি দখলে রেখেছিল। ২০১৮ সালে আদালতের রায়ে ভবনটি পুরসভার দখলে আসে। পুরসভার এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘ওই ভবনে আবাসিক, রেস্তরাঁ, দোকানপাট-সহ ১৮০ জনের মতো ভাড়াটে আছেন। সবাই বেআইনি দখলদার। কারণ, তাঁদের যে সংস্থা ভাড়া দিয়েছিল, তারা আইনি লড়াইয়ে হেরে গিয়েছে। তা ছাড়া ২০০৯ সালেই লিজ়ের মেয়াদ শেষ হয়েছে।’’
ফলে বেআইনি দখলদার সরানোর পাশাপাশি সংস্কার কী ভাবে করা হবে, তা-ও এখন চিন্তার বিষয়!