প্রশাসনিক কর্তাদের চিন্তার তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে শহরের বিপজ্জনক বাড়িগুলি। প্রতীকী ছবি।
মে মাস এলেই কি ঘূর্ণিঝড়ের ভয় তৈরি হয়? চিন্তা বাড়ে শহরের পুরনো এবং বিপজ্জনক বাড়িগুলি নিয়ে?
গত চার বছরে মে মাসে চারটি বড় মাপের ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। তার মধ্যে আমপান এবং ইয়াস আছড়ে পড়েছিল এ রাজ্যে। সেই অভিজ্ঞতা মনে রেখে এ বারও ঘূর্ণিঝড় নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে মে মাস পড়তে না পড়তেই। মৌসম ভবন জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত দানা বেঁধেছে। আজ, সোমবার সেটি নিম্নচাপে এবং কাল, মঙ্গলবার গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। তার পরে জন্ম নেবে ঘূর্ণিঝড়। তবে তা কোথায় আছড়ে পড়বে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু পুরনো অভিজ্ঞতা মনে রেখে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে প্রশাসনিক স্তরে। সূত্রের খবর, প্রশাসনিক কর্তাদের চিন্তার তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে শহরের বিপজ্জনক বাড়িগুলি। যা নিয়ে বিরক্ত এক পুরকর্তা বললেন, ‘‘পুরনো বাড়ি আঁকড়ে থাকার রোগ কিছুতেই সারে না। বার বার আইন পাল্টেও লাভ হয় না।’’
কেন্দ্রীয় ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, ভূমিকম্প হলে কলকাতার ৪০ শতাংশ বাড়িরই বিপদ ঘটতে পারে। ঘূর্ণিঝড়েও বিপদ কম নয়। কলকাতায় এই মুহূর্তে প্রায় সাড়ে চার হাজার বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় তো বটেই, বৃষ্টিতেই সেগুলি ভেঙে বিপদ ঘটতে পারে বলে পুরকর্তাদের আশঙ্কা। ‘বিপর্যয় মোকাবিলা আইন, ২০০৫’ অনুযায়ী, প্রতিটি জেলা কর্তৃপক্ষকে বিপর্যয় মোকাবিলার রূপরেখা তৈরি করতে হয়। কলকাতার ক্ষেত্রে সেই দায়িত্ব পুরসভার। সেই রিপোর্টেই নতুন করে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পুরকর্তাদের কপালে।
এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘পুরনো বাড়ির ক্ষেত্রে গুরুতর বিপদ আঁচ করে বছর সাতেক আগেই পুর আইন সংশোধন করে তৈরি হয় ৪১২(এ) ধারা। যাতে বলা হয়, বিপজ্জনক বাড়ি ঘোষণা করে পাঠানো নোটিসকে ‘কনডেমড’ নোটিস বলে ধরা হবে। মালিককে সেই বাড়ি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হবে। তার জন্য ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিয়ো’য় (এফএআর) ছাড় পাবেন তিনি। মালিক ওই কাজ করতে না পারলে সংস্থা লাগিয়ে করাবে পুরসভাই। কিন্তু খরচ বহন করবে মালিকপক্ষ। এত কিছু সত্ত্বেও লাভ হয়নি।’’ পুরনো বাড়ি আঁকড়ে থাকা লোকজনের দাবি, ‘‘বললেই তো আর বসবাসের অযোগ্য (কনডেমড) করে দেওয়া যায় না। বাড়ির মালিককে সুযোগ দিতে হয়। শুনানি করতে হয়।’’ এইপরিপ্রেক্ষিতে ৪১২(এ) ধারার সংশোধনী আনার তোড়জোড় শুরু করেছে পুর প্রশাসন। সংশোধনী প্রস্তাব পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়েছে। ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে পুরনো বাড়ি সংস্কারেরও ভাবনাচিন্তা চলছে বলে খবর।
বছরকয়েক আগে একটি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে। সেই বাড়িটিতে এখনও বেশ কয়েকটি পরিবারের বাস। ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হলে তাঁদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যান পুরপ্রতিনিধিরা। কিন্তু বৃষ্টি কমলেই ফের পুরনো আস্তানায়। তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘বাংলার বাড়ি প্রকল্পে সংস্কার করা মানে তো, বাড়িগুলি সরকার অধিগ্রহণ করবে। বর্তমান বাজারদরের নিরিখে জমি ও বাড়ির দাম দিতে হবে সরকারকে। না হলে আদালতে যাব।’’ পুরনো বাড়ি ভেঙে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিটেও। সেখানকার এক বাসিন্দার প্রশ্ন, ‘‘সরকার বাড়ি সারালে পরে যখন সংস্কারের প্রয়োজন পড়বে, তখন কী হবে?’’
আমহার্স্ট স্ট্রিটে আবার বটগাছের শিকড় ঢুকে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছে একটি বাড়িতে। সেটির মালিক নিমাই সাঁতরা ভাঙা সিঁড়ি দিয়ে কোনও মতে নেমে বললেন, ‘‘সিঁড়িতে পা ফেললেই কাঁপে। কিন্তু ভাড়াটেদের চাপে কিছুই করা যাচ্ছে না। বাড়ি ভাড়া আইনের সংশোধনী নিয়ে ভাবুক সরকার। তা হলে পুরনো, বিপজ্জনক বাড়ির বিপদ এমনিই কেটে যাবে।’’