পুর আইনে নিষিদ্ধ, তবু বন্ধ হয়নি কুয়ো

কলকাতা পুর এলাকায় কুয়ো খনন করে জল তোলা নিষিদ্ধ। অথচ শহরের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষত সংযুক্ত এলাকায় অবাধে পাতকুয়োর ব্যবহার চলছে।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:২০
Share:

এই পাতকুয়োতেই পড়ে গিয়েছিলেন সম্রাট। নিজস্ব চিত্র

কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে তবেই টনক নড়ে পুর কর্তৃপক্ষের। তা-ও মাত্র কিছু দিনের জন্য। তার পরে আবার যে কে সে-ই! শুক্রবার দুপুরে বাঁশদ্রোণী এলাকায় পাতকুয়োয় পড়ে গিয়ে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে সেটাই আবার দেখিয়ে দিল।

Advertisement

বছর সাতেক আগে হাওড়ার লিলুয়ায় এক কিশোর পাতকুয়োয় পড়ে যাওয়ার পরে কলকাতার তৎকালীন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, শহরের কোথায় কোথায় পাতকুয়ো রয়েছে, তার তালিকা তৈরি করা হবে। কিন্তু পুরসভা সূত্রের খবর, আজ পর্যন্ত সেই তালিকা তৈরি হয়নি।

কলকাতা পুর এলাকায় কুয়ো খনন করে জল তোলা নিষিদ্ধ। অথচ শহরের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষত সংযুক্ত এলাকায় অবাধে পাতকুয়োর ব্যবহার চলছে। শনিবার সকালে বাঁশদ্রোণীর ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, পাশের বাড়িতেই রয়েছে আর একটি কুয়ো। এলাকাবাসীরা জানালেন, সেখানে পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। সেই কারণেই প্রায় ঘরে ঘরে পাতকুয়ো রয়েছে। ১৯৮০ সালে আইন করে শহরে পাতকুয়োর ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কলকাতা পুরসভা। শুক্রবার যে পাতকুয়োয় পড়ে সম্রাট সরকার নামে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে, সেটি বছর দশেক আগে তৈরি। ওই বাড়িতে বছর চারেক আগে পরিবার নিয়ে ভাড়াটে হিসেবে এসেছিলেন সম্রাটের মা লক্ষ্মী সরকার।

Advertisement

শহরে পাতকুয়ো অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও কুয়ো খনন করিয়েছেন কেন? প্রশ্ন শুনে বাড়ির মালিক বাপি দাস বললেন, ‘‘এখানে জলের খুব সমস্যা। তাই বাধ্য হয়ে কুয়ো খুঁড়িয়েছি।’’ এলাকায় পাতকুয়ো আছে জেনেও পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নেয় না কেন? কলকাতা পুরসভার ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর গোপাল রায়ের সাফাই, ‘‘এই ওয়ার্ডে আমি কাউন্সিলর হয়ে আসার আগেই কুয়ো তৈরি হয়েছে।’’ ওই ওয়ার্ডের পূর্বতন কাউন্সিলর তথা ১১২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর অনিতা কর মজুমদারের কথায়, ‘‘এই এলাকায় পানীয় জলের পাইপ পৌঁছয়নি। তাই মানুষ বাধ্য হয়েই পাতকুয়োর জল ব্যবহার করেন।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, বহু আগে এক সময়ে মূল কলকাতা শহরে ওয়ার্ড ছিল ৭৫টি। তখনই পুরসভার পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ শুরু হওয়ায় শহরে পাতকুয়োর ব্যবহার কমে গিয়েছিল। পরে যাদবপুর, বেহালা, গার্ডেনরিচ ও জোকার মতো এলাকা কলকাতা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সমস্যা বাড়ে। পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বর্তমানে সংযুক্ত এলাকাতেই পাতকুয়োর ব্যবহার বেশি। তবে এই মুহূর্তে কতগুলি পাতকুয়ো রয়েছে, তার হিসেব নেই পুরসভার কাছে।

পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘পুর আইন অনুযায়ী, পুরসভা শহরে কোনও কুয়ো খোঁড়ার অনুমতি দেয় না। কুয়ো খোঁড়া হয়েছে জানলে পুরসভা তা বুজিয়ে দিতে পারে।’’ অভিযোগ, শহরের অধিকাংশ কুয়োতেই ঢাকনা নেই। ফলে খোলা কুয়োয় পড়ে গিয়ে অঘটনের আশঙ্কা থেকেই যায়। পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বাঁশদ্রোণীর ওই কুয়োয় ঢাকনা থাকলে হয়তো এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।’’ পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের প্রাক্তন ডিজি বিভাস মাইতির কথায়, ‘‘কুয়োর জলে প্রচুর পরিমাণে কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া থাকে। ওই জল খেয়ে পেটের রোগ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।’’

পাতকুয়ো যাঁরা খনন করাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কেন? এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। জবাব দেননি মেসেজের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement