flyover

দুর্ঘটনার ভীতি উড়িয়েই উড়ালপুলে  অবাধে ফোনালাপ

সোমবারই ওই উড়ালপুল থেকে গাড়ির ধাক্কায় ছিটকে নীচে পড়ে মৃত্যু হয় এক স্কুটিচালকের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৭:১৮
Share:

বিপদ: দুর্ঘটনার পরেও হুঁশ ফেরেনি। গার্ডেনরিচ উড়ালপুলে মোটরবাইক থামিয়ে মোবাইলে চোখ আরোহীর। ছবি: রণজিৎ নন্দী

দুর্ঘটনার পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। মা উড়ালপুলে ফিরে এসেছে নিয়ম না মানার পুরনো ছবি।

Advertisement

সোমবারই ওই উড়ালপুল থেকে গাড়ির ধাক্কায় ছিটকে নীচে পড়ে মৃত্যু হয় এক স্কুটিচালকের। উড়ালপুলের উপরে নিয়ম না মেনেই তিনি স্কুটি দাঁড় করিয়ে ফোনে কথা বলছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বান্ধবীও। গাড়ির ধাক্কায় তিনিও জখম হন।

মঙ্গলবার ওই উড়ালপুলেই দেখা গেল লোকজনের যেন কোনও হেলদোলই নেই। উড়ালপুলের পাঁচিলের গা ঘেঁষে বাইক দাঁড় করিয়ে মোবাইল ঘাঁটছেন কেউ। কেউ আবার ফোনে কথা বলছেন। কেউ আবার বাইক চালানোর সময়ে হেলমেটের মধ্যেই ফোন গুঁজে কথা বলছেন। আবার একাধিক বাইকচালককে দেখা গেল নিয়ম বহির্ভূত ভাবে গাড়ির বাঁ দিক দিয়ে ওভারটেক করে বেরোনোর চেষ্টা করছেন।

Advertisement

কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের এক কর্তার কথায় ‘‘সরকারি তরফে যতই প্রচার চালানো হোক, মানুষ নিজে সচেতন না হলে কিছুই
হবে না।’’ যদিও মা উড়ালপুলেই দেখা গেল যে গাড়ির গতি নির্দেশিকা বোর্ড খারাপ হয়ে রয়েছে।

তবে সোমবারের ওই দুর্ঘটনার পরে মঙ্গলবার মা উড়ালপুলের উপরে নজরদারি বাড়িয়েছে লালবাজার। নেওয়া হয়েছে উড়ালপুলে অহেতুক বাইক দাঁড় করিয়ে রাখা কিংবা অকারণ ওভারটেক করার প্রবণতা ঠেকানোর পুলিশি ব্যবস্থাও।

লালবাজার সূত্রের খবর, ওই উড়ালপুলে নিয়ম মেনে গাড়ি চালানো সংক্রান্ত প্রচারের পাশাপাশি, সেখানে ট্র্যাফিক পুলিশের নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ মা উড়ালপুলের উপরে গাড়িচালকদের সতর্ক করতে উড়ালপুলের উপরে ফ্লেক্স এবং হোর্ডিং লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চালকদের সচেতন করতে কয়েক মিটার অন্তর ওই সব ফ্লেক্স লাগানো থাকবে। উড়ালপুলে গাড়ি দাঁড় করালে, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালালে কিংবা ওভারটেক করলে কী কী বিপদের আশঙ্কা রয়েছে, তা-ও ফ্লেক্সে লেখা থাকবে।

ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, মা উড়ালপুলের যান নিয়ন্ত্রণ করে মূলত তিলজলা এবং ইস্ট ট্র্যাফিক গার্ড। মঙ্গলবার থেকে দু’টি ট্র্যাফিক গার্ডই উড়ালপুলের উপরে নজরদারি বাড়িয়েছে। এক পুলিশকর্তা জানান, সমগ্র উড়ালপুলের উপরে দুই আধিকারিক-সহ প্রায় আট জন পুলিশকর্মী এ বার থেকে নজরদারিতে থাকবেন। পুলিশকর্মী কিংবা অফিসার উড়ালপুলের উপর থেকেই চালকদের গতি নিয়ন্ত্রণ করবেন।

তদন্তকারীরা জানান, সোমবারের দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত গাড়ির চালক ফাহিম হালদার হাওড়ার সাঁকরাইলের বাসিন্দা। মা এবং ভাইকে নিয়ে তিনি সায়েন্স সিটি দেখাতে গিয়েছিলেন। প্রথমে তাঁরা ভুল করে উড়ালপুলে উঠে চিংড়িঘাটার দিকে চলে যান। সেখান থেকেও ফের তাঁরা ভুল করে নীচের রাস্তার বদলে উড়ালপুলে উঠে পড়েছিলেন বলে অভিযুক্ত চালক পুলিশকে জানিয়েছেন। সোমবার দুর্ঘটনার পরে ফাহিমকে প্রথমে আটক করলেও রাতে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশের দাবি, ধৃত যুবক তাঁর সামনে অন্য একটি সাদা গাড়ি ছিল বলে জানান। সেই গাড়িটি শেষ মুহূর্তে ডান দিকে কেটে বেরিয়ে যাওয়ায়
এবং তাঁর ডান দিকে অন্য একটি গাড়ি থাকায় তিনি স্কুটিটিকে পুরোপুরি কাটাতে পারেনি। ধৃতের দাবি, তাঁর গাড়ির বাঁ দিকের হেডলাইটের অংশটি ধাক্কা মারে স্কুটিটিকে। পুলিশ বক্তব্য খতিয়ে দেখছে।

অভিযুক্ত গাড়ির চালক মা উড়ালপুলে ওই দিনই প্রথম উঠেছিলেন গাড়ি নিয়ে। লালবাজারের এক কর্তা জানান, নতুন কেউ উড়ালপুলে গাড়ি চালালে তাঁর পক্ষে সেখানকার কাটআউট বা দিক-নির্দেশ আগে থেকে জানা সম্ভব নয়। যা ওই চালকের ক্ষেত্রে হয়েছিল। তাই কেএমডিএকে বলা হয়েছে মা এবং এ জে সি বসু রোড উড়ালপুলের সংযোগস্থল কিংবা উড়ালপুলের কোন লেন কোন দিকে যাচ্ছে তা চালকদের আগাম জানানোর জন্য কিছু দিক-নির্দেশকারী সাইনেজ বোর্ড দ্রুত লাগাতে। এ ছাড়া রেলিংয়ের উচ্চতা বৃদ্ধি না করে অন্য কিছু করা যায় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লালবাজার জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ওই উড়ালপুলে উপর থেকে নীচে পড়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা ঠেকাতে সব রকম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেএমডিএ-র সঙ্গে আলোচনাতেও বসবে পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement