ঘরে ঘরে কুটির শিল্পের মতো গজিয়ে ওঠা বেআইনি বাজি ব্যবসায় এলাকারই নাবালক ছেলেমেয়েদের কাজে লাগানো হয়। প্রতীকী ছবি।
বাজি তৈরির ব্যবসায় যেন কোনও ভাবেই বাচ্চা ছেলেমেয়েদের যুক্ত করা না হয়। ১৮ বছর বয়সি প্রাপ্তবয়স্কদেরই যাতে ওই কাজে যুক্ত করা হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। শুক্রবার বাজি প্রস্তুতকারক সংগঠনের কাছে এমনই আর্জি জানিয়েছেন রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, যথাযথ ছাড়পত্র ছাড়া বাজি তৈরি না করার পাশাপাশি, বাচ্চা ছেলেমেয়েদের বাজি তৈরির কাজে লাগানো বন্ধের জন্য বাজি প্রস্তুতকারক সংগঠনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। পরিবেশমন্ত্রীর কথায়, ‘‘তাদের বলেছি, বাচ্চাদের নয়, প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের বাজি তৈরির কাজে লাগানো হোক। এই দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে।’’
প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেই মহেশতলার পুটখালি মণ্ডলপাড়ার এক অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। যার জেরে মৃত্যু হয়েছিল ওই কারখানার মালিকের স্ত্রী, ছেলে এবং এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কিশোরীর। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গিয়েছিল, কী ভাবে মহেশতলা-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘরে ঘরে কুটির শিল্পের মতো গজিয়ে ওঠা বেআইনি বাজি ব্যবসায় এলাকারই নাবালক ছেলেমেয়েদের কাজে লাগানো হয়।
এ দিন রাজ্য পরিবেশ দফতর, দমকল দফতর, জাতীয় পরিবেশ প্রকৌশল গবেষণা কেন্দ্র (ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট), জেলা প্রশাসন-সহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকের মূল নির্যাস ছিল, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে সবুজ বাজি তৈরির একটি নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করা। কারণ, সবুজ বাজি ছাড়া অন্য যে কোনও ধরনের বাজি তৈরিই নিষিদ্ধ। এ বার বাজি ব্যবসায় বহু মানুষ যুক্ত থাকার কারণে, তা করতে গেলে কী ভাবে আবেদন করতে হবে, কোন কোন নিয়ম মানা জরুরি, সে বিষয়ে একটি স্পষ্ট দিক-নির্দেশিকার প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে এ দিনের বৈঠকে। পরশু, সোমবার থেকেই এ বিষয়ে সরকারি স্তরে আলোচনা শুরু হবে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
এ দিনের বৈঠকে রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুও উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘বাজির ব্যবসা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে করার কথা বলা হয়েছে। সব দিক থেকে এ দিনের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে।’’
বৈঠকে এ-ও ঠিক হয়েছে, সবুজ বাজি তৈরির জন্য মূলত দক্ষিণ ২৪ পরগনাকে কেন্দ্র করে একটি ‘ক্লাস্টার’ তৈরি করা হবে। পরিবেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহু দিন আগেই নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশ মেনেই ঠিক হয়েছে, রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের সহযোগিতায় ও উদ্যোগে ওই ‘ক্লাস্টার’ তৈরি হবে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ‘নিরি’র তরফে কলকাতায় একটি নতুন পরীক্ষাগার তৈরির পরিকল্পনার কথাও বলা হয়েছে। সেখানেই বাজি সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে। তার জন্য আর রাজ্যের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।