েবহাল: কচুরিপানায় ভর্তি সাঁতরাগাছি ঝিল। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম আশ্রয়স্থল সাঁতরাগাছি ঝিল বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত উদ্যোগী হল রাজ্যের পরিবেশ দফতর। সম্প্রতি ওই দফতরের বায়ো-ডাইভার্সিটি বোর্ড জরুরি বৈঠক ডেকে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটিকে ঝিল নিয়ে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বছরও অবশ্য সময় মতো ঝিলটির সংস্কার না হওয়ায় এবং পরিবেশের উন্নতি না হওয়ায় বেশি সংখ্যায় পরিযায়ী পাখি আসবে না বলে আশঙ্কা করছেন পক্ষীপ্রেমীরা।
হাওড়া বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁতরাগাছি ঝিলের উন্নয়ন নিয়ে পরিবেশ ভবনে হওয়া ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বন দফতর, পরিবেশ দফতর, হাওড়া পুরসভা, কয়েক জন পরিবেশপ্রেমী এবং কিছু বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা। ওই বৈঠকে প্রত্যেক দফতরকে আলাদা আলাদা দায়িত্ব দেওয়া হয় যাতে আগামী দিনে প্রচুর সংখ্যায় পরিযায়ী পাখি ঝিলে আসে। জায়গাটি সাধারণ মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে দফতরগুলিকে।
শুক্রবার হাওড়ার ডিএফও সোমনাথ সরকার বলেন, ‘‘কমিটিকে দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন দফতরকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হবে। যাতে প্রতি বছরই ঝিলটিতে বেশি পাখি আসে।’’
সাঁতরাগাছি রেলওয়ে স্টেশনের পাশেই রয়েছে সাঁতরাগাছি ঝিল। প্রতি বছর নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান এবং উত্তর ভারতের নানা জায়গা থেকে বিভিন্ন পরিযায়ী পাখি আসে সেখানে। গাড়োয়াল, নর্দান শভেলার, নর্দান পিনটেল, গারগেনি, কটন পিগমি গুজ়, নব বিল্ড হাঁসের মতো পাখি এখানে নভেম্বর মাস থেকে আসতে শুরু করে। কিন্তু বহুতল বাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ঝিল ও আশপাশের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জেরে কয়েক বছর ধরেই কমেছে পাখির সংখ্যা।
এই ঝিলের মালিকানা দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হলেও, রাজ্য বন দফতর এই জায়গার দেখভাল করে। ঝিলটির কচুরিপানা পরিষ্কার থেকে নিকাশি ব্যবস্থার দেখভাল করে হাওড়া পুরসভা। কারণ এলাকার সমস্ত নিকাশি নালার সঙ্গে ওই ঝিলের যোগ আছে। কিন্তু পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে পুরসভা আর বন দফতরের টালবাহানার জেরে ঝিলের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে এ বছর ঝিলের কচুরিপানা অনেকটাই পরিষ্কার করা হয়েছে। জলের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে দ্বীপের আদলে পাখিদের অস্থায়ী বাসস্থান। তা সত্ত্বেও এ বছর কত পাখি আসবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এলাকার বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা সুদর্শন দাস বলেন, ‘‘প্রশাসন এ বছর যে উদ্যোগ নিয়েছে তা খুবই ভাল। তবে ঝিল সাফাইয়ের কাজ পুজোর আগে শুরু করলে আরও ভাল হতো।’’ এলাকা পরিষ্কার রাখতে হাওড়া সিটি পুলিশও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে জানিয়েছেন এলাকার পক্ষীপ্রেমী মানুষ।
হাওড়ার পুর কমিশনার তথা পুর প্রশাসক বিজিন কৃষ্ণ বলেন, “বৈঠকে প্রত্যেক সংস্থাকে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। হাওড়া পুরসভাকে কর্মী সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা সেই কাজ করেছি। এর পরের বৈঠক হবে ১ ডিসেম্বর।’’