প্রতীকী চিত্র
গত এক দশকে ভারতে বাল্যবিবাহের হার কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। ইউনিসেফের একটি রিপোর্ট বলছে, ২০০৫-০৬ সালে ভারতে বাল্যবিবাহের হার ছিল ৪৭ শতাংশ। ২০১৫-১৬ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২৭ শতাংশে। পরিসংখ্যানের নিরিখে অবস্থার উন্নতি হলেও বাস্তব চিত্রটা ঠিক কেমন? মঙ্গলবার শহরে বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত এক আলোচনাসভায় উঠে এল এই প্রশ্নই।বাল্যবিবাহ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং সহায়তাকারীদের মতে, আইনি পথে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিয়ের বয়সটুকু পিছোনো সম্ভব হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু অনেক সময়ে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিকগুলি এড়ানো যাচ্ছে না। কিশোরীদের জীবনযাত্রার মানেরও উন্নতি ঘটছে না অধিকাংশ ক্ষেত্রে।
এ দিনের আলোচনাসভার অন্যতম উদ্যোক্তা পার্টনারস ফর ল’ ইন ডেভেলপমেন্ট-এর এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর, আইনজীবী মধু মেহরা জানাচ্ছেন, আইনি পথে বাল্যবিবাহ আটকাতে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কিছু দিন পরে গোপনে অথবা মেয়ের বয়স আঠারো পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্বেচ্ছায় পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করাও বাল্যবিবাহের অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। বাড়ি থেকে সম্পর্কের কথা জেনে ফেলা, অপছন্দের কারও সঙ্গে বিয়ে এড়াতে বা বাড়ির প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে বেরোনোর পথ হিসেবে বিয়েকে বেছে নিচ্ছে বহু কিশোরী। আর্থিক ভাবে দুর্বল পরিবার থেকে আসা এই কিশোরীরা প্রায় সকলেই স্কুলছুট।
বাড়ির চাপে বা স্বেচ্ছায় পালিয়ে বিয়ে— দু’ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে অল্প বয়সে বিয়ে হওয়া ওই কিশোরীদের কাছে জীবিকা অর্জনের পথও খোলা থাকছে না। ফলে বিয়ের পরে লিঙ্গ বৈষম্য, গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হচ্ছে তারা। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও থাকে না তাদের। শিক্ষার অভাব, অপুষ্টি, দারিদ্র্যের মতো সমস্যা তাড়া করে পরবর্তী প্রজন্মকেও।
তা হলে উপায়? সভার মতে, বাল্যবিবাহের মতো জটিল ও বহুস্তরীয় আর্থ-সামাজিক বিষয়ের কোনও নির্দিষ্ট সমাধান নেই। তবে মেয়েদের স্বনির্ভর করে তুলে বাল্যবিবাহ আটকানো যেতে পারে। দরিদ্র পরিবারে মেয়েদের শিক্ষার দিকে নজর থাকে কম। যেটুকু পড়াশোনার সুযোগ পায়, তার সাহায্যে ভবিষ্যতে নিজের পায়ে দাঁড়িতে পারে না তারা। তাই বিয়ে ছাড়া আর কোনও উপায়ই থাকে না ওই কিশোরীদের কাছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বামীর উপরে পুরোপুরি ভাবে নির্ভরশীল হতে হয় তাদের। মধুর মতে, ‘‘শুধু আইনের উপরে ভরসা না করে তাই কিশোরীদের স্বনির্ভর করে তোলার চেষ্টা করতে হবে। জীবনধারণের জন্য বিয়ের বিকল্প পথ দেখাতে পারলে বাল্যবিবাহ অনেকটাই কমানো যাবে।’’
এ দিনের আলোচনায় আরও উঠে আসে, বাল্যবিবাহ রোধে আইনি পথ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শাস্তিমূলক। সে ক্ষেত্রে অল্প বয়সে বিয়ের হার হয়তো কমছে, কিন্তু কিশোরীদের সামনে কোনও বিকল্প রাস্তা তৈরি হচ্ছে না। এখনও কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের উপস্থিতির হারের নিরিখে ভারতের স্থান নীচের দিকে। এই পরিস্থিতির বদল ঘটাতে মেয়েদের কাজের সুযোগ বাড়ানো দরকার। প্রয়োজন বিয়ে নিয়ে সামগ্রিক ভাবনার বদলেরও। আর এ জন্য সামাজিক স্তরে সচেতনতা তৈরির উপরেই জোর দেওয়া হয় সভায়।