রাস্তার উপরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে গাড়ির ভাঙা কাচের টুকরো। কাছেই পড়ে আছেন গাড়ির সংজ্ঞাহীন, রক্তাক্ত চালক। সেই দৃশ্য দেখে থরথর করে কাঁপছেন এ রাজ্যে গবেষণার কাজে আসা এক বিদেশি বিজ্ঞানী। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে তাঁকে দ্রুত সরিয়ে না নিয়ে গেলে কী হত, তা ভেবেই শিউরে উঠছেন ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস’ (নাইসেড)-এর কর্মীরা।
টাইফয়েড নিয়ে কাজ করতে গত সপ্তাহে দেশের প্রথম সারির গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাইসেডে আসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সিজল কেসি। এ দিন সকালে তপসিয়া, পার্ক সার্কাস অঞ্চলে নাইসেডের তিন কর্মীর সঙ্গে ফিল্ড ভিজিটে গিয়েছিলেন তিনি। কাজ সেরে ফিরতে তাঁদের বেলা হয়ে যায়। পুলিশ সূত্রের খবর, বেলা ১২টা নাগাদ বেলেঘাটার জন্মেজয় রোডে একটি কুকুরকে ধাক্কা মারে নাইসেডের গাড়িটি। কুকুরটি গুরুতর জখম হয়েছে বুঝতে পেরে গাড়ি থামিয়ে সকলেই নেমে আসেন। কুকুরটির শুশ্রূষা করার মধ্যেই একটি গলি থেকে কয়েক জন যুবক বেরিয়ে আসে। তাদের সঙ্গে চালক বিশ্বজিৎ দাসের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যে তা গড়ায় হাতাহাতিতে।
ভাড়া নেওয়া ওই গাড়িটির চালককে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন নাইসেডের কর্মী শুভঙ্কর মণ্ডল, সোমনাথ সরকারেরা। গাড়ির মধ্যেই তখন বসে ছিলেন অতিথি বিজ্ঞানী। কিন্তু গাড়ির কাচে পরপর ইট পড়তে শুরু করায় তিনি ভীত, সন্ত্রস্ত হয়ে নেমে পড়েন। গন্ডগোলে তিনিও ধাক্কাধাক্কির শিকার হন বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থল থেকে নাইসেডের কার্যালয়ের দূরত্ব খুব বেশি নয়। অফিসের এক কর্মীকে ফোনে বিষয়টি জানান শুভঙ্করবাবু।
সেই ফোন পেয়ে নাইসেডের অন্য কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে সিজলকে উদ্ধার করেন। তড়িঘড়ি বিশ্বজিৎকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আপাতত ফুলবাগান থানার অন্তর্গত একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। নাইসেডের এক কর্মীর কথায়, ‘‘রাস্তায় উপুড় হয়ে বিশ্বজিৎ সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে ছিলেন। সারা মুখে রক্ত। সাহেব কাঁপছিলেন। পুরো ঘটনায় উনি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছেন। এমন ঘটনা আর কখনও হবে না বলে আমরা আশ্বস্ত করেছি।’’ নাইসেডে প্রায়ই বিদেশি গবেষকেরা গবেষণার জন্য আসেন। পুরো ঘটনায় ভুল বার্তা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মারধরের ঘটনায় গাড়িচালক সিংপু ঘোষ অজ্ঞাতপরিচয় চার জনের বিরুদ্ধে বেলেঘাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। ডিসি (ইএসডি) দেবস্মিতা দাস বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ এ দিন রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। জখম কুকুরটি পরে মারা যায় বলে জানা গিয়েছে।