পরমাণু সংস্থায় ‘ভুয়ো’ নথিতে চাকরি চার বছর

যে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থায় বিনা অনুমতিতে বাইরের কারও গেট পেরিয়ে প্রবেশের অনুমতি নেই, যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই জোরদার যে ‘মাছি গলবার উপায় নেই’, সেখানেই ‘ভুয়ো’ নথি দেখিয়ে চার বছর ধরে এক ব্যক্তি কাজ করছিলেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৫ ০২:১৫
Share:

যে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থায় বিনা অনুমতিতে বাইরের কারও গেট পেরিয়ে প্রবেশের অনুমতি নেই, যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই জোরদার যে ‘মাছি গলবার উপায় নেই’, সেখানেই ‘ভুয়ো’ নথি দেখিয়ে চার বছর ধরে এক ব্যক্তি কাজ করছিলেন বলে অভিযোগ। দেশের পারমাণবিক বিজ্ঞান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার কাজ করা আণবিক শক্তি মন্ত্রকের অধীন সল্টলেকের ভেরিয়েব্‌ল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টারের এক কর্মীর বিরুদ্ধে এমনটাই অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি অবশ্য ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে কাজে যোগ দিয়েছিলেন বলে পুলিশের খবর। তবে পরমাণু গবেষণা সংস্থার মতো একটি কেন্দ্রীয় দফতরে এমন ঘটনা সমগ্র বিষয়টিকে উদ্বেগ ও প্রশ্নের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে।

সোমবার রাতে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার এক সিকিউরিটি অফিসার বিধাননগর উত্তর থানায় ভুয়ো নথি সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকালে দিগন্ত ডেকা (৪২) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে বিধাননগর পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ জানায়, ওই কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা অভিযোগে জানিয়েছে, সুপারভাইজার পদে কর্মরত দিগন্ত ডেকার পুলিশ ভেরিফিকেশন সংক্রান্ত তথ্য সঠিক নয়। ধৃতকে এ দিনই বিধাননগর আদালতে তোলা হলে ৬ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতির মামলা রুজু করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, চার বছর ধরে ওই কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থায় সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন অসমের বেলশর থানা এলাকার বাসিন্দা দিগন্ত ডেকা। সেখানে সম্প্রতি নথি পরীক্ষার সময়ে দিগন্তের জমা করা পুলিশ ভেরিফিকেশন সংক্রান্ত তথ্যে গোলমাল নজরে পড়ে। তার পরে সংস্থার তরফে অসম পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অসম পুলিশ সূত্রে সংস্থাকে জানানো হয়, দিগন্ত ডেকা নামে কোনও ব্যক্তির ভেরিফিকেশন সংক্রান্ত কোনও শংসাপত্র অসম পুলিশ দেয়নি।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জেনেছে, দিগন্ত অসমের বেলশর থানা এলাকার বাসিন্দা। তিনি গুয়াহাটির এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। সেই সূত্রেই ২০১১-র অক্টোবরে সল্টলেকের ওই সংস্থায় সুপারভাইজার হিসেবে কাজে যোগ দেন দিগন্ত।

বিধাননগরের এডিসিপি দেবাশিস ধর জানান, দিগন্তের নাম, ঠিকানা থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্য পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। কেন তিনি ওই ধরণের নথি দিয়ে পরমাণু গবেষণা নিয়ে কাজ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় কাজ করতে গেলেন, সে সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এর নেপথ্যে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।

এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, যে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থায় দেশের পারমাণবিক বিজ্ঞান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার কাজ হয়, সেখানে ‘ভুয়ো’ নথি ব্যবহার করে কোনও ব্যক্তি বছরের পর বছর কেমন করে কাজ করতে পারলেন? প্রশাসনিক স্তরে সেই নথি কী আগে কখনও পরীক্ষা করা হয়নি?

ওই কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার অধিকর্তা দীনেশ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তিকে ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়েছিল। তাঁর শংসাপত্র নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তখনই গরমিলের কথা জানা যায়। বাকিটা সবিস্তার খোঁজ নেওয়া হবে।’’

অসম পুলিশের এক কর্তা বি এম রাজাখোয়া বলেন, ‘‘ওই নামের কোনও ব্যক্তির পুলিশ ভেরিফিকেশনের শংসাপত্র দেওয়া হয়নি। তাই প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে ধৃত ব্যক্তি পুলিশ ভেরিফিকেশনের যে শংসাপত্র জমা করেছেন তা ঠিক নয়।’’

বিধাননগর পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, গুয়াহাটির যে বেসরকারি সংস্থা দিগন্তকে সল্টলেকে কেন্দ্রীয় সরকারি ওই সংস্থায় কাজে পাঠিয়েছে, তাঁদের থেকেও দিগন্ত সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। বিশেষত ওই কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থায় কী ভাবে ধৃত দিগন্তের নিয়োগ হয়েছিল? নিয়োগের সময়ের পুলিশ ভেরিফিকেশন সংক্রান্ত তথ্যও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানায় পুলিশ।

গুয়াহাটির ওই বেসরকারি সংস্থার এক আধিকারিক হৃষিকেশ শর্মার অবশ্য দাবি, দিগন্ত নলবাড়ি এলাকারই বাসিন্দা। তাঁর ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্যও ঠিক। তিনি গুয়াহাটির সংস্থায় দশ বছর কাজ করেছেন। যথেষ্ট বিশ্বস্তও। ওই আধিকারিকের দাবি, ‘‘কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। পুলিশ চাইলে দিগন্ত সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement