সেই জমি: হরিদেবপুরের এই জমি থেকেই উদ্ধার হয় ‘মেডিক্যাল বর্জ্য।’ ছবি: রণজিৎ নন্দী
দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুরে ১৪টি ভ্রূণ ও শিশুদেহ উদ্ধার হয়েছে বলে রটে যাওয়ায় রবিবার দুপুর থেকেই উত্তেজনা ছ়ড়ায়। কী ভাবে এত ভ্রূণ ও নবজাতকের দেহ ওখানে এল, সেই প্রশ্ন তো উঠছেই। সেই সঙ্গে হরিদেবপুর থানা এলাকার মুচিপাড়ায় ২১৪ নম্বর রাজা রামমোহন রায় রোডের ওই জমি (প্রায় ৭২ কাঠা) নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনাস্থলে হাজির হন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার, গোয়েন্দা-প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী। স্থানীয় কাউন্সিলর তো ছিলেনই।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, যত রহস্য ওই জমিতেই। তাঁদের অভিযোগ, সন্ধ্যা নামলেই ওই জমিতে অসামাজিক কাজকর্ম চলত। এলাকার মহিলারা এলাকাটা এড়িয়ে চলেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রাজা রামমোহন রায় রোডের ওই জমি একদা দেবোত্তর সম্পত্তি ছিল। বছর দশেক আগে একটি নির্মাণ সংস্থা জমিটি কিনে নেয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই বিশাল জমির মধ্যে একটি বড় পুকুর ছিল। খেলার মাঠও ছিল। কিন্তু সেই পুকুর এবং খেলার মাঠ বুজিয়ে দিয়ে নির্মাণকাজের তোড়জোড় চলছে। তাঁদের ক্ষোভ এই কারণেই। ওই এলাকা কলকাতা পুরসভার ১২২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এই ওয়ার্ডে একাধিক পুকুর ভরাট করে নির্মাণকাজ চালানো হয়েছে। রবিবার যেখানে ভ্রূণ ও শিশুদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানেও বড় পুকুর ছিল। সেটিও বোজানোর উদ্যোগ চলছে। প্রশাসনের কাছে আমাদের আবেদন, পুলিশ-পুরসভা সংশ্লিষ্ট নির্মাণ সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, ৭২ কাঠা জমির চতুর্দিক পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় বছর পাঁচেক আগে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘‘এত বড় এলাকায় কোনও সিসি ক্যামেরা নেই। সিসি ক্যামেরা থাকলে স্পষ্ট হয়ে যেত, রবিবারের ঘটনার মূলে কে বা কারা আছে।’’ বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, ওই জমিতে তিন জন নিরাপত্তারক্ষী কাজ করেন। তাঁদের নজর এড়িয়ে কে বা কারা কখন কী ভাবে এত ভ্রূণ ও শিশুদেহ ফেলে গেল, তারও তদন্ত দরকার।
ওই জমিতে একাধিক পুকুর কী ভাবে বোজানো হয়েছে বা হচ্ছে?
স্থানীয় কাউন্সিলর সোমা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নির্মাণ সংস্থা কলকাতা পুরসভার কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েই যাবতীয় কাজ করছে। তা ছাড়া কে কবে কোথায় কোন পুকুর ভরাট করছে, একা কাউন্সিলরের পক্ষে তার উপরে নজরদারি চালানো সম্ভব নয়।’’ আর মেয়র-পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার জানান, ওই এলাকা থেকে পুকুর ভরাটের কোনও অভিযোগই তাঁর কাছে পৌঁছয়নি। ‘‘অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। পুকুর ভরাট হয়েছে বাম আমলে। আমাদের আমলে কোনও পুকুর যে ভরাট করা যাবে না, তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছি,’’ বলেন স্বপনবাবু।
এ বিষয়ে একাধিক বার ফোন করা হলেও নির্মাণ সংস্থার কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এসএমএস করেও জবাব মেলেনি।