সরগরম: ইদের আগে কেনাকাটার ভিড়। রবিবার, নিউ মার্কেটে। ছবি: সুদীপ্ত ভোমিক
দুপুরে আঁধার করা মেঘের গর্জন শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন নিউ মার্কেটের চুড়ি ব্যবসায়ী সেলিনা হোসেন। গত বছর ইদের আগে শেষ রবিবারের দিনভর বৃষ্টি রীতিমতো ‘ভিলেন’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ব্যবসায়ী-ক্রেতাদের কাছে। তবে এ বারে পরিস্থিতি ততটা খারাপ হয়নি। রবিবারের দুপুরে মেঘ যতটা গর্জেছিল, তুলনায় ততটা বর্ষায়নি। ফলে ইদের বাজার করতে আসা ক্রেতা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা— নিরাশ হননি কেউই।
খুশির ইদের বাকি আর মাত্র চার-পাঁচ দিন। স্লগ ওভারে এখন জমজমাট শহরের ইদের বাজার। নিউ মার্কেট, পার্ক সার্কাস, জাকারিয়া স্ট্রিট, মল্লিকবাজার, খিদিরপুর, রাজাবাজার বা মেটিয়াবুরুজ— ভিড়ের ছবি সর্বত্র একই। এদিন দুপুরে অল্প বৃষ্টি হলেও বাজারের ভিড়ে তেমন কিছু ভাটা পড়েনি। নিউ মার্কেটের চুড়ির দোকানে ভিড় ছিল একই রকম। দোকানে ভি়ড়ের বাড়াবাড়ি দেখে বিরক্ত অষ্টাদশী চলে গেলেন অন্যত্র। একই হাল জুতোর দোকানেও। নিউ মার্কেটে একটি জুতোর দোকানের ভিড় উপচে এসে পড়েছে রাস্তায়। নতুন কেনা সালোয়ার কামিজের সঙ্গে চুড়ি ‘ম্যাচ’ করল কি না, তা পরখ করে দেখে নিলেন মৌলানা আজাদ কলেজের পড়ুয়া আসরফি-ফিরোজারা।
প্রতি বছরের মতো এ বারেও ইদের কেনাকাটা করতে নিউ মার্কেটে সপরিবারে এসেছিলেন ব্যারাকপুরের মনজুর ইলাহি। সন্ধ্যার আজান হতে তখনও আধ ঘণ্টা বাকি। মনজুরের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বললেন, ‘‘টিপু সুলতান মসজিদে ইফতার সেরে ফের নিউ মার্কেট আসব।’’ মনজুর পরিবারের মতো অনেকেই ইদের কেনাকাটার জন্য বেছে নিয়েছিলেন রবিবেলাকেই।
ইদের কেনাকাটায় পিছিয়ে নেই জাকারিয়া স্ট্রিটও। রকমারি সেমুই, লাচ্চা থেকে শুরু করে পাঞ্জাবি, টুপি, আতরের পীঠস্থান এই জাকারিয়া স্ট্রিট। টানা একমাস নাখোদা মসজিদের আশপাশে ভিড়ই বলে দেয় যে, ইদ আসছে। ইদের দিনে নমাজ প়ড়ার জন্য বাহারি পাঞ্জাবি, কুর্তা কিনতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমান এই জাকারিয়া স্ট্রিটেই। সেখানেই খুদেদের জন্য ‘অ্যারাবিয়ান কুর্তা’ বিকোচ্ছে দেদার। রাস্তার দু’পাশের দোকান থেকে পাঞ্জাবি কিনতে এ দিনের ভিড় ছিল দেখার মতো। নতুন কুর্তা পরে আয়নার সামনে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ‘পোজ’ দিয়ে বাছাইয়ের পালা চলল দিনভর। ‘ম্যাচিং’ টুপি এবং বাহারি খুশবু আতর কিনতে নাখোদা মসজিদের সামনে ভিড় ছিল নজরকাড়া। সেমুই, লাচ্চা, হালিম, ফালুদা— ইদ-স্পেশ্যাল রকমারি খাবার চেখে দেখার ভিড়ও কিছু কম নয়! জাকারিয়া স্ট্রিটের সেমুই ব্যবসায়ী রমজান আলির কথায়, ‘‘এ বার বেনারসি সেমুইয়ের চাহিদা বেশ ভাল।’’ সেমুই বিকোচ্ছে কিলোগ্রাম প্রতি ৮০-১৫০ টাকা দরে। পিছিয়ে নেই লাচ্চাও।
কেনাকাটা, প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। অপেক্ষা শুধু ইদের চাঁদের।