কেনাকাটা: রাস্তার পাশের ছাউনিতে ভিড় ক্রেতাদের। মঙ্গলবার, দেগঙ্গায়। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়
ঠিক যেন ‘চৈত্র সেল’। মঙ্গলবার তেমনই ভিড়ের ছবি ইদের বাজারে। এত দিন বড়-বড় দোকান ও পোশাক-বিপণিগুলিতে ভিড় করছিলেন ক্রেতারা।
এই প্রথম উত্তর ২৪ পরগনার রাজারহাট ও বারাসত সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে ছোট-বড় ছাউনি করে বসেছে ইদের বস্ত্র হাট। শুধু কলকাতা নয়, জেলা থেকেও এসে সেখানে পোশাক বিক্রি করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তাঁদের থেকে সেগুলি কিনে আবার বিক্রি করছেন এলাকার বেকার যুবক ও তরুণীরা। পছন্দের পোশাক কম দামে কিনতে পারায় ভিড় উপচে পড়ছে সেই হাটে।
বস্তুত, বারাসত ও রাজারহাট সংলগ্ন এলাকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের বহু মানুষের বাস। তাঁরা জানালেন, শরিয়ত মতে ইদের আগের রাতকে বলা হয় ‘চাঁদ রাত’। সেই চাঁদ দেখার পরদিন নতুন পোশাক পরে ইদের নমাজে ভিড় করেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষজন। ইদের কয়েক দিন আগে থেকে বাড়ির সকলের জন্য নতুন পোশাক কেনা শুরু হলেও চাঁদ রাতে দোকানগুলিতে উপচে পড়ে ভিড়।
রাজারহাট, দেগঙ্গা, শাসন, দত্তপুকুর ও আমডাঙা থানা এলাকার বিভিন্ন রাস্তার ধারে এখন চলছে পুরোদস্তুর কেনাকাটা। দেগঙ্গার হাড়োয়া রোড স্টেশনের পাশেই বসেছে দু’টি পাইকারি বস্ত্র হাট। একই চিত্র শাসন থানার বারাসত-টাকি রোড সংলগ্ন কাঁচকল এলাকাতেও। স্থানীয়দের ব্যবস্থাপনায় দু’জায়গায় প্রায় ৭০০টি স্টলে পাইকারি দরে জামাকাপড় বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রমজান সম্পর্কে এ তথ্যগুলি জানতেন?
সেই পাইকারি হাটে পোশাকের সম্ভার নিয়ে বসেছেন শান্তিপুর, কলকাতা, হাওড়া থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বসিরহাট, বাদুড়িয়া, হাবড়া, বনগাঁর স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। ক্রেতাদের একটা বড় অংশ জানালেন, বড় বড় দোকানে যা দাম, তার চেয়ে বেশ খানিকটা কম দামে জামাকাপড় পাওয়া যাচ্ছে এখানে। নাজমা মণ্ডল নামে এক তরুণী বলেন, ‘‘অন্তত ১০০-২০০ টাকা কম দামে এখানে নতুন জামা কিনতে পারছি। তা হলে বড় দোকানে যাব কেন?’’
এ দিকে, পাইকারি হাটে ভিড়ের জন্য তাঁদের ব্যবসা মার খাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বড় দোকানগুলির মালিকেরা। তাঁদের বক্তব্য, জিএসটি-র জন্যই এই অবস্থা। এত কাপড় দোকানে মজুত করার পরেও ক্রেতার দেখা নেই। সবাই পাইকারি বাজারে ভিড় করছেন। বাদুড়িয়া রোড সংলগ্ন একটি দোকানের ম্যানেজার বাগবুল মোল্লার আক্ষেপ, ‘‘গত বছরও ইদের দশ দিন আগে থেকে দোকানে তিলধারণের জায়গা ছিল না। আর চাঁদ রাতে ক্রেতাদের লাইন চলে গিয়েছিল রাস্তা ছাড়িয়ে। অথচ এ বছর দোকান ফাঁকা।’’
এ দিন সপরিবার পাইকারি হাটে নতুন পোশাক কিনছিলেন শাহজাহান আলি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ধর্মে নিজের আত্মীয়দের পোশাক কিনে দেওয়ার পাশাপাশি গরিব মানুষদেরও পোশাক বিলি করতে হয়। তাই অনেক জামাকাপড় কিনতে হয়। পাইকারি হাটে সেই পোশাক কিনতে গিয়ে যদি বেশ কিছু টাকা সাশ্রয় হয়, তা হলে কেন লোকজন বড় দোকানে যাবেন?’’