ফাইল চিত্র।
সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে স্কুলপড়ুয়াদের বাড়িতে থেকেই বেলা ১২টার সময়ে শাঁখ বাজানোর নির্দেশ দিল স্কুলশিক্ষা দফতর। শুক্রবার প্রায় বিকেল নাগাদ স্কুলগুলির কাছে এই নির্দেশ এসে পৌঁছয়। তাতে বলা হয়েছে, আজ শনিবার সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিবস উদ্যাপনে সরকার নিয়ন্ত্রিত স্কুলগুলিতে পড়ুয়ারা যাবে না। করোনা-বিধি মেনে দিনটি শুধু উদ্যাপন করতে যাবেন প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষিকা-সহ শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীরা। তবে সেই হাজিরাও ৫০ শতাংশের বেশি না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অতিমারির এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি এখন বন্ধ। স্বভাবতই প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, স্কুলগুলিতে সুভাষচন্দ্রের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী কী ভাবে পালন করা হবে? শেষ মুহূর্তে স্কুলশিক্ষা কমিশনারের নির্দেশ পেয়ে বিষয়গুলি কী ভাবে বাস্তবায়িত করা হবে, তা নিয়ে চিন্তিত প্রধান শিক্ষকদের অনেকেই। নির্দেশ না পেয়ে অনেক স্কুলই অনলাইনে এই দিনটি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
নির্দেশে বলা হয়েছে, পড়ুয়ারা বাড়িতে বসে বেলা ১২টায় শঙ্খধ্বনি দেবে। বাড়িতে থেকেই তারা নিজেদের মতো পারফর্ম্যান্স করবে। কোন ক্লাসের পড়ুয়ারা কী কী করবে, তা-ও নির্দেশে বলে দেওয়া হয়েছে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়ারা সুভাষচন্দ্রের জীবন নিয়ে ছবি আঁকতে পারে। সুভাষ অথবা দেশাত্মবোধক কবিতা আবৃত্তি করতে পারে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের সুভাষচন্দ্র অথবা দেশাত্মবোধক গান, আবৃত্তি অথবা দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের এই সবের সঙ্গে সুভাষের জীবন নিয়ে বক্তৃতা করতেও বলা হয়েছে।
পড়ুয়াদের পারফর্ম্যান্সের ভিডিয়ো রেকর্ডিং এবং স্কুলের এ দিনের অনুষ্ঠানের ভিডিয়ো স্কুলের ওয়েবসাইটে আপলোড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের অনুষ্ঠান সম্ভব হলে ওয়েবকাস্ট করতেও বলা হয়েছে। রাজ্যের অনেক স্কুলেরই ওয়েবসাইট নেই। বিশেষত প্রাথমিক স্কুলগুলির। সে ক্ষেত্রে অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং স্কুল খোলার পরে পড়ুয়াদের দেখাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরকার নিয়ন্ত্রিত স্কুলগুলি শেষ মুহূর্তে সুভাষচন্দ্রের জন্মদিন পালনের নির্দেশ পেলেও ২৬ জানুয়ারি, প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের নির্দেশ এখনও পায়নি। শ্রীশিক্ষায়তনের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য জানান, দু’টি দিনই তাঁরা অনলাইনে পালন করবেন। তিনি বলেন, “সুভাষচন্দ্রের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর সম্পর্কে একটি ছোট তথ্যচিত্র তৈরি করেছে কয়েক জন ছাত্রী। সেটি শনিবার অনলাইনে দেখানো হবে।” ব্রততীদেবী জানান, ২৬ জানুয়ারি পতাকা উত্তোলন করবেন স্কুলের কয়েক জন শিক্ষিকা। পুরোটাই অনলাইনে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রামমোহন মিশন স্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস জানান, সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনে শিক্ষকদের সঙ্গে কয়েক জন পড়ুয়া সুন্দরবন এলাকার মধুখালি ও বুধোখালি গ্রামে যাবে। সেখানে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে মশারি, স্কুলব্যাগ এবং পোশাক বিতরণ করবে। সুজয়বাবু বলেন, “স্কুলে পতাকা উত্তোলনের সময়ে কয়েক জন শিক্ষকের সঙ্গে জনা পঞ্চাশেক পড়ুয়াও থাকবে। কোভিড-বিধি মেনেই পুরো অনুষ্ঠান হবে। তবে বেশির ভাগ পড়ুয়াই যে হেতু স্কুলে আসছে না, তাই অনলাইনেই পতাকা উত্তোলন ও অন্যান্য অনুষ্ঠান দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণ দামানি জানান, সুভাষচন্দ্রের জন্মদিন এবং প্রজাতন্ত্র দিবস— দু’টিই হবে অনলাইনে। শুধু কয়েক জন
শিক্ষক-শিক্ষিকা স্কুলে গিয়ে পতাকা উত্তোলন করবেন। তবে মূল অনুষ্ঠান হবে অনলাইনে। খুদে পড়ুয়ারা কেউ দেশাত্মবোধক গান গাইবে, কেউ কবিতা আবৃত্তি করবে। বাড়িতে বসে অনেকে পতাকা তৈরি করেছে। সবই অনলাইনে দেখানো হবে।