ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের নেতিবাচক মনোভাব ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে আদালতে। এ বার দত্তাবাদে ৬০টি পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়ার বিষয়ে রাজ্যের একই ধারার ভাবনা প্রকট হয়ে উঠছে।
দত্তাবাদে ৩২৫ মিটার এলাকায় ১০টি স্তম্ভ তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু সেখান থেকে ৬০টি পরিবার না সরা পর্যন্ত হাত দেওয়া যাচ্ছে না এই কাজে। জট কাটাতে ‘কলকাতা মেট্রো রেল নিগম’ (কেএমআরসি) সল্টলেকের ডিএ ব্লকের পাশে নগরোন্নয়ন দফতরের দেওয়া জমিতে ৬০টি অস্থায়ী ঘর তৈরি করেছে এক মাস আগেই। সেখানেই পুনর্বাসন দেওয়ার কথা দত্তাবাদের পরিবারগুলিকে। কিন্তু অভিযোগ, এ বিষয়ে রাজ্য উদ্যোগী না হওয়ায় এখন রীতিমতো বেকায়দায় মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। থমকে গিয়েছে মেট্রোর স্তম্ভ তৈরির কাজ।
কেএমআরসি সূত্রে খবর, দত্তাবাদের জমি সমস্যা সমাধানে রাজ্য সরকার একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তৈরি করেছিল। ওই কমিটিতে রয়েছেন নগরোন্নয়ন দফতরের এক যুগ্ম সচিব-সহ বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু, বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণা চক্রবর্তী এবং ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত। কেএমআরসি-র এক কর্তা জানিয়েছেন, অস্থায়ী বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হওয়ার কথা জানিয়ে পুজোর পরেই নগরোন্নয়ন দফতরকে চিঠি পাঠিয়েছেন তাঁরা। তার পরে এক মাস কেটে গেলেও কমিটির কোনও বৈঠক ডাকা হয়নি। এ দিকে রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের সচিব দেবাশিস সেনের বক্তব্য, এ বিষয়ে কিছু জানেন না তিনি। একই সুর কমিটির সদস্য ও বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসুর কথাতেও। তিনি বলেন, “অস্থায়ী বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হওয়ার কথা মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানাননি। জানতে পারলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতাম।” এ বিষয়ে কিছু জানা নেই বলে দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়েছেন কমিটির আর এক সদস্য সব্যসাচী দত্তও।
তবে জট শুধু দত্তাবাদেই নয়, ই এম বাইপাসের ধারে কাদাপাড়ার কাছেও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা ছিল। সেখানেও ১০০ মিটার এলাকায় চারটি স্তম্ভ তৈরি করতে পারছিলেন না মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় বিধায়ক পরেশ পাল উদ্যোগী হয়ে সেই সমস্যার সমাধান করেছেন। সেখানকার ৬৩টি পরিবারকে সুভাষ সরোবরের কাছে পুনর্বাসন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন পরেশবাবু।
পরেশবাবু যে কাজ সহজে করতে পারলেন, তা কেন করতে পারছেন না সুজিতবাবু বা সব্যসাচীবাবুরা? দত্তাবাদের বাসিন্দারাই জানাচ্ছেন, সেখানে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র বিরোধ রয়েছে। কোন কোন বাড়ি সরাতে হবে, তা ঠিক করা নিয়েই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারি হয়েছে আগে। তার ফলে কোনও কাজই এগোচ্ছে না সেখানে।
এ দিকে মঙ্গলবার হাইকোর্টে ইস্ট-ওয়েস্ট মামলার শুনানির সময়ে হলফনামা দিয়ে রাজ্য সরকার দাবি করেছে, এই প্রকল্পের ২০.৯ শতাংশ এখনও তাদের হাতে। ওই রেল-প্রকল্পের গতিপথের ক্ষেত্রে রাজ্যের দেওয়া নতুন নকশাটি বহাল রাখার ব্যাপারে সকলের সম্মতি আছে বলেও জানিয়েছে রাজ্য। যার ফলে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয় আদালতে। ফের কেএমআরসি ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে হলফনামা চেয়েছে আদালত।
রেল মন্ত্রক অবশ্য মঙ্গলবার আদালতে রাজ্যের ওই বক্তব্যে কিছুটা বিস্মিত। রেল বোর্ডের কর্তাদের বক্তব্য, প্রকল্পের ভাগ হস্তান্তরের জন্য সমস্ত প্রক্রিয়া হয়ে গিয়েছে। শুধু আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর বাকি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের এই প্রতিক্রিয়ার কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছে না রেল মন্ত্রক।
কিন্তু এ ভাবে চললে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের ভবিষ্যৎ যে একেবারেই অন্ধকার, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য, “কেন্দ্রে এখন নতুন সরকার এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিকে ‘স্মার্ট সিটি’ করা হবে। এই প্রকল্প তাই রূপায়িত করা জরুরি।”
নগরোন্নয়ন মন্ত্রক প্রকল্পটি নিজের হাতে নিয়ে অবিলম্বে কাজ শুরু করলে ভাল হয় বলে মনে করেন অধীরবাবু। তা না হলে রেলকে প্রকল্প তৈরির জন্য অতিরিক্ত আর্থিক সাহায্য করা দরকার বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।
এমনিতেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প পিছিয়ে রয়েছে আড়াই বছর। এখন মামলা-মোকদ্দমা, রাজনীতি সব মিলিয়ে প্রকল্প আরও পিছিয়ে পড়বে বলে আশঙ্কায় শহরবাসীও।