Durga Puja 2022

মাসখানেক পার, এখনও রাস্তা আটকে দুর্গাপুজোর মণ্ডপ

এখনও মণ্ডপ রেখে দিয়েছে বেলেঘাটা ৩৩ পল্লি। হেমচন্দ্র নস্কর রোড এবং সিআইটি রোডের সংযোগস্থলে হয় এই পুজো। দেখা গেল, এখনও সেখানে রাস্তা আটকে মণ্ডপ রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২২ ১০:১২
Share:

রুদ্ধ-পথ: এখনও রাস্তা আটকে রয়েছে বেলেঘাটা ৩৩ পল্লির পুজো মণ্ডপ। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

দুর্গাপুজোর শুরুর দিন থেকে ধরলে আজ, রবিবার পর্যন্ত ৩৭ দিন পেরিয়েছে। তবুও খোলা হয়নি রাস্তা আটকে থাকা মণ্ডপ! যেখানে এমন পরিস্থিতি, তার প্রায় উল্টো দিকেই কলকাতা পুলিশের বিভাগীয় ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়। আশপাশে রয়েছে ব্যাঙ্ক, নানা জরুরি অফিস। তবুও মণ্ডপ খোলানোর বিষয়ে পুলিশ তৎপর হয় না কেন?

Advertisement

এমনই কিছু ছবি ধরা পড়েছে এ শহরের কালীপুজোর মণ্ডপ ঘিরেও। পুজোর পরে ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও বহু জায়গায় খোলা হয়নি মণ্ডপ। রাস্তায় পড়ে থাকা বাঁশ, দড়ি, পেরেকের জেরে নাজেহাল অবস্থা পথচারীদের। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফেঁসে যাচ্ছে গাড়ি বা মোটরবাইকের টায়ার। পুজোর নামে যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়ার পরে তা না বোজানোয় বেড়েছে বিপদ। সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অনেকেরই দাবি, ‘‘প্রতিমা বিসর্জন হয়ে গেলে কী হবে, মণ্ডপ রেখে দিয়ে সেখানেই নেশা বা তাস খেলার ‘উৎসব’ চলছে। ফোন করে থানায় অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয় না।’’ বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ‘‘রাস্তা আটকে থাকা দুর্গাপুজোর মণ্ডপ এখনও না-খোলাটা কি নিয়মভঙ্গ নয়?’’

এখনও মণ্ডপ রেখে দিয়েছে বেলেঘাটা ৩৩ পল্লি। হেমচন্দ্র নস্কর রোড এবং সিআইটি রোডের সংযোগস্থলে হয় এই পুজো। দেখা গেল, এখনও সেখানে রাস্তা আটকে মণ্ডপ রয়েছে। সরানো হয়নি থিমের একাধিক ‘ইনস্টলেশন’। রাস্তায় পড়ে বাঁশ, দড়ি প্রভৃতি। ওই মণ্ডপে থিমের অংশ হিসাবে রাখা হয়েছিল একটি আসল রোলার গাড়ি। এখনও মণ্ডপে পড়ে রয়েছে সেটি। স্থানীয় এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘মণ্ডপ খোলানোর ব্যাপারে পুজো কমিটি তেমন জোর দেয়নি। পুরসভার ঠিকাদারও গাড়ি সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন না।’’ ওই পুজোর কর্তা পরিমল দে-র দাবি, ‘‘২৫ টন লোহা দিয়ে মণ্ডপ তৈরি হয়েছিল। দরপত্র ডেকে রেলের লোহার চাদর থেকে শুরু করে নানা যন্ত্রাংশ আনিয়ে কাজ হয়েছিল। এত পরিমাণ জিনিস সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ নয়। কালীপুজো এবং ছটপুজোর জন্য মণ্ডপ খোলার লোক পাওয়া যাচ্ছিল না। তাতেও দেরি হয়েছে।’’ কিন্তু অন্য সব থিমের মণ্ডপ খুললেও, এটির ক্ষেত্রে সমস্যা হল কেন? তাঁর দাবি, ‘‘পাড়ায় প্রবীণদের কথা মাথায় রেখেও কাজ করতে হচ্ছে।’’

Advertisement

বেলেঘাটারই আরও কিছু জায়গায় দেখা গেল, মণ্ডপ খোলার কাজ এখনও শেষ হয়নি। ওই উদ্যোক্তাদেরও একই যুক্তি। কসবা, কালিকাপুর এবং রাসবিহারীর কয়েকটি জায়গাতেও অবস্থা একই রকম বলে অভিযোগ। কালীপুজোর মণ্ডপের জন্য সব চেয়ে খারাপ পরিস্থিতি আমহার্স্ট স্ট্রিটে। সেখানে এখনও খোলা হয়নি সঙ্কীর্ণ সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের নব যুবক সঙ্ঘের পুজোর মণ্ডপ। ফাটাকেষ্টর পুজো নামেই যেটি পরিচিত। যে গলি জুড়ে মণ্ডপ তৈরি হয়, সেখানে এখনও সেটি আছে। মণ্ডপের নীচ দিয়ে পথচারীদের হাঁটার জায়গা থাকলেও সেখানেও ফেলে রাখা হয়েছে অর্ধেক খোলা বাঁশ। গাড়ি চলাচলের কোনও জায়গাই নেই। উদ্যোক্তাদের যুক্তি, ‘‘তেমন তো দেরি হয়নি। খুলে ফেলা হবে। তা ছাড়া ফাটাকেষ্টর পুজো হয়, এমন পাড়ায় থাকতে পারেন ভেবে এলাকার লোকও সহযোগিতায় প্রস্তুত।’’

খোলা হয়নি বৌবাজারের কাছাকাছি আরও একটি কালীপুজোর মণ্ডপ। সেখানে রাস্তার প্রায় অর্ধেক জায়গা নিয়ে তৈরি হওয়া পুজোর বিজ্ঞাপনের গেটও এখনও খোলা হয়নি। গত কয়েক দিনের মতো এখনও সেখান দিয়ে গাড়ি চলেছে ধীর গতিতে। যানজট হলে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ওই পুজোর এক কর্তার দাবি, ‘‘ছটের ছুটিতে গিয়েছিলেন মণ্ডপ খোলার লোক। তাঁরা সবাই না ফিরলে কিছু করার নেই।’’

লালবাজার সদরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা বললেন, ‘‘দ্রুত সব কিছু যাতে খুলে ফেলা হয়, সেই নির্দেশ থানা স্তরে পাঠানো হবে। এর পরেও না হলে কঠোর আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement