সানরাইজ এস্টেটের পুজো। নিজস্ব চিত্র
আবাসনের পুজোয় শ্রীদেবী স্মরণে নাচের অনুষ্ঠানে সবার প্রিয় বৌদি মমতা হাসান। পুজোর নানা অনুষ্ঠানে পুরোভাগে পূর্বা শ্যারন সেন, সিটি জোসেফ, শিরিন জাহাঙ্গির। সোমা সাহা, রিনি সোম, মৌসুমি শর্মাদের থেকে গুরুত্বে কিছু কম যান না তাঁরা।
কলকাতার এমন সব পুজোই যেন পড়শিকে জানার আরশি! ধর্ম ছাপিয়ে উৎসবের সর্বজনীন আনন্দের আলোয় পড়শিকে আবিষ্কার।
ট্যাংরার রাধানাথ চৌধুরী রোডের সানরাইজ এস্টেটে ১০৯ পরিবারের মধ্যে মুসলিম ১৫-১৬টি, কয়েকটি খ্রিস্টান, শিখ পরিবারও আছে। পুজোর পাঁচ দিন চিকেন-মটনের পঙ্ক্তিভোজে শামিল অসীম সোম, সরকারবাবু, দেববাবু, মহম্মদ আনোয়ারেরা। ‘‘পুরনো সেক্রেটারি মহম্মদ জাফরের কথা মনে পড়ছে। উনি এখন নেই। পুজোটা একদা ওঁর উৎসাহেই শুরু হয়েছিল,’’ অষ্টমীর সন্ধ্যায় বললেন পুজো-কর্তা অসীম সোম। আনোয়ার সগর্বে বললেন, ‘‘আমরা ‘মিনি ইন্ডিয়া’ বুঝলেন!’’
আরও পড়ুন: মুছে গেল রাজনীতির ভেদাভেদ, মহানবমীর রাতে ধুনুচি নাচে মাতলেন অধীর ও সুমিত্রা
মহাষ্টমীর সন্ধ্যায় এমন পুজোয় এসে মুগ্ধ সমাজকর্মী দোলন গঙ্গোপাধ্যায়, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহম্মদ রিয়াজ। সম্প্রতি কলকাতার মূল স্রোতের সঙ্গে মুসলিমদের মেলবন্ধনের মঞ্চ ‘নো ইয়োর নেবার’-এর উদ্যোগে মুসলিম মহল্লাগুলির ইতিহাস-সংস্কৃতি মেলে ধরার চেষ্টা শুরু হয়েছে। অষ্টমীতে ঠাকুর দেখতে এসেছিলেন কাশ্মীরি পরিবারের মেয়ে, আড়াই দশক ধরে কলকাতার বাসিন্দা, রবীন্দ্রভারতীর গবেষক নৌশিন বাবা। নৌশিনের চোখে হিজাব-বোরখা আরবি সাজ। আবার রাজাবাজারের আলিসা, আলফিসারা হিজাবে স্বচ্ছন্দ। একসঙ্গে হুটোপাটি, আড্ডায় কেউ কারও থেকে কম গেলেন না। রাজাবাজারের সমাজকর্মী সাহিনা জাভেদ বললেন, ‘‘এই মেলামেশাকে নিছকই সহিষ্ণুতা বলা ঠিক নয়। পরস্পরের প্রতি এই সম্মান, ভালবাসাও তো কলকাতার মজ্জাগত সংস্কৃতি।’’ আনোয়ার, সোমনাথেরাও বললেন, ‘‘ইদ, দিওয়ালি, নানক জয়ন্তীতেও এমন অনুষ্ঠান হয়। সকলে সকলের বাড়িতে দেদার খাওয়াদাওয়া করে।’’ সবার রঙে রং মেশানোর এই মনটুকুই তুলে ধরছে দুর্গাপুজো।