Durga Puja 2022

পুরনো ছন্দে ফিরছে বনেদি বাড়ির পুজো, থাকছে বিধিও

করোনার আতঙ্ক কাটিয়ে দু’বছর পরে বারোয়ারি পুজোর সঙ্গে সঙ্গে ফের চেনা ছন্দে ফিরছে শহরের অধিকাংশ বনেদি বাড়ির পুজোগুলিও। চেনা ব্যস্ততায় বাড়ির ঠাকুরদালানগুলি সেজে উঠছে উৎসবের রঙে।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:০৯
Share:

তবে এ বারেও সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য কিছু বিধিনিষেধ বলবৎ থাকছে। ফাইল ছবি

অতিমারির জেরে গত দু’বছরে বদলে গিয়েছিল বাড়ির পুজোর চেনা ছবিটাও। কোথাও করোনার জেরে ছোট করেই সেরে ফেলা হয়েছিল পুজো। কেউ কেউ আবার বাড়ির দালান ছেড়ে ঘরের মন্দিরেই পুজো করেছিলেন। কোনও কোনও বাড়িতে আবার ঠাকুরদালানেই পুজো হলেও সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণের জন্য বন্ধ হয়েছিল প্রবেশদ্বার। করোনার আতঙ্ক কাটিয়ে দু’বছর পরে বারোয়ারি পুজোর সঙ্গে সঙ্গে ফের চেনা ছন্দে ফিরছে শহরের অধিকাংশ বনেদি বাড়ির পুজোগুলিও। চেনা ব্যস্ততায় বাড়ির ঠাকুরদালানগুলি সেজে উঠছে উৎসবের রঙে।

Advertisement

গত দু’বছরে বাড়ির ঠাকুরদালান ছেড়ে মন্দিরেই পুজোর আয়োজন করেছিল দক্ষিণ কলকাতার নাকতলার মজুমদার বাড়ি। সেই বাড়ির ছেলে শুভাদিত্য মজুমদার বলেন, ‘‘স্বাধীনতার কয়েক বছর আগে ও-পার বাংলার পাবনার গোপালনগর থেকে এ-পার বাংলায় চলে আসার সময়েও এই রকম পরিস্থিতি হয়নি। সংক্রমণের কারণে ভিড় কমাতে কার্যত বাধ্য হয়েছিলাম।’’ তবে এ বছর তাঁদের পুজো ফিরছে পুরনো স্বাভাবিক ছন্দে। শুভাদিত্য জানাচ্ছেন, ২১৭ বছরের পুরনো এই পুজোর সূচনা হয় রথের দিন কাঠামো পুজোর মাধ্যমে। এর পরে মাটি দিয়ে আসা হয় পালেদের বাড়িতে। সেখানেই তৈরি হয় প্রতিমা। আগে ঠাকুরদালানেই প্রতিমা তৈরির রেওয়াজ থাকলেও এখনও আর তা হয় না। তবে ভোগ, খাওয়াদাওয়া, নতুন বেনারসি পরিয়ে দেবীবরণ থেকে শুরু করে বাকি সব প্রথাই এখনও নিষ্ঠা সহকারে পালন করা হয়। এ বছর তাই সকলকে নিয়েই ফের পুজোর আনন্দে শামিল হতে চান তাঁরা। শুভাদিত্যের কথায়, ‘‘আসলে উৎসবের আনন্দ তো সবাইকে নিয়েই। গত দু’বছর তো সেখানেই নানা বিধিনিষেধ ছিল।’’

তবে এ বারেও সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য কিছু বিধিনিষেধ বলবৎ থাকছে ২৬৬ বছরের পুরনো, উত্তরের শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজোয়। রাজবাড়ির প্রবেশদ্বার দিয়ে দর্শনার্থীরা ভিতরে ঢুকতে পারলেও ঠাকুরদালান পর্যন্ত পৌঁছবেন শুধুমাত্র বাড়ির সদস্যেরাই। রাজবাড়ির সদস্য দেবরাজ মিত্র বলেন, ‘‘প্রথা অনুযায়ী নিয়মনিষ্ঠা মেনে পুজোই আমাদের ঐতিহ্য। গত দু’বছর সাধারণের জন্য বিধিনিষেধ থাকলেও পুজোর নিয়ম-নিষ্ঠায় কোনও ভাটা পড়েনি। এ বছরেও প্রথা মেনেই পুজো হবে। তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবেই সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য কিছু বিধিনিষেধ থাকছে।’’

Advertisement

করোনা-আবহে গত দু’বছর জোড়াসাঁকোর নরসিংহ দাঁ বাড়ির প্রতিমা দর্শন করতে পারেননি সাধারণ দর্শনার্থীরা। ১৬০ বছরেরও বেশি পুরনো এই পুজোর প্রবেশদ্বার বন্ধ রাখা হয়েছিল। এমনকি, কাটছাঁট হয়েছিল কিছু নিয়মেও। তবে এ বারে অবশ্য কোনও বাধা নেই। প্রথা মেনে পঞ্চমীতে বাড়িতে ভিয়েন বসানো থেকে শুরু করে অন্যান্য আচার— সবই হবে পুরনো নিয়মেই। রীতি মেনে বাড়ির বৌদের নামে পুজোর সঙ্কল্প দাঁ বাড়ির প্রাচীন প্রথা। এই বাড়ির সদস্যা সুলগ্না দাঁ বলেন, ‘‘নরসিংহ দাঁর আমল থেকে এই পুজো চলে আসছে। রথের দিন কাঠামো পুজোর মাধ্যমে পুজোর সূচনা হয়। তার পর থেকেই একটু একটু করে সেজে উঠতে থাকে আমাদের ঠাকুরদালান। পাড়া, প্রতিবেশী থেকে শুরু করে ভিন্‌ রাজ্য থেকে আসা আত্মীয়স্বজন— সকলকে নিয়েই হইহই করে কেটে যায় পুজোর ক’টা দিন।’’

তবে গত দু’বছরের মতো এ বারেও ছোট করে বাড়ির পিতলের প্রতিমাতেই পুজো করবেন উত্তর কলকাতার গৌরীবেড়িয়ার নিয়োগী বাড়ির সদস্যেরা। ৮০ বছরের পুরনো এই পুজোয় সাতটি নদীর জল দিয়ে প্রতিমাকে স্নান করানোটাই রীতি। বাড়ির সদস্য মৃন্ময় নিয়োগী বলেন, ‘‘করোনা তো সব উল্টোপাল্টা করে দিল। একটা প্রস্তুতিরও তো দরকার হয়। সামনের বছর থেকে আবার ধুমধাম করে, পুরনো নিয়মেই সব পালন করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement