ছবি সংগৃহীত।
করোনার সংক্রমণ রুখতে এ বছরও মণ্ডপ দর্শকশূন্য রাখার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। আদালতের সেই নির্দেশ যাতে শহরের সর্বত্র পালিত হয়, তার জন্য এ বার বড় ও মাঝারি পুজোর পাশাপাশি ছোট পুজোগুলির উপরেও কড়া নজর থাকবে কলকাতা পুলিশের।
লালবাজার সূত্রের খবর, এত দিন শুধুমাত্র বড় ও মাঝারি পুজো মণ্ডপগুলির বাইরেই পুলিশি পাহারা থাকত। এ বছর শহরের ছোট পুজো মণ্ডপগুলির বাইরেও মোতায়েন থাকবে পুলিশ। প্রতিটি ছোট মণ্ডপের বাইরে দুই থেকে তিন জন পুলিশকর্মীকে মোতায়েন করা হবে। প্রয়োজনে সেই সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে। আগামী কাল, চতুর্থী থেকেই ওই বাহিনী মণ্ডপের সামনে ভিড় নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করবে। হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, দর্শকেরা যাতে মণ্ডপের ভিতরে না ঢোকেন, তা নিশ্চিত করাটাই হবে ওই পুলিশকর্মীদের কাজ।
পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, এ শহরে মোট ২৭০১টি পুজো হয়। লালবাজার জানিয়েছে, এ বছরও চতুর্থীর দিন থেকে রাস্তায় নামছে পুলিশ। মোট তিনটি শিফটে পুজোর শহরে ভিড় ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব সামলাবে তারা। হাই কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক ছোট পুজোর পাঁচ মিটার এবং বড় পুজোর দশ মিটার চৌহদ্দির মধ্যে দর্শকেরা ঢুকতে পারবেন না। সেখানে থাকবে ‘নো এন্ট্রি’ লেখা বোর্ড। ওই চৌহদ্দির বাইরেও যদি বেশি ভিড় হয়, তা হলে দর্শনার্থীদের আরও দূরে আটকে দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পুজোর পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে বাহিনীর আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র। সেখানে তিনি বাহিনীকে হাই কোর্ট এবং সরকারি নির্দেশ মেনে চলতে বলেছেন। বৈঠক শেষে বাইরে বেরিয়ে সৌমেনবাবু বলেন, ‘‘হাই কোর্টের নির্দেশ এবং সরকারি গাইডলাইন খুব পরিষ্কার। সেগুলি আমরা মেনে চলব। পুজো কমিটির কর্তারাও সমস্ত বিধিনিষেধ মেনেই পুজোর আয়োজন করছেন।’’
থিকথিকে: পুজোর মুখে কেনাকাটার ভিড়ে হারিয়েছে কোভিড-বিধি। অনেকের মুখেই মাস্ক নেই, কারও মাস্ক নেমেছে থুতনিতে। বৃহস্পতিবার, নিউ মার্কেট চত্বরে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সমস্ত থানা এলাকায় বড় পুজো রয়েছে, এমন ৪৪টি থানাকে বেছে নিয়ে সেখানকার মণ্ডপগুলির দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে এক জন করে ডেপুটি কমিশনারের হাতে। তাঁদের সঙ্গে থাকছেন এক জন করে এসি। অন্যান্য বছর বড় বড় পুজো মণ্ডপকে নিয়ে তৈরি করা হত একাধিক কমপ্লেক্স। যেগুলির দায়িত্বে থাকতেন ডিসি-রা। এ বার সেই ব্যবস্থায় বদল ঘটিয়েছে লালবাজার। এর পাশাপাশি সুরুচি সঙ্ঘ, কলেজ স্কোয়ার বা সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের মতো যে সমস্ত বড় পুজোয় মাত্রাছাড়া ভিড় হয়, সেখানে চার জন করে এসি-কে রাখা হচ্ছে।
পুজো উপলক্ষে এই বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থাকে সচল রাখতে লালবাজারের মূল কন্ট্রোল রুমের সঙ্গেই থাকছে অতিরিক্ত একটি কন্ট্রোল রুম। সেখানে দায়িত্বে থাকবেন কলকাতা পুলিশের সিনিয়র অফিসারেরা। আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কলকাতা পুলিশের ন’টি ডিভিশনে এক জন করে ইনস্পেক্টরের নেতৃত্বে ২৬ জন সদস্যের এক-একটি দল থাকছে। লালবাজার, পিটিএস এবং মহম্মদ আলি পার্কে থাকছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ভিড়ের উপরে নজর রাখতে ৪৭টি নজর-মিনার বসানো হয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। এর পাশাপাশি বসানো হচ্ছে অতিরিক্ত ৭৫টি সিসিটিভি। শহরের ১৫টি প্রবেশপথে চালানো হবে নাকা-তল্লাশি।
পুলিশ সূত্রের খবর, পুজোর ক’দিন অতিরিক্ত মেট্রো চলবে। ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য ২৬টি মেট্রো স্টেশনের বাইরেও থাকছে পুলিশি পাহারা।