হাতিবাগানে সর্বজনীননের পুজো উদ্বোধনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সঙ্গে অতীন ঘোষ ( বাঁ দিকে)। চালতাবাগান লোহাপট্টির প্রতিমা (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
দেবীপক্ষের আগেই উৎসবের সূচনা হয়ে গেল শহরে। আর শুরুতেই রাজ্যের দমকল মন্ত্রীকে গোল দিয়ে দিলেন কলকাতার ডেপুটি মেয়র। এ বার আর শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে নয়, হাতিবাগান সর্বজনীনের মণ্ডপ থেকে উৎসবের সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে দেবীপক্ষ যে হেতু শুরু হয়নি, সে হেতু প্রদীপ জ্বালালেন না তিনি।
গত বছরও মহালয়ার আগেই পুজো উদ্বোধন শুরু করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রদীপ জ্বালিয়েছিলেন, মন্ত্রোচ্চারণ করেছিলেন। কিন্তু তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। মহালয়া পর্যন্ত পিতৃপক্ষ, তার পরে দেবীপক্ষের শুরু। দেবীপক্ষ আসার আগেই কী ভাবে পুজো উদ্বোধন করছেন মুখ্যমন্ত্রী? এই প্রশ্ন তুলে দেন অনেকে। রাজনৈতিক শিবিরের একটি অংশ সেই সুযোগ ধরে নেয় এবং মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে শাস্ত্রীয় বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে।
তার পর থেকে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে গঙ্গা দিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির রংটাই বদলে গিয়েছে অনেকখানি। লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ধাক্কা খেয়েছে আর এ রাজ্যে অভূতপূর্ব উত্থান ঘটেছে বিজেপির। সে সব কথা মাথায় রেখেই হোক বা অন্য কোনও কারণে, মুখ্যমন্ত্রী এ বার অনেক বেশি সতর্ক। মহালয়ার আগের দিন থেকে উদ্বোধন শুরু করলেন ঠিকই। কিন্তু মাইক হাতে নিয়ে জানিয়ে দিলেন যে, পিতৃপক্ষ চলছে বলে প্রদীপ জ্বালাচ্ছেন না, প্রদীপের উপরে ফুল দিয়ে প্রতিমা দর্শন করছেন শুধুমাত্র। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমি সব ধর্মই মানি এবং যখন রীতিনীতি মানি, সবটাই মানি।’’
চালতাবাগানে মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: এ বছর প্রতিমার সাজে পুরনো ঘরানা ফিরিয়ে আনছে শোভাবাজার রাজবাড়ি
এ দিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪টি মণ্ডপের উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমেই উত্তর কলকাতার হাতিবাগান সর্বজনীন। কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের পুজো হিসেবেই খ্যাত হাতিবাগান। সেই মণ্ডপ থেকে এ বার মুখ্যমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক ভাবে উৎসবের উদ্বোধন করায় তৃণমূলের অন্দরেই জল্পনা বেড়েছে অতীনকে নিয়ে। দলনেত্রীর নজরে কলকাতার ডেপুটি মেয়রের নম্বর বাড়ার ইঙ্গিত দেখছেন উত্তর কলকাতার এক বরো চেয়ারম্যান বা আর এক বিধায়ক।
গতবার ঠিক এই রকম জল্পনাই তৈরি হয়েছিল সুজিত বসুকে ঘিরে। রাজ্যের দমকল মন্ত্রী তথা দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুজিত বসুর পুজো হিসেবেই খ্যাত পূর্ব কলকাতার শ্রীভূমি স্পোর্টিং। মুখ্যমন্ত্রী গতবার সর্বাগ্রে শ্রীভূমির পুজোর ফিতে কেটেছিলেন। ফলে উৎসবের সূচনাতেই সবাইকে টেক্কা দিয়ে দিয়েছিলেন সুজিত। এ বার কিন্তু দমকল মন্ত্রী বেশ পিছিয়ে পড়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে সবার আগে নিজেদের মণ্ডপে হাজির করতে পারার দৌড়ে অন্য সকলকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ।
ডেপুটি মেয়র নিজে অবশ্য ‘গোল দেওয়া’ তত্ত্ব নস্যাৎ করছেন সহাস্যে। তিনি বলছেন, ‘‘কোথায় আগে যাবেন, কোথায় পরে, সেটা মুখ্যমন্ত্রীর নিজেরই সিদ্ধান্ত। আমাদের মণ্ডপে আগে এসেছেন, আমরা গোটা এলাকাবাসী তার জন্য কৃতজ্ঞ। তবে এতে কাউকে গোল দেওয়ার ব্যাপার নেই।’’ অতীন আরও বলেন, ‘‘দিদিকে তো অনেক পুজোর উদ্বোধন করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর ব্যস্ততা সামলেই সে সব করতে হবে। তাই একটু তাড়াতাড়িই কাজটা শুরু হল।’’
আরও পড়ুন: হারিয়ে যাওয়া পরিদের দিয়ে সাজছে তরুণ দলের মণ্ডপ
অতীনের পুজো উদ্বোধন করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, সবার যখন ছুটি থাকে, তখন তৃণমূল ছুটি নিতে পারে না। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো আমার দলের কাউকে পুজোয় বাইরে যেতে দিই না। সবাই যখন রাস্তায় থাকেন, তখন আমরা ছুটি নিতে পারি না।’’ উৎসবে যখন গোটা শহর মেতে থাকে, তখন নিরন্তর খোঁজখবর নেওয়া জরুরি, যে কোনও রকম প্রয়োজন পড়লেই ছুটে যেতে পারা জরুরি— বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
এ দিন হাতিবাগান সর্বজনীনের উদ্বোধন সেরে চালতাবাগান লোহাপট্টির পুজো উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে যান হিন্দুস্তান ক্লাবে। আগামী কাল অর্থাৎ মহালয়ার বিকেলেও বেশ কয়েকটি বড় পুজোর উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রী করবেন। তার মধ্যে রয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ, ফিরহাদ হাকিমের চেতলা অগ্রণী। রয়েছে বাবুবাগান, যোধপুর পার্ক, ৯৫ পল্লীও।