বিশ্রাম: রোদে টহল দিয়ে ক্লান্ত হয়ে গাছের ছায়ায় আশ্রয় ঘোড়সওয়ার পুলিশ ও তাঁদের ঘোড়াদের। রবিবার, ময়দানে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
একে গত কয়েক দিন ধরে চলা প্রবল দহন। সঙ্গে শহরে পর পর আইপিএলের ম্যাচ ঘিরে ময়দানে নজরদারির চাপ। এই দুইয়ের দাপটে নাজেহাল অবস্থা কলকাতা পুলিশের ঘোড়সওয়ার বাহিনীর ঘোড়াদের। গরমের ধকল সামলে তাদের সুস্থ রাখতে তাই টানা ডিউটি করানোর বদলে পর্যায়ক্রমে কাজে লাগানো হচ্ছে তাদের। এ ছাড়া, গরম থেকে বাঁচতে দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে রোজকার খাদ্যতালিকা — সবেতেই বদল আনা হয়েছে।
মাঝ এপ্রিলেই শহর ছুঁয়ে ফেলেছে ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা। শহরে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। অস্বস্তিকর এই দহন থেকে মুক্তি কবে, সেই আশার কথা এখনও শোনাতে পারেনি তারা। ফলে প্রখর রোদে হাঁসফাঁস অবস্থা সকলের। এর সঙ্গে এ বছর ইডেনে চলছে আইপিএল ম্যাচ। ফলেম্যাচে দর্শকদের ভিড় থেকে শুরু করে টিকিট বিক্রির চাপ সামলাতেনিয়মিত মাঠে নামতে হচ্ছে ঘোড়সওয়ার পুলিশবাহিনীকে। প্রবল গরমে তাই ডিউটির চাপ সামলে ঘোড়াদের সুস্থ রাখাই এখন কলকাতা পুলিশের কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, আপাতত বাহিনীতে মোট ঘোড়ার সংখ্যা ৭২টি। তাদের মধ্যেকয়েকটিকে আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে রাখা হলেও বেশির ভাগেরই ঠিকানা এস এন ব্যানার্জি রোডের আস্তাবল। আপাতত সেখানে ৪১টি ঘোড়া রয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটির বয়স আবার ১৫বছরেরও বেশি। এই অত্যধিক গরমে নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় ঘোড়াদের। অল্পতেই হাঁপিয়েযাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হয় পেটের সমস্যাও। ফলে এমন পরিস্থিতিতে ওদের সুস্থ রাখাটাই রীতিমতো চ্যালেঞ্জ। তাই বাহিনীর ঘোড়াগুলিকে নিয়মিত স্যালাইন দেওয়ার পাশাপাশি, চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে তাদের খাবারেও বিশেষ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রোটিন জাতীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়েপ্রতিদিন কার্বোহাইডেট জাতীয় খাবার দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রতিদিনের মেনুতে থাকছে সবুজ ঘাস। এ ছাড়া, প্রতিদিন স্নান করানো তো আছেই। মাউন্টেড পুলিশের পশু চিকিৎসক সুরজিৎ বসু বললেন, ‘‘গরমে প্রতিটি পশুর মতো ঘোড়াদেরও বিশেষযত্নে রাখতে হয়। তবে এদের যেহেতু বাইরে বেরিয়ে নিয়মিত কাজ করতে হয়, সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন। এ বার যেহেতু টানা গরমের সঙ্গে কলকাতায় আইপিএলম্যাচ চলছে, ফলে ঘোড়াদের ডিউটির চাপও থাকছে। তাই ওদের সুস্থ রাখতে খাবার থেকে শুরু করে জল, অনুশীলন, সব কিছুতেই আলাদা আলাদা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘোড়াদের চাঙ্গা রাখতে জলের সঙ্গে গ্লুকোজ় মেশানো হচ্ছে। যে সমস্ত ঘোড়ার বয়স বেশি, তাদের এই সময়ে বাইরে বার করতেও নিষেধকরা হয়েছে।’’
তবে শুধু বয়স্কদেরই নয়। এই গরমে বাহিনীর কোনও ঘোড়াকেই বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বেলা ১১টা থেকে ৩টে পর্যন্ত বাইরে বার করা হচ্ছে না বলে জানা গিয়েছে। ঘোড়াদের অনুশীলন পর্বও সকাল সকাল সেরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি বিশেষ কোনও কারণে দুপুরের দিকে কোনও ঘোড়াকে বাইরে ডিউটি করতে পাঠাতে হয়, সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় অন্তর তার শরীর জল দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া এবং তাকে পর্যাপ্ত জল খাওয়ানোর ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি, চিকিৎসকদের পরামর্শে ডিউটি থেকে ফিরে আসার পরেও সেই ঘোড়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। প্রবল গরমে সুস্থ রাখতে ঘোড়াদের টানা ডিউটিও আপাতত বন্ধ রয়েছে। ঘোড়সওয়ার পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অন্য সময়ে আইপিএল ম্যাচের দিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত টানা ঘোড়াগুলি ডিউটি করত। কিন্তু এখন ঘণ্টা দুই ডিউটির পরে ধাপে ধাপে ঘোড়াগুলিকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তাদের জায়গায় নতুন ঘোড়া পাঠানো হচ্ছে।’’ তবে এ ভাবে আপাতত সামলানো গেলেও এই প্রবল গরম লাগাতার চলতে থাকলে কী হবে, সেই চিন্তা যাচ্ছে না আধিকারিকদের।