শহরের সর্বোচ্চ দূষিত এলাকার মধ্যে অন্যতম ভিক্টোরিয়ার আশপাশ। এখানে পিএম ২.৫-এর গড় ৩১২! ফাইল চিত্র।
জানুয়ারির শেষে কলকাতায় শীতের পরশ আছে, কিন্তু কনকনে ঠান্ডা উধাও। বেলা বাড়ার সঙ্গে গায়ে গরম জামা চাপিয়ে রাখা দায়। ভিড় বাস বা মেট্রোয় তো জানুয়ারিতেও ঘামছেন মানুষ। বিকেল গড়ালে আবার খানিক ঠান্ডার মেজাজ। শীতের এই খেয়ালিপনায় জাঁকিয়ে বসেছে অসুখ-বিসুখ। হাঁচি-কাশি, জ্বর-জ্বর ভাব, গা-হাত ম্যাজম্যাজ— এমন উপসর্গ এখন কলকাতার ঘরে ঘরে। চিকিৎসক এবং পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর নেপথ্যে রয়েছে দূষণ। শীতের শুষ্কতা আর দূষণ— এই দুইয়ের ফলায় ভুগছেন কলকাতাবাসী। তাপমাত্রা বাড়লে এ রকম অসুখ-বিসুখ খানিক কমবে।
বর্তমানে দেশের অন্যতম দূষিত শহরগুলির তালিকায় আছে তিলোত্তমা কলকাতা। বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে পরিবেশ মন্ত্রকের। তার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হল বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা। কেন্দ্রের লক্ষ্য, ২০২৪ সালের মধ্যে প্রাথমিক ভাবে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ (পিএম ২.৫) জাতীয় স্তরে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো। কিন্তু কলকাতা-সহ একাধিক শহরে বায়ুসূচকের স্বাভাবিক মাত্রা লঙ্ঘিত হচ্ছে বছরের পর বছর। যেমন মঙ্গলবারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিধাননগরে বাতাসে ধূলিকণার গড় ২৭৬। পিএম ১০-এর গড় মাত্রা ১৭০। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামের কাছে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার গড় পরিমাণ থাকছে ১৪৫-এর আশপাশে। রবীন্দ্র সরোবরে ১৩৫। অর্থাৎ, শহরের সর্বোচ্চ দূষিত এলাকার মধ্যে অন্যতম ভিক্টোরিয়ার আশপাশ। এখানে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার গড় পরিমাণ (পিএম ২.৫) ৩১২!
উল্লেখ্য, পিএম ২.৫ এবং পিএম ১০-এর অর্থ হল ২.৫ মাইক্রন ঘনত্বের সূক্ষ্ম ধূলিকণা থেকে ১০ মাইক্রন ঘনত্বের ধূলিকণা। শীতে এই দু’ধরনের ধূলিকণায় কলকাতার বাতাস ভরে গিয়েছে। তার প্রভাবে অসুখ-বিসুখ বাড়ছে। মূলত, হাঁপানি, শ্বাসকষ্টের মতো ফুসফুসঘটিত অসুখে যাঁরা ভুগছেন, এই মরসুমে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী তাঁরাই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পরিবেশ বিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘এই সময়ে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বাড়তে থাকে। কার্বন কণা, পিএম ২.৫ ইত্যাদি বাড়তে থাকে। এর ফলে অসুখ-বিসুখ হচ্ছে। তা ছাড়া রয়েছে যানবাহনের দূষণ। গাড়ি, মোটরবাইক থেকে নির্গত ধোঁয়ায় সমস্যা বাড়ছে। দিল্লিতে যেমন নাড়া পোড়ার মতো বিষয় দূষণের অন্যতম কারণ, কলকাতার ক্ষেত্রে দূষণের আসল উৎস এই যান চলাচল। বিশেষত, ভিন্ রাজ্য থেকে যাতায়াত করা পণ্যবাহী গাড়ি।’’
তা হলে উপায় কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তার জন্য দরকার যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ, কলকারখানা এবং তার পার্শ্বস্থ এলাকা যথাসম্ভব পরিষ্কার রাখা এবং ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের উপর জোর দেওয়া। কিন্তু এ তো গেল সরকারি এবং প্রশাসনিক উদ্যোগ বা ঔচিত্যের প্রসঙ্গ। নিজেদের সুস্থ রাখতে হলে দরকার পরিচ্ছন্ন থাকা। প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার চালিয়ে যাওয়া। এবং আর কিছু দিন অপেক্ষারও। কারণ, তাপমাত্রা বাড়লে এই দূষণমাত্রাও কমবে। পরিবেশ যত শুষ্ক থাকবে ততই এই দূষণজনিত অসুস্থতা বাড়বে। সমস্যাও মিটবে।
রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন এবং পরিবেশ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও একই কথা বলছেন। চিকিৎসক-মন্ত্রীর কথায়, ‘‘ঘন কুয়াশা হলে পরিস্থিতি একটু কষ্টকর হয়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে সেই সমস্যা থাকে না। পরিবেশ দফতরের তরফে চেষ্টা জারি রয়েছে। এ বার ১২৬টি মিউনিসিপ্যাল শহরে দূষণের রেখচিত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। দিল্লি আইআইটি গবেষকদের সাহায্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। তা ছাড়া ঝাড়গ্রাম থেকে বীরভূম, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গাছ লাগানোর কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।’’