মেট্রোর কাজের জন্য এমনই বেহাল অবস্থা হলদিরাম সংলগ্ন ভিআইপি রোডের সার্ভিস রোডের। শনিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
মেট্রোর কাজের জেরে রাস্তা হয়ে গিয়েছে সঙ্কীর্ণ। সেই রাস্তাতেই চলছে বাসের রেষারেষি। সব মিলিয়ে হলদিরাম সংলগ্ন বিমানবন্দরমুখী ভিআইপি রোডের সার্ভিস রোড এখন পথচারীদের কাছে মৃত্যু-ফাঁদ। সম্প্রতি একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া অঙ্গীকার দাশগুপ্ত হলদিরাম বাসস্টপে বাস থেকে নামতে গিয়ে পড়ে মারা যায়। বাসটি খুব জোরে ব্রেক কষায় পাদানিতে দাঁড়ানো অঙ্গীকার ছিটকে রাস্তায় পড়ে। চালক নিয়ন্ত্রণ হারানোতেই ওই ঘটনা ঘটে।
তেঘরিয়ার কিছু পরে ওই সার্ভিস রোডই এখন কার্যত মূল ভিআইপি রোড হয়ে গিয়েছে। বেশির ভাগ বাস, গাড়ি সার্ভিস রোড ধরেই চলাচল করে। হলদিরামের কাছেই বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তৈরি হচ্ছে মেট্রো স্টেশন। সার্ভিস রোডের অনেকটা অংশ জুড়ে চলছে স্টেশনের স্তম্ভ তৈরির কাজ। এর জন্য সার্ভিস রোডের একাংশ ঘিরে দেওয়া হয়েছে। ফলে, সেই রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। দ্বিমুখী সেই সরু রাস্তা দিয়েই বিপজ্জনক ভাবে চলছে গাড়ি। সার্ভিস রোডে একাধিক আবাসন, দোকানপাট ও দু’টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। এমনই একটি স্কুলের এক খুদে পড়ুয়ার মা চন্দনা রায় বললেন, ‘‘গত কাল মেয়েকে নিয়ে স্কুল থেকে টোটোয় সার্ভিস রোড ধরে বাড়ি যাচ্ছিলাম। উল্টো দিক থেকে দুটো বাস রেষারেষি করতে করতে আসছিল। এক দিকে সরু রাস্তা। তার মধ্যে বর্ষায় রাস্তা জুড়ে বড় বড় গর্ত। গর্তে পড়ে গাড়ি হেলে যাচ্ছে। প্রাণ হাতে নিয়ে টোটোয় বসে ছিলাম। প্রবল বেগে টোটোর ধার ঘেঁষে দুটো বাস বেরিয়ে গেল।’’
মেট্রোর কাজের জন্য ফুটপাত ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেট্রো প্রকল্পের জায়গা দিয়ে বিপজ্জনক ভাবে হাঁটতে হচ্ছে পথচারীদের। সেখানে মেট্রোর স্টেশন তৈরির বড় বড় সরঞ্জাম পড়ে থাকে। পথচারীরা যে কোনও সময়ে হোঁচট খেতে পারেন। স্থানীয় বাসিন্দা শান্তনু দত্তগুপ্ত বললেন, ‘‘গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দুর্ভোগ চলছে। উন্নয়নের জন্য দুর্ভোগ মানতে রাজি আছি। কিন্তু সেটা কত দিন? মেট্রো সাফ জানাক।’’ অঙ্গীকারের দুর্ঘটনা যেখানে ঘটে, সেই হলদিরাম বাসস্টপে মানুষকে বিপজ্জনক ভাবে রাস্তা পেরোতে হয় বলে অভিযোগ। ভিআইপি রোডে পুলিশ থাকলেও সার্ভিস রোডে সব সময়ে থাকে না।
শনিবার দেখা গেল, দুর্ঘটনাস্থলে স্পিড ব্রেকার তৈরি হচ্ছে। যদিও স্থানীয়দের মতে, এতেই সমস্যা মিটবে না। প্রয়োজন মেট্রোর কাজ দ্রুত শেষ করা, সার্ভিস রোডের সম্প্রসারণ এবং সেখানে যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ দেওয়া। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (ট্র্যাফিক) নিমা ভুটিয়া জানান, মেট্রোর স্তম্ভ বসানোর কাজ চলছে। তাঁরা জানতে চেয়েছেন, কত দিনে কাজ শেষ হবে? যত দিন কাজ চলবে, তত দিন রাস্তা এবং সংলগ্ন জায়গা ঠিকঠাক করে রাখতে বলা হয়েছে। নিমা জানান, বাসের রেষারেষির বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন। মেট্রোর আধিকারিকেরা জানান, এ বিষয়ে কর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হবে।
আরভিএনএল কর্তৃপক্ষ জানান, রাস্তা পেতে দেরি হওয়ায় কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থলে সার্ভিস রোডের অবস্থা খারাপ। নিকাশির সমস্যা মিটিয়ে ওই রাস্তা ঠিক করার চেষ্টা চলছে। মেট্রোর স্তম্ভ তৈরি হয়ে গেলেই রাস্তা খুলে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।