—প্রতীকী চিত্র।
রাস্তা পারাপার করাটাও যেন বড়সড় একটা ঝুঁকির কাজ! না ছিল বেপরোয়া গাড়ির উপরে নিয়ন্ত্রণ, না ছিল নজরদারি চালানোর মতো পুলিশ! কলকাতা পুলিশের একটি বড় অংশ ভোটের কাজে বিভিন্ন জেলায় চলে যাওয়ায় গত চার দিন ধরে কার্যত এমনই অবস্থা হয়েছিল শহরের। রাস্তায় পুলিশ না থাকায় একের পর এক দুর্ঘটনায় লোকজন আহত যেমন হয়েছেন, তেমনই মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। সেই সঙ্গেই চলেছে ইচ্ছে মতো পথের বিধি ভাঙা।
‘পুলিশশূন্য’ এই পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে। কলকাতা পুলিশের একটি বড় অংশ পর্যায়ক্রমে ভোটের কাজে চলে যাওয়ায় গত শুক্র, শনি ও রবিবার আরও ভয়ঙ্কর হয় পরিস্থিতি। লালবাজারের তথ্যবলছে, কমিশনের নির্দেশে ১২ হাজারেরও বেশি পুলিশকর্মী জেলায় গিয়েছিলেন। যা বাহিনীর মোট পুলিশকর্মীর অর্ধেকেরও বেশি। ফলে, গত চার দিনে শহরের রাস্তায় পুলিশকে কার্যত দেখা যায়নি বলেই অভিযোগ। আর তাতেই একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
লালবাজার সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, বৃহস্পতি থেকে রবিবার, এই চার দিনে শহরে নথিভুক্তদুর্ঘটনার সংখ্যা ১৩। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন কমবেশি ২০ জন। উল্টোডাঙা থানা এলাকায় গাড়ির ধাক্কায় এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে বলেও লালবাজার সূত্রের খবর। ক্যানাল ওয়েস্ট রোডে বেপরোয়া একটি লরি এক পথচারীকে পিষে দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নিমাই সাহা নামে ওই ব্যক্তির। গত চার দিনে দুর্ঘটনার পাশাপাশি পুলিশের অনুপস্থিতির সুযোগে শহরের রাস্তায় বিধি ভাঙারপ্রচুর দৃশ্যও নজরে পড়েছে। রাতের দিকে ফাঁকা ই এম বাইপাসে ‘জয়রাইড’-এর নামে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর একাধিক অভিযোগ উঠেছে। আবার মোটরবাইকেবিনা হেলমেটে একাধিক জনকে বসিয়ে গতির ঝড় তুলতেও দেখা গিয়েছে বহু চালককে। শুধু তা-ই নয়, দিনেদুপুরে মা উড়ালপুলে বাস উঠে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সিগন্যাল ভেঙে দেদার গাড়ি ছোটানোরবেশ কিছু ঘটনা। কর্মী কম থাকায় শহরের বহু রাস্তায় কার্যত বাধ্য হয়েই ‘অটো সিগন্যাল’ চালু করে কোনও মতে যান নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। যে গুটিকয়েক পুলিশকর্মী রাস্তায় নজরদারির দায়িত্বে ছিলেন, বিধি ভাঙার বহর দেখে তিতিবিরক্ত হয়ে তাঁরা কার্যত হাল ছেড়ে দেন। উল্টোডাঙা মোড়ে কর্মরতএক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘চার দিক থেকে গাড়ি আসছে। যেখানে চার জন পুলিশকর্মী দাঁড়িয়ে থেকেও সামলাতে পারেন না, সেখানে আমি একা কী করব? গাড়ি ধরে কেস দেওয়া তো দূর, আইন ভাঙার ঘটনা দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কার্যত কিছু করার ছিল না।’’
ভোটের কাজে যাওয়া পুলিশকর্মীদের বড় অংশ রবিবারই ফিরে এসেছেন। তাঁদের অধিকাংশই সোমবার সকালে কাজে যোগ দিয়েছেন। আজ, মঙ্গলবার ভোট গণনা। তার জন্য ফের কলকাতা পুলিশ থেকে বাহিনী যাবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। গত চার দিনের মধ্যে দু’দিন শনি ও রবিবার পড়ায় পরিস্থিতি কিছুটা হলেও সামলানো গিয়েছিল। কিন্তু, আজ ফের বাহিনী চলে গেলে কী হবে, তা নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে। গল্ফ গ্রিনের এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘পুলিশ না থাকলে কী হতে পারে, তা তো দেখা গেল এই ক’দিনে। এর পরেও যদি পুলিশ শহরছাড়া হয়, তা হলে আর রাস্তায় বেরোনো যাবে না!’’
যদিও লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, গণনার জন্য বাহিনী চেয়ে এখনও কোনও নির্দেশ আসেনি। এক কর্তা বললেন, ‘‘বাহিনী ফিরে এসেছে। গণনায় বাহিনী পাঠানোর কোনও নির্দেশ আপাতত নেই। আগের মতোই শহরে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।’’ তবে, গত চার দিনে শহরে ট্র্যাফিক-বিধি ভঙ্গের একাধিক ঘটনা নিয়ে ওই পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘যতটা সম্ভব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই ছিল। প্রযুক্তির মাধ্যমেও নজরদারি চলেছে। নিরাপত্তায় বড়সড় ফাঁক ছিল না।’’