Coroanvirus Lockdown

লকডাউনেও সক্রিয় মাদক কুরিয়র, চিন্তায় গোয়েন্দারা

কুরিয়র সংস্থাগুলির উপরে নজরদারি চালিয়েও সে ভাবে মাদক লেনদেন আটকানো যাচ্ছে না।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২০ ০৩:৩১
Share:

প্রতীকী ছবি।

টানা লকডাউনও দাঁড়ি টানতে পারেনি ব্যবসায়। অভিযোগ, মোটরবাইকে বা গাড়িতে জরুরি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার সরকারি ছাড়পত্র আসতেই শুরু হয়ে যায় বাড়ি বাড়ি মাদকের কুরিয়র সার্ভিস! পুলিশ সূত্রের খবর, কখনও ওষুধ, কখনও মুদিখানার জিনিস, কখনও আবার করোনা মোকাবিলার জন্য অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর সঙ্গে গত চার মাসে কুরিয়রে প্রায় ১২ কোটি টাকার মাদক লেনদেন হয়েছে শহরে!

Advertisement

শুক্রবার আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবসে লালবাজারের নার্কোটিক্স সেল বা ‘দ্য নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরো অব ইন্ডিয়া’র (এনসিবি) কলকাতা শাখার আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, জরুরি পরিষেবার আড়ালে এ ভাবে মাদক লেনদেনের ব্যবসা চিন্তা বাড়িয়েছে তাঁদের। কুরিয়র সংস্থাগুলির উপরে নজরদারি চালিয়েও সে ভাবে মাদক লেনদেন আটকানো যাচ্ছে না। কারণ, গোটা ব্যবসাটাই চলছে ‘ডার্ক ওয়েব’-এ। এই ধরনের ওয়েব ব্যবস্থায় ক্রেতা বা বিক্রেতা, কারও ওয়েব সার্ভারের ‘হিস্ট্রি’ সংরক্ষিত থাকে না। ফলে স্রেফ সন্দেহের কারণে কোনও কুরিয়র সংস্থার প্যাকেট খুলে দেখা যায় না।

বছর দুয়েক আগে কলকাতার দুই কলেজপড়ুয়াকে গ্রেফতার করেছিল এনসিবি। ধৃতদের একজনের ল্যাপটপে ‘ডার্ক ওয়েব’ ব্যবহারের প্রমাণ মেলে। তদন্তকারীরা মনে করেন, কলকাতার কোনও মামলায় সরাসরি ‘ডার্ক ওয়েব’-এর যোগ সেই প্রথম। সাইবার বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, গুগল বা অন্য সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ অনলাইনের একটি অংশ ব্যবহার করে থাকেন। এর বাইরে অনলাইনের আরও একটি অংশ রয়েছে, সাধারণ সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে যেখানে প্রবেশ করা যায় না। ওই অংশের নাম ‘ডিপ ওয়েব’। এরই একটি অংশ হল ‘ডার্ক ওয়েব’, যেখানে শুধুমাত্র ‘টর’ নামে একটি প্রক্সি সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমেই ঢোকা যায়। শিশু পর্নোগ্রাফি থেকে শুরু করে মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র, ব্যাঙ্ক বা সোশ্যাল মিডিয়ার হ্যাক হওয়া অ্যাকাউন্টের তথ্য— সবই বিক্রি হয় সেখানে।

Advertisement

সাধারণ অনলাইন সাইটে যেখানে নগদে বা ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডে টাকা মেটাতে হয়, সেখানে ‘ডার্ক ওয়েব’ থেকে কেনাকাটা করতে প্রয়োজন হয় বিট কয়েনের (এক ধরনের ক্রিপ্ট কারেন্সি)। সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, “পরিচয় গোপন রেখে কোনও সামগ্রীর ডেলিভারি পেতেই এই বিট কয়েনের ব্যবহার। যিনি মাদক কিনছেন, তিনি এতে সহজেই পুলিশকে ফাঁকি দিতে পারেন। নানা কুরিয়র সংস্থার মাধ্যমে ওই অর্ডার চলে যায় গ্রাহকের হাতে।” লালবাজারের নার্কোটিক্স সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক বলছেন, “এই কুরিয়র ধরাই বেশ শক্ত কাজ। এমনিতে বেশ কিছু কুরিয়র সংস্থা এক দেশ থেকে আর এক দেশে অর্ডার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সেগুলি বন্ধ থাকলেও সক্রিয় হয়েছে দেশের মধ্যেই কাজ করা কুরিয়র সংস্থাগুলি। অর্ডার পাওয়ার পরে যে দেশ থেকে অর্ডার এসেছে, সেখানকার স্থানীয় ‘সোর্স’দের সঙ্গে যোগাযোগ করছে ডার্ক ওয়েবের সাইটগুলি। সেই সোর্সই স্থানীয় কুরিয়র সংস্থাকে দিয়ে মাদক ডেলিভারি করাচ্ছে।” ওই আধিকারিকের দাবি, মার্চের শেষে লকডাউনে রাস্তায় নাকা তল্লাশির কড়াকড়ি শুরু হওয়ায় মাদক ব্যবসা কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল। কিন্তু গত এপ্রিলের শুরুতে জরুরি পরিষেবা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার সরকারি ছাড়পত্র আসতেই

রাতারাতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে কুরিয়রের মাধ্যমে মাদক কারবার। এনসিবি-র জোনাল অধিকর্তা সুধাংশুকুমার সিংহ বলছেন, “তবে কুরিয়রে যা-ই সরবরাহ করা হচ্ছে, সবই অন্তর্দেশীয় বিমান বা জাহাজ পরিষেবা বন্ধ হওয়ার আগে মজুত করা মাদক।

এ রকম চলতে থাকলে জমানো ভাণ্ডারে টান পড়তে বাধ্য।” কিন্তু বিমান বা জাহাজ পরিবহণ ফের শুরু হলে তখন কী হবে? তদন্তকারীদের কাছে এর স্পষ্ট উত্তর নেই।

‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর প্রধান সন্দীপ সেনগুপ্ত বললেন, “ডার্ক ওয়েবে লাগাম পরানো না গেলে কুরিয়র ধরে কাজ হবে না। সিল্ক রুট নামে একটি ডার্ক ওয়েবসাইট মার্কিন গোয়েন্দারা বন্ধ করতে পারলেও প্রতিদিনই এমন হাজারটা ওয়েবসাইট খুলে যাচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement