পিষ্ট হয়ে মৃত্যু লরির চালক এবং খালাসির

পুলিশ জানায়, সোমবার রাতে ওই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে প্রগতি ময়দান থানা এলাকার বাসন্তী হাইওয়েতে বানতলা সেতুর কাছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:১২
Share:

দুর্ঘটনায় সোমবার রাতে মৃত্যু হয় এই লরির চালক ও খালাসির। বাসন্তী হাইওয়েতে। ছবি: শিবাজী দে সরকার

ছোট লরিটির সামনের ডান দিকের চাকায় সমস্যা হচ্ছিল। কেবিনের দরজা খুলে লরি থেকে নেমে তা দেখতে চেয়েছিলেন চালক। কিন্তু কেবিনের দরজা খুলে শরীর সামান্য বার করতেই হুড়মুড়িয়ে পিছন থেকে একটি দশ চাকার লরি ওই ছোট লরিটির গায়ের কাছে চলে আসে। ছোট লরিটির চালকের মুখ আটকে যায় বড় লরিটির একটি অংশে। ওই অবস্থায় বড় লরিটি হিঁচড়ে নিয়ে যেতে শুরু করে ছোট লরিটির চালককে। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়েন লরির খালাসি। বড় লরির চাকায় তিনিও পিষ্ট হন।

Advertisement

পুলিশ জানায়, সোমবার রাতে ওই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে প্রগতি ময়দান থানা এলাকার বাসন্তী হাইওয়েতে বানতলা সেতুর কাছে। ওই পণ্যবাহী লরির ধাক্কায় মারা যান খারাপ হয়ে যাওয়া ছোট লরির চালক সঞ্জীব রাম (২২) এবং খালাসি সমীর সরকার (১৮)। তাঁরা দু’জনেই বিহারের বৈশালী জেলার বাসিন্দা। কাজের সূত্রে কলকাতায় ভাড়া থাকতেন। রাতেই প্রগতি ময়দান থানা এবং তিলজলা ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পরে তদন্তভার তুলে দেওয়া হয় লালবাজারের ট্র্যাফিক বিভাগের ফেটাল স্কোয়াডকে। পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে মৃতদের পরিবারের সদস্যেরা থানায় যান। বিকেলে দুই পরিবারের বাকি সদস্যেরা বিহার থেকে কলকাতায় আসেন মৃতদেহ নিতে। তবে রাত পর্যন্ত ওই দশ চাকার লরিটির কোনও খোঁজ পায়নি পুলিশ।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাত ১০টা ৫৫ মিনিট নাগাদ বানতলার দিক থেকে চৌবাগার দিকে চামড়ার সার আনতে যাচ্ছিল ওই ছোট লরিটি। গাড়ি চালাচ্ছিলেন সঞ্জীব। খালাসি সমীর তাঁর পাশে বসেছিলেন। আচমকা ছোট লরিটির সামনের ডান
দিকের চাকা ভেঙে যায়। কী হয়েছে দেখতে রাস্তার মাঝেই ডানদিকের দরজা খুলে গাড়ি থেকে নামতে যান সঞ্জীব। ঠিক তখনই পাশ
দিয়ে বেপরোয়া গতিতে যাচ্ছিল
একটি দশ চাকার লরি। সেটির গায়ে লেগে থাকা লোহার হুকের সঙ্গে আটকে যায় সঞ্জীবের মুখের একটি অংশ। যাতে লরির কেবিন থেকে বাইরে বেরিয়ে যান সঞ্জীব। পুলিশ জানায়, সঞ্জীবের মুখের একটি দিক সম্পূর্ণ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। চালককে লরি টেনে নিচ্ছে দেখে তাঁর পা ধরে আটকাতে গিয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়েন সমীর। ওই দশ চাকার লরির পিছনের চাকা সমীরের কোমরের উপর দিয়ে চলে যায়।

Advertisement

এ দিন দুপুরে থানার বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন মৃতদের আত্মীয়েরা। বাসুদেব রাম নামে সঞ্জীবের এক আত্মীয় বলেন, ‘‘বিহারের বাড়িতে ছ’মাসের কন্যা সন্তান ছাড়া স্ত্রী এবং বাবা-মা রয়েছে সঞ্জীবের। কয়েক বছর ধরে এখানে ট্রাক চালাচ্ছেন সঞ্জীব।’’ অন্য দিকে সমীরের মামাতো ভাই প্রগতি ময়দান থানার সামনে দাঁড়িয়ে জানান, কোথা থেকে কী হল কিছুই তাঁরা বুঝতে পারছেন না। বাড়িতে যোগাযোগ করা হয়েছে।

লালবাজার জানিয়েছে, বাসন্তী হাইওয়েতে এর আগেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনা কমাতে একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও মৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে না বলে পুলিশের একাংশের দাবি। এক পুলিশকর্তা জানান, সোমবার রাতে যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানকার সিসিটিভি খতিয়ে দশ চাকার লরিটির সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা চলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement